উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন, টলিউড ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সুপারহিট জুটি তারা। মহানায়ক এবং মহানায়িকা আজও ভক্তদের মনে বেঁচে রয়েছেন। অকালেই প্রয়াত হন উত্তম কুমার। উত্তম কুমারের মৃত্যু আঘাত হেনেছিল সুচিত্রার বুকে। এর ঠিক কয়েক বছরের মধ্যেই সুচিত্রাও নিজেকে গুটিয়ে নেন। তিনিও টলিউড ছেড়েছিলেন অকালে। সুচিত্রা সেন কেন অসময়ে অভিনয় ছেড়েছিলেন সেই প্রশ্ন আজও ভাবায় ভক্তদের।
উত্তম কুমারের মৃত্যুর ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই সুচিত্রা সেনের অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার খবরে মুষড়ে পড়েছিলেন বাঙালি দর্শকরা। ৭০ -এর দশকে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নেন সুচিত্রা। টলিউড থেকে বলিউড, সব জায়গা থেকেই তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। অনেকে মনে করেন উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করতে না পারার আক্ষেপ থেকেই নাকি সুচিত্রা অভিনয় ছেড়েছেন। সত্যিই কি তাই?
উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন, দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। একে অপরের খুব ভালো বন্ধু ছিলেন তারা। যদিও টলিউডে গুঞ্জন, তাদের মধ্যে নাকি গোপন সম্পর্ক ছিল। আর ভক্তরাও চাইতেন উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেন বাস্তব জীবনেও এক হয়ে যান। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না। কারণ তারা দুজনেই বিবাহিত ছিলেন। যদিও উত্তম কুমার সুচিত্রাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সুচিত্রা সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
একদিন কথায় কথায় উত্তম কুমার সুচিত্রাকে বলেছিলেন, “রমা তোমার সঙ্গে যদি আমার বিয়ে হত।” উত্তরে সুচিত্রা বলেন, “তাহলে খুবই খারাপ হত। একদিনও সেই বিয়ে টিকত না। তোমার আর আমার ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত স্বতন্ত্র। সেখানে সংঘাত হতই। তার উপর তুমি চাইবে তোমার সাফল্য, আমি চাইব আমার। এরকম দুজন বিয়ে করলে সে বিয়ে খুব বাজেভাবে ভেঙ্গে যেত”।
সুচিত্রা কেন অভিনয় ছেড়েছিলেন সেই প্রসঙ্গে তার কন্যার মুনমুন সেন বলেন ১৯৭০ এর দশকে ধীরে ধীরে বাংলা সিনেমার চিত্রনাট্য বদলাতে থাকে। ছবির গল্পের সঙ্গে সুচিত্রা নিজেকে মানাতে পারছিলেন না। আর তাছাড়া সুচিত্রা যে সকল পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন তারাও ততদিনে প্রয়াত হয়েছেন। সুচিত্রার মনে এও প্রশ্ন উঠতে থাকে তিনি কার সঙ্গেই বা অভিনয় করবেন? তাই অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ানোর কঠিন সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আরও পড়ুন : প্রেমে পড়লেও কেন বিয়ে করেননি উত্তম-সুচিত্রা? এতদিনে ফাঁস হল আসল কারণ
আরও পড়ুন : বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়েও নোংরামি! সুপ্রিয়ার মেয়েকে স্বীকৃতি দেননি উত্তম কুমার
অবশ্য সুচিত্রার অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বেলুড় মঠের ভারত মহারাজেরও গুরুত্ব ছিল। সুচিত্রা সেন বরাবরই আধ্যাত্মিক। মানসিক শান্তির খোঁজে তিনি বেলুড় মঠে যাতায়াত করতেন। বেলুড় মঠের ভারত মহারাজ সুচিত্রাকে বলেন, “মা অর্থলিপ্সু, লোভী হয়ো না।” তার কথা সুচিত্রার মনে প্রভাব ফেলে। তিনি আর নাম-যশ-খ্যাতির পেছনে ছোটার প্রয়োজন অনুভব করতেন না। সাংসারিক জীবনে নিজেকে বন্দী করে ফেলেন সুচিত্রা। তখন মেয়ে এবং নাতনিরাই তার অবলম্বন হয়ে ওঠে।