খলনায়িকা হয়ে অবিরাম পেয়েছেন দর্শকদের অভিশাপ, শেষ জীবনে মর্মান্তিক পরিণতি হয় সংঘমিত্রা ব্যানার্জীর

টলিউডের (Tollywood) কুখ্যাত খলনায়িকাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন সংঘমিত্রা ব্যানার্জী (Sanghamitra Banerjee)। ৯০ এর দশকে একাধিক বাংলা সিনেমাতে খলনায়িকা হিসেবে তার অভিনয় দেখে হাড়ে হাড়ে জ্বলতেন বাঙালি দর্শকরা। সিরিয়ালে কুচুটে স্বভাবের বৌমা কিংবা বৌদি চরিত্রে অভিনয় করতেন সংঘমিত্রা। বাস্তবে তার স্বভাবটা ছিল ঠিক একেবারেই উল্টো। এমন একজন দক্ষ অভিনেত্রীর শেষ জীবনটা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক।

১৯৫৬ সালের ৮ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন সংঘমিত্রা। তার জন্মের পরেই তার বাবা-মা বেনারস থেকে কলকাতা চলে আসেন। অভিনেত্রী কিন্তু পড়াশুনাতে বেশ মেধাবী ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সংস্কৃত নিয়ে অনার্স পাস করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়ার জন্য। তবে এখানেই তার পড়াশোনা থেমে থাকেনি। সংঘমিত্রা এরপর বাংলা সাহিত্যে বিশেষ ডিপ্লোমা করেন।

বাংলা সিনেমার এমন একজন দাপুটে অভিনেত্রী কিন্তু প্রথম জীবনে অভিনয় করতে চাননি মোটেও। তিনি কলেজের প্রফেসর হতে চেয়েছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খুব সুন্দর নাচ করতে পারতেন তিনি। একাধিক নামী নৃত্যশিল্পীর থেকে কথ্যক এবং শাস্ত্রীয় নৃত্যের তালিম নিয়ে নৃত্যে দারুণ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন সংঘমিত্রা। এরপর টোকিও থেকে ক্লাসিকাল ডান্সের উপর তিনি ডিপ্লোমা করেন।

১৯৮১ সালে ভারতীয় সংস্কৃতির ডেলিগেট হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সংঘমিত্রা। এ তো গেল তার পড়াশোনা এবং নাচের কথা। তবে যে কারণে তিনি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেটা হল অভিনয়। কলেজের প্রফেসর হতে চেয়েছিলেন যিনি তিনি কীভাবে অভিনয় জগতে নাম লেখালেন সেটাও ছিল একটা দারুণ মজার ঘটনা। উত্তম কুমারকে দেখার ইচ্ছে নিয়ে ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’র শুটিং ফ্লোরে হাজির হয়ে তিনি নিজেই পরিচালকের নজরে পড়ে যান।

এই ছবিতে তিনি তার পছন্দের অভিনেতা উত্তম কুমারের সঙ্গে শট দিয়েছিলেন। এরপর অভিনয় জগতে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘অমৃত কুম্ভের সন্ধানে’ ছবিতে রামজি দাসি সাধিকা চরিত্রে অভিনয় করার পর খলনায়িকা হিসেবে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তার নতুন পরিচয় গড়ে ওঠে। তার অভিনয় পর্দায় এতটাই বাস্তব বলে মনে হত যে দর্শকরা তা ধরতেই পারতেন না।

সংঘমিত্রা বিয়ে করেছিলেন জয়ন্ত ব্যানার্জীকে। বিয়ের পর অভিনয় এবং সংসার দুইই সামলেছিলেন তিনি। তবে শেষ জীবনে মারণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। এরপর তিনি পুরোপুরি নিজেকে অভিনয় জগত থেকে সরিয়ে নেন। তবে নিজের রোগের কথা কাউকে জানতে দেননি। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের ৬০ বছর বয়সে ক্যান্সারের কারণেই প্রয়াত হন সংঘমিত্রা। মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ছেলে অনুরাগ ব্যানার্জী মায়ের শেষকৃত্যের পর সেই খবরটা সকলকে জানিয়েছিলেন।