বাবা এবং মা যে কোনও সন্তানের কাছেই বটবৃক্ষের ছায়ার মত। সেই ছায়া সরে গেলে জীবনের অর্থই যেন পাল্টে যায়। অনেকে মনে মনে শোক চেপে রেখে জীবনের পথে এগিয়ে চলেন। অনেকে শোক সামলাতে পারেন না, তারা জীবনের মূল স্রোত থেকে হারিয়ে যান। বলিউডের কিং শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan) পরিবারকেও এই দুর্বিসহ সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। খুব কম বয়সেই বাবাকে আচমকা হারিয়ে ফেলে শাহরুখ এবং তার বোন লালারুখের (Shehnaz Lalarukh Khan) জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার।
শাহরুখ খানের পরিবার সম্পর্কে জানলেও অনেকেই তার বোনের সম্পর্কে জানেন না। শাহরুখ খানের সেই অখ্যাত বোনকে নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। নাম শেহনাজ লালারুখ খান। মুম্বাইতে শাহরুখ এবং তার পরিবারের সঙ্গেই থাকেন তিনি। তবে ভাই সুপারস্টার হলেও তাকে খুব বেশি ক্যামেরার সামনে আসতে দেখা যায় না। শাহরুখের ছোট ছেলে আব্রাম খানের ৬ তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানেই প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দেখা গিয়েছিল খান পরিবারের এই সদস্যকে। তারপর থেকেই তার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন বলিউডপ্রেমীরা।
লালারুখ খান মানসিক স্থিতাবস্থা হারিয়েছেন। খুব ছোট বয়সে বাবার মৃত্যু চোখের সামনে দেখে তিনি বাস্তবটা মেনে নিতে পারেননি। ১৯৮১ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শাহরুখ এবং লালারুখের বাবার মৃত্যু হয়। বাবার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেননি লালারুখ। তিনি এতটাই মানসিক আঘাত পেয়েছিলেন যে ২ বছর কারও সঙ্গেই কথা বলেননি। এমনকি তিনি কাঁদতেও পারতেন না। আঘাতটা মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল তার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে একসময় চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার আশাটাও ছেড়েই দিয়েছিলেন।
শাহরুখকে তার বোন সম্পর্কে বলতে শোনা যায়, “সে শুধু তাকিয়ে থাকতো। সে কাঁদত না, কোনও কথা বলত না। পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিল। তারপরের ২ বছর সে কাঁদেনি, কথা বলেনি, শুধু আকাশের দিকে চেয়ে রইতো। যেন তার পুরো পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছে।” কষ্টটাকে মনের ভেতর লুকিয়ে রেখে মানুষের কাছে আনন্দ পৌঁছে দেওয়ার এই শিক্ষা শাহরুখ তার বোনের কাছ থেকেই পেয়েছেন বলে দাবি করেন ভিডিওতে।
বোনকে সুস্থ করতে তিনি চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে চিকিৎসকরা তাকে বলেই দিয়েছিলেন এমন হতাশা নিয়ে খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারবেন না লালারুখ। সেই সময় ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’র শুটিং চলছিল সুইজারল্যান্ডে। বোনকে উন্নত চিকিৎসা দিতে শাহরুখ তাকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। শাহরুখ যখন ‘তুঝে দেখা তো ইয়ে জানা সানাম’ গানের শুটিং করছিলেন, তার বোন তখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন।
শাহরুখ বলেন, বাবার আচমকা মৃত্যুর ধাক্কাটা লালারুখ এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেননি। ১০ বছর পর যখন তাদের মায়ের মৃত্যু হয় তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। শাহরুখের কথায়, “সে (লালারুখ) যে আমাদের জীবনের একটা অংশ এতে আমি খুব খুশি। কিন্তু এত সহজে আঘাত পাওয়া এবং ভেঙে পড়ার সাহস আমার নেই। তাই আমি ২৪ ঘন্টা কাজ করেছি, আমার সম্পর্কে যা বলা হয়েছে বা যেভাবে মজা করা হয়েছে শুনেও খুশি থেকেছি, কারণ যদি আমি খুশি না থাকতাম তাহলে আমিও পটাশিয়ামের ঘাটতি এবং ডিপ্রেশনে ভুগতাম। তাই ডিপ্রেশন এড়াতে আমি অভিনয় করেছি।”
শাহরুখ আজ পুরোপুরি মুম্বাইয়ের বাসিন্দা হলেও দিল্লির সঙ্গে তার রয়েছে নাড়ির টান। এখানেই তার বাবা এবং মায়ের কবর রয়েছে। বাবা-মায়ের টানে শাহরুখ সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন দিল্লিতে। তিনি তার প্রয়াত বাবা-মায়ের অস্তিত্ব অনুভব করেন দিল্লিতে। এখানেই কেটেছিল তার ছোটবেলা। দিল্লির সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক গভীর। দিল্লিতে এলেই বাবা-মায়ের কবরের কাছে কিছুক্ষণ সময় না কাটিয়ে যান না কিং খান।
View this post on Instagram