কিছু বিতর্কিত মন্তব্য, কিছু কথা গুছিয়ে না বলতে পারার অপারগতা থেকে রাতারাতি লোকসমক্ষে রীতিমতো ভিলেনে পরিণত হয়েছেন বাংলার প্রবাদপ্রতীম গায়ক রূপঙ্কর বাগচী (Rupankar Bagchi)। বলিউড গায়ক কেকের (KK) সম্পর্কে তার কিছু মন্তব্য ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়াতে উন্মাদনা দেখা দেয়। এদিকূ একদিনের ব্যবধানে কেকের অকালমৃত্যু পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে রূপঙ্করের জন্য।
কেকের মৃত্যুর পর বিগত কয়েক ঘণ্টা ধরে অনবরত সোশ্যাল মিডিয়াতে চরম ট্রোলের সম্মুখীন হতে হচ্ছে রূপঙ্কর এবং তার পরিবারকে। এমনকি তার স্ত্রীকে ফোন করে দেওয়া হচ্ছে হুমকি। এরপরই গায়ক এবং তার পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের প্রহরা বসাতে হয় বাড়ির চারপাশে। এই ঘটনা কার্যত নিদারুণ প্রভাব ফেলেছে রূপঙ্কর এবং তার পরিবারের উপর। তাই শেষমেষ সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ক্ষমা চাইলেন রূপঙ্কর।
রূপঙ্কর সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই বলেন, ‘‘প্রথমেই কেকে’র পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার যে ভিডিয়োটি গত ক’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে এত বিরামহীন উত্তেজনার উপাদান দিয়েছে, এখানে আসার আগে সেটি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলাম। পরলোকগত গায়কের পরিবারের কারও সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে তাঁদের আবার জানাচ্ছি, আমি আন্তরিক দুঃখিত। কেকে আজ যেখানেই থাকুন ,ঈশ্বর যেন ওঁকে শান্তিতে রাখেন।’’
এরপর তিনি বলেন, ‘‘গায়ক হিসেবে দেশে বিদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। স্বীকৃতি পেয়েছি নানা স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমূখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানত? এত ঘৃণা, এত আক্রোশ, এত বিরোধিতা— কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে না পারায়।’’ এদিন তিনি তাঁর বক্তব্য লিখে এনেছিলেন। তার লিখিত বয়ান তুলে দেওয়া হয় সাংবাদিকদের হাতে।
সেখানে লেখা রয়েছে, ‘‘প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা একইরকম দরদ দেখান।’’ রূপঙ্কর আরও বলেছেন, ‘‘একই সঙ্গে আরও কিছু সমযোদ্ধার নাম করেছিলাম, যাঁদের ট্যালেন্ট আমার মতে জাতীয় পর্যায়ের। পরে মনে হয়েছে নামগুলো বলার আগে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার বলি এককভাবে ইস্যুটা দেখিনি। কেকে’র মতো ভারতবিখ্যাত পারফরমারের নামটা নিছক প্রতীক ছিল। নিছক উপলক্ষ্য। লক্ষ্য কখনও তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও নেই।’’
সবশেষে তিনি বলেছেন, ‘‘কে জানত, চরম দুর্ভাগ্য কেকে’র জন্য এইভাবে ওঁৎ পেতে রয়েছে। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে এভাবে প্রাণ হারালেন সেটা খুব হৃদয় বিদারক।’’ ‘‘আমি আজ আপনাদের কারো সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছি না। পরে নিশ্চয়ই বলবো। কিন্তু আজ সেই দিন নয়। আপনাদের কাছে মার্জনা চাইছি আগাম।’’, সাংবাদিকদের উদ্দেশে এই কথা বলেই তিনি বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান।