ভারতীয় সিনেমার (Indian movie) ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে বলিউড (Bollywood), কলিউড (Kollywood) এবং টলিউডই (Tollywood) প্রধানত ভারতীয় সিনেমাকে সমৃদ্ধ করেছে। সত্যজিৎ রায়, গুরুদত্ত, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেনের মত পরিচালকরা তাদের অভিনব ভাবনা থেকে ছবি তৈরি করেছেন। তাদের সেই পরিশ্রম থেকে এবার সেরা ১০ টি ছবি ভারতের সেরা (Top Ten Indian Movie List) সিনেমার তালিকায় জায়গা পেল। এর মধ্যে রয়েছে ৪ টি বাংলা ছবি। এক নজরে দেখে নিন সেই তালিকা।
পথের পাঁচালী (Pather Panchali) : পথের পাঁচালী হল পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি। তবে এই ছবিটি মুক্তির পরে শুধু বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে নয়, ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসেও নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়ে নেয়। এটাই ভারতের প্রথম সিনেমা, যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের মাঝে প্রশংসা পেয়েছিল। ২০০৫ সালে সর্বকালের সেরা ১০০ সিনেমার তালিকাতে ছিল পথের পাঁচালী।
মেঘে ঢাকা তারা (Meghe Dhaka Tara) : এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা সিনেমাটি। ৭০ এর দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি ছিল ঋত্বিক ঘটকের দেশভাগের ট্রিলজির প্রথম ছবি। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সুপ্রিয়া চৌধুরী। এই ছবি ছিল ঋত্বিক ঘটকের কেরিয়ারের অন্যতম জনপ্রিয় ছবি।
ভুবন সোম (Bhuvan Som) : মৃণাল সেন পরিচালিত এই ছবিটি ভারতীয় চলচ্চিত্রে নতুন ধরনের ছবির পথপ্রদর্শক ছিল। এই ছবির জন্য অভিনেতা উৎপল দত্ত জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। শহর এবং গ্রামের বিভাজনের উপর ছবির প্রেক্ষাপট গড়ে তোলা হয়। ছবিতে ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। এই ছবি থেকেই শুরু হয়েছিল চলচ্চিত্র জগতে তার যাত্রা।
ঘাটশ্রাদ্ধ (Ghatashraaddha) : এই ছবিটি পরিচালক গিরিশ কাসারাভাল্লির একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। ২০০২ সালে ন্যাশনাল আর্কাইভ অফ প্যারিসের ১০০ সিনেমার মধ্যে একমাত্র ভারতীয় ছবি হিসেবে জায়গা পেয়েছিল এই ছবি। এরপর ২০০৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল অফ ইন্ডিয়াতে ১৬ লক্ষ ভোট পেয়ে সেরা ২০ টি ভারতীয় সিনেমার মধ্যে অন্যতম জায়গা পেয়েছিল এটি।
এলিপাথ্থায়াম (Elippathayam) : প্রখ্যাত মালায়ালাম পরিচালক আদুর গোপাল কৃষ্ণণের এই ছবিটিও তালিকাতে জায়গা পেয়েছে। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হওয়ার পর লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বার্ষিক পুরস্কার জিতেছিল।
গরম হাওয়া (Garam Hawa) : ভারত বিভাজনের পর এক মুসলিম ব্যবসায়ী এবং তার পরিবারের সংগ্রাম নিয়ে ছবিটি তৈরি করা হয়েছিল। ছবিটি বানানোর এক বছর পর ভারতীয় সেন্সর বোর্ড এটিকে মুক্তি দেয়। দর্শক থেকে সমালোচক সকলেই এই ছবির প্রশংসা করেন। এই ছবিটিকে ভারত বিভাজন নিয়ে বানানো ছবির মধ্যে সেরা বলে ধরা হয়।
চারুলতা (Charulata) : সর্বকালের সেরা ভারতীয় সিনেমার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের দ্বিতীয় ছবি চারুলতাও রয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের দুটি সিনেমা এই তালিকাতে স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড় উপন্যাস অবলম্বনে বানানো এই ছবি ২০০২ সালের ব্রিটিশ ফ্রেন্ড ইনস্টিটিউটের সমালোচকদের বিচারে সেরা ছবির তালিকাতে ষষ্ঠ স্থান পেয়েছিল।
অঙ্কুর (Ankur) : হায়দ্রাবাদের ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে শ্যাম বেনেগাল এই ছবি নির্মাণ করেছিলেন। ছবিটি ২৪ তম বার্লিন উৎসবেও জায়গা পেয়েছিল। এই ছবির মাধ্যমে জাত বৈষম্য, ধনী-গরিব বৈষম্যসহ সমাজের নানা বিষয়কে তুলে ধরা হয়।
পিয়াসা (Piyaasa) : গুরু দত্তর পরিচালিত এবং অভিনীত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৭ সালে। এই ছবিতে ওয়াহিদা রহমানও তার চরিত্রের জন্য প্রশংসা পেয়েছিলেন। ছবিতে এক যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ওয়াহিদা। এই ছবি ২০০৫ সালে টাইম সাময়িকীর সেরা ১০০ সিনেমার মধ্যে জায়গা করে নেয়।
শোলে (Sholay) : রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ছবিটি ভারতীয় সিনেমার অন্যতম সফল বাণিজ্যিক সিনেমার জায়গা পেয়েছে। ছবিটি মুক্তির পর ২০ বছর পর্যন্ত যে কটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল তা এই ছবির বক্স অফিস কালেকশনকে টপকে যেতে পারেনি। বাহুবলী, বজরঙ্গি ভাইজানের চিত্রনাট্যকার ভি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ এই ছবিটিকে তার অন্যতম অনুপ্রেরণা বলে উল্লেখ করেন।