হিন্দু ধর্মে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী পুণ্যাত্মারা শরীরের মৃত্যুর পর দেবতাদের সঙ্গে স্বর্গে (Heaven) যাওয়ার সুযোগ পায়। পাপীদের জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে নরক (Hell)। সেখানে যমদূতরা অষ্টপ্রহর পাপী আত্মাদের তাদের কর্মফলের শাস্তি দেয়। ঋকবেদে নরককে অশুভ, অন্তহীন গহ্বর হিসেবে, অথর্ববেদে ‘অন্ধকারের দেশ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পাপীদের পাপকর্মের বিচার করে প্রত্যেকের জন্য আলাদা শাস্তির বিধান দেওয়া হয় সেখানে। কোন নরকে কোন পাপের জন্য কী শাস্তি দেওয়া হয়? চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
তমিস্রা : যারা অন্যের সম্পত্তি, স্ত্রী এবং সন্তান অপহরণ করেন তাদের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে তমিস্রা নরকে। এখানে পাপীদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। অন্নজল কিছুই দেওয়া হয় না। উপরন্তু যমদূতরা অবিরাম প্রহার করতে থাকেন পাপীদের।
অন্ধ তমিস্রা : ঠগ এবং প্রবঞ্চকদের এই নরকে পাঠানো হয়ে থাকে। তমিস্রার মত এই নরকেও পাপীদের অনেক প্রহার করা হয়। তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। এমনকি নির্যাতন করে তাদের অন্ধ করে ফেলা হয়।
রৌরব : যারা স্বার্থপর, ঈর্ষাতুর এবং মিথ্যাভাষী তাদের ঠাঁই হয় এই নরকে। এখানে রুরু নামের এক প্রকারের সর্পজাতীয় দানবদের অস্তিত্ব রয়েছে। যারা পাপীদের উপর নির্যাতন চালায়। এছাড়াও ‘মহারৌরব’ নামের আরও একটি নরকের সন্ধান মেলে হিন্দু শাস্ত্রে। সেখানে রুরুরা নাকি পাপীদের মাংস খুবলে খায়।
কুম্ভীপাক : যারা পশু-পাখিদের উপর অন্যায় অত্যাচার করেন তাদের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে এখানে। সেই পাপীদের এখানে এনে বিশাল আকার কুম্ভে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ফোটানো হয়। দেবতা-বিরোধী যারা তাদেরও এখানে শাস্তির দেওয়া হয়।
কালসূত্র : ব্রহ্মহত্যা করলে সেই পাপীদের এই নরকে আনা হয়। উত্তপ্ত তামার টাটে পাপীদের ফেলে রেখে নির্যাতন করা হয়।
অসিপত্রকানন : যারা বেদের অপমান করেন তাদের এখানে শাস্তি দেওয়া হয়। এখানকার গাছের পাতাগুলি তরবারি মত ধারালো। পাপীদের উপরে সেগুলি ছুঁড়ে মারা হয়।
শুকরমুখ : রাজ কর্মচারীরা যদি নির্দোষ ব্যক্তিদের শাস্তি দিয়ে থাকেন বা কোনও ব্রাহ্মণকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে থাকেন তাহলে যমদূতরা তাদের এই নরকে নিয়ে এসে আখমাড়াই কলে পিষে শাস্তি দেয়।
অন্ধকূপ : এটি একটি অন্ধকার কূপের মত নরক। যারা অন্যের অপকার করেন তাদের এখানে এনে নিক্ষেপ করা হয়। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মধ্যে বিষাক্ত কীটপতঙ্গে পরিপূর্ণ নরকে তাদের ফেলে রাখা হয়।
পুৎ বা পুন্নাম : অপুত্রক ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর এই নরকে যেতে হয়। পুত্র সন্তান না থাকার কারণে তাদের পিণ্ড দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকে না। সেই সমস্ত ব্যক্তিদের অতৃপ্ত আত্মা এই নরকে যন্ত্রণা ভোগ করে।
অবীচি : এই নরকে জল থাকে না। অসাধু ব্যবসায়ী এবং বিশ্বাসঘাতকদের এখানে নিয়ে এসে ১০০ যোজন উচু পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়। পাথরে পরিপূর্ণ শুষ্ক নরকে জলের অভাবে তৃষ্ণায় কাতরাতে থাকে তারা।
শূলপ্রোত : পশুপাখিদের নির্যাতন করলে তার শাস্তি পাপীদের শূলে চড়ানো। এই নরকে এনে তাদের সেই শাস্তি দেওয়া হয়। শূলে চড়ানোর পরেও নিস্তার নেই। এরপর তাদের ত্রিশূল দিয়ে নিরন্তর খোঁচা মারা হতে থাকে।
সূচিমুখ : সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি মৃত্যুর পর এই নরকে ঠাঁই পায়। যমদূতরা তাদের এখানে নিয়ে এসে সারা শরীরে ছুঁচ দিয়ে সেলাই করতে থাকে।