পথের পাঁচালির শ্যুটিং টাকার অভাবে আটকে যাওয়ার পর গায়ের গয়না খুলে দেওয়াই হোক, আর কিশোর কুমারকে রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড করে পাঠানোই হোক বা অপুর সংসারের জন্য শর্মিলা ঠাকুরকে স্বামীর মনের মতো অপর্ণায় পরিণত করাই হোক। সারাটা জীবন ধরে স্বামীর প্রতিটি তালে-বোলে-ঠুমরিতে যথাযথ সঙ্গত করে যিনি মহান ওই মানুষটির জ্যোতি আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিজয়া রায়।
দীর্ঘ ৮ বছর প্রেমের পর চুপিসারে বিবাহ করেছিলেন সত্যজিৎ রায় এবং বিজয়া রায় (Bijoya Ray)। তারপরে বাড়ির লোকে সম্মতি জোগাড় করেছিলেন এই দম্পতি। সেই সময় প্রেম বিবাহ বিষয়টি এতটা স্বাভাবিক ছিলনা। কৈশোর বয়স থেকে শুরু হওয়া প্রেমকে বিবাহ পর্যন্ত নিয়ে যেতে দুই পরিবারের তরফ থেকেই নানা রকম সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছিল তাদের।
নিজের থেকে বয়সে ছোট পিসতুতো ভাই’কে ভালবেসে বিয়ে করতেও পিছপা হননি বিজয়া রায়। পঞ্চাশের দশকে দাঁড়িয়ে এমন কাজ করতে কিন্তু বুকের পাটা লাগে। মুম্বাই আদালতে সম্পর্ককে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তারা। গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন বিজয়ার বোনের বাড়িতে ১৯৪৯ সালের ২০ শে অক্টোবর।
খুব ছোট করে সেই অনুষ্ঠান হয় যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা এবং তাদের নিকট বন্ধু পৃথ্বীরাজ কাপুর। ১৯৪৯-এর ৩ মার্চ ফের কলকাতায় ব্রাহ্ম মতে বিয়ে হয়।
সামাজিক প্রয়োজনেই রেজিস্ট্রি বিয়ের কথা গোপন করে রেখেছিলেন তাঁরা। বিজয়া রায় এ-প্রসঙ্গে তাঁর আত্মজীবনীতে পরিহাস করে লিখেছিলেন, ‘যেখানে একবার বিয়ে হওয়ারই কোনও সম্ভাবনা ছিল না, সেখানে দু’বার হল।’
বিজয়া পরবর্তীকালে নিজেদের বৈবাহিক জীবনের বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন খোলাখুলি। লুকিয়ে বিয়ের কারণে লোক সমাজে আলাদা থাকার কষ্টটা ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি।
তবে জানা যায় ‘অপু ট্রিলজি’ (Apu Trilogy) খ্যাতি অর্জন করার পর তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের কথা বন্ধু বান্ধব এবং পরিবারের কাছে স্বীকার করেছিলেন মানিক। সেই সময় তিনি পাশে পেয়েছিলেন পারিবারিক বন্ধু নশো বাবুকে।অবশেষে পরিবার-পরিজনকে মানিয়ে ১৯৪৯-এর ৩রা মার্চ আবারো বাঙালি হিন্দুদের সকল আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের।
সত্যজিতের ঘনিষ্ঠদের থেকে জানা যায় পথের পাঁচালীর সময় থেকেই ছায়ার মতো সত্যজিৎ রায় কে সঙ্গ দিয়েছেন বিজয়া। মৃত্যুর আগে বিজয়া জানান তার পরামর্শ ৯০% নিজের লেখাতে প্রয়োগ করছেন সত্যজিৎ রায়।