মা বলে মেনেছিলেন লতাকে, নিয়ম মেনে পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করলেন এই ব্যক্তি

কয়েক বছর আগেই তার মাতৃবিয়োগ হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পর সেই অভাব পূরণ করার জন্য সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরকেই (Lata Mangeshkar) মায়ের আসনে বসিয়েছিলেন হাওড়ার জগতবল্লভপুরের মাজু গ্রামের বাসিন্দা অমর বিলুই। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি তার দ্বিতীয় মায়েরও মৃত্যু হল। তাই জন্মদাত্রী মায়ের মৃত্যুর পর যেমন করে হিন্দুশাস্ত্র মেনে সকল আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছিলেন, লতার মৃত্যুর পরও ঠিক একইভাবে পারলৌকিক ক্রিয়া (Funeral) সম্পন্ন করলেন এই ব্যক্তি।

জগতবল্লভপুরের মাজু গ্রামে একটি ছোট দর্জির দোকান চালান ৫৫ বছর বয়সী অমর বিলুই। ছোটবেলা থেকেই তিনি লতা মঙ্গেশকরের গানের ভক্ত ছিলেন। কয়েক বছর আগে তার নিজের মায়ের মৃত্যু হয়। তারপর থেকে তিনি ভক্তি এবং শ্রদ্ধাভাব থেকে লতা মঙ্গেশকরকেই ‘মানস মা’ বানিয়ে ফেলেন। সেই মায়ের মৃত্যুতে তার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করতেও কোনওরকম ত্রুটি রাখলেন না অমরবাবু।

নিয়ম মেনে তিনি সাতদিনের অশৌচ পালন করেছেন। বৃহস্পতিবার ঘাটের কাজ করে শুক্রবার লতা মঙ্গেশকরের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন রেখেছেন। তারপরের দিন হবে নিয়মভঙ্গের অনুষ্ঠান। হিন্দুশাস্ত্র রীতিনীতিতে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান যেভাবে পালন করা হয়, প্রত্যেক নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন তিনি। জন্মদাত্রী মায়ের বেলাতেও হবিষ্যান্ন ভোজন করেছিলেন। ‘মানস মা’য়ের বেলাতেও হবিষ্যান্ন খেয়েই অশৌচ কাটিয়েছেন।

একদিন সকাল থেকেই তার বাড়িতে মাইকে বাজছে লতা মঙ্গেশকরের কালজয়ী সব গান। মাজু গ্রামের অপর আরেক বাসিন্দা অশোক সিংহ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘অমর বাবু দোকানে যেখানে বসে কাজ করতেন সেখানেই নিজের মাথার ওপরে লাগিয়েছিলেন লতার একটি ছবি। ছোটবেলা থেকেই দোকানে লতা-র গান শুনতেন। কয়েক বছর আগে মাতৃবিয়োগ হয় অমর বাবুর। ভক্তিতে শ্রদ্ধায় লতা-কেই মায়ের সমান আসনে বসান তিনি।’’

শুধু অমর বিলুই একা নন, দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লতা মঙ্গেশকরের কোটি কোটি ভক্ত। বিদেশেও তার ফ্যানবেস রয়েছে। লতা মঙ্গেশকরের অসুস্থতার খবর পাওয়াতে মুম্বাইয়ের একজন সামান্য অটোচালকও নিজের সমস্ত উপার্জন সুর সম্রাজ্ঞীর সুস্থতা কামনা করে দান করেছিলেন! বাস্তব জীবনে লতা মঙ্গেশকর অবিবাহিত। তার নিজের সন্তান নেই। তবে দেশে তার কোটি কোটি ভক্ত তাকে মাতৃজ্ঞানেই সম্মান করেন। অমর বিলুই তাদেরই একজন।