পুজোর আগে মহালয়া (Mahalaya) বাঙালির কাছে এক বড় নস্ট্যালজিয়া। প্রতিবারের মত এবছরও কোটি কোটি বাঙালি মহালয়ার ভোরে রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী (Mahishasurmardini) শুনে দেবী পক্ষকে স্বাগত জানাবেন। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রজন্মের জন্য ভোর থেকেই বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটবে। জি বাংলা, কালার্স বাংলা, স্টার জলসার ভিড়ে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন ভেবে পান না দর্শকরা।
অথচ আজ থেকে ২ দশক আগে রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শুনেই দূরদর্শনে সম্প্রচারিত মহালয়ার অনুষ্ঠান দেখে দিনের সূচনা করতেন বাঙালিরা। নিত্য নতুন চ্যানেলের আধুনিক মহালয়ার ভিড়ে কোথাও যেন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দূরদর্শনের মহিষাসুরমর্দিনী। ততোধিক কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দূরদর্শনের প্রথম মহালয়ার শিল্পীরাও। তাদেরই একজন হলেন অমল চৌধুরী (Amal Chowdhury)।
অমল চৌধুরী যখন একমাথা ঝাঁকড়া চুল, ইয়া বড় বড় রক্তচক্ষু, ততোধিক মোটা ভ্রু ও গোঁফ, যুদ্ধের পোশাক পরিহিত লুকে পর্দার সামনে এসে দাঁড়াতেন তখন বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই তাকে দেখলে শিউরে উঠতেন। এমনকি এখনও তার সেই মহিষাসুরের লুকে একই থ্রিল অনুভব করেন দর্শকরা। সেই মানুষটা আজ কেমন আছেন? তাঁর খোঁজ রেখেছেন কি কেউ?
দূরদর্শনের প্রথম দেবী দুর্গা সংযুক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে বধ হতে হয়েছিল মহিষাসুর অমল চৌধুরীকে। যেমন শারীরিক গঠন, তেমনই দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে তিনি ৮ থেকে ৮০ সকলের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মহিষাসুর। তার লুক থেকে অভিনয় ছিল এতটাই প্রাণবন্ত যে বাস্তবেও তাকে ‘অমল অসুর’ নামেই সম্বোধন করতো ইন্ডাস্ট্রি।
দিন পেরিয়েছে, কেটে গিয়েছে বছর। এক যুগ পেরিয়ে অমল অসুরকে আর তেমন মনে রাখেননি কেউই। একসময় অসুর থেকে যমরাজ চরিত্রে চুটিয়ে একটা সময়ের পর তিনি হারিয়েই গেলেন ইন্ডাস্ট্রি থেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়সের ছাপ পড়েছে চেহারায়। চেহারা কিছুটা ভেঙেছে, তবে এখনও সেই বড় বড় চোখের চাহনি আর মোটা গোঁফ কিন্তু আগের মতই আছে।
আজ বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন অসুরদের অভাব নেই। তাই তার কাজ ফুরিয়েছে। কোনও সরকারি সাহায্যও তিনি পান না। কাজের অভাবে, সাহায্যের অভাবে নিতান্তই অর্থকষ্টে কাটছে তার দিন। ইন্ডাস্ট্রি থেকে শুরু করে দর্শকরা ভুলতেই বসেছেন তাকে, তবে আজও মহালয়ার সকালে শত শত অসুরদের মুখের ভিড়ে পুরনো সেই চেনা মুখটাই খুঁজে ফেরে বাঙালি।