খলনায়ক হয়ে অবিরাম কুড়িয়েছেন দর্শকদের অভিশাপ, ৪০ পেরোতেই মর্মান্তিক পরিণতি হয় সৌমিত্র ব্যানার্জীর

৯০ এর দশকের বাংলা সিনেমা মানেই অ্যাকশন ধর্মী পারিবারিক ড্রামা নির্ভর কমার্শিয়াল ছবি যা বক্স অফিসে ঝড় তুলতো। সেই সময় ছবি হিট হওয়ার পেছনে ছবির গল্প, নায়ক-নায়িকা ও বিশেষ করে খলনায়কদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। যে ছবির খলনায়ক যত বেশি ভয়ংকর হতেন, যত বেশি ভয় দেখাতে পারতেন দর্শকদের, সেই ছবি তখন ততই হিট হত। ছবির মাধ্যমে এভাবেই দর্শকদের মনের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র ব্যানার্জী (Soumitra Banerjee)।

একাধিক ছবিতে তিনি খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন। তাকে তার অভিনয়ের জন্যই দর্শকরা মনে রেখেছেন আজও। দর্শকদের নজরে তিনি ছিলেন বড়লোক বাবার বখে যাওয়া ছেলে। দর্শকরা তাকে তার পর্দার চরিত্রের জন্য একদমই পছন্দ করতেন না। সৌমিত্র ব্যানার্জীর নাম এবং চেহারার কারণে তাকে অনেকেই স্বর্ণযুগের প্রখ্যাত অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে নানু বলে ভুল করতেন। তবে আদতে কিন্তু তার সঙ্গে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূর দূরান্তের কোনও সম্পর্ক ছিল না। এদিকে আবার সিনেমাতে তার ‘খারাপ ছেলে’র মত চরিত্র দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলতেন দর্শকরা।

SOUMITRA BANERJEE

রাস্তাঘাটে মেয়েদের যেতে দেখলে টোন টিটকিরি মারা, তাদের সম্পর্কে অশ্লীল কথা বলা, নায়কদের হাতে বেধড়ক মার খাওয়া, এসবই ছিল সিনেমাতে তাকে নিয়ে চেনা দৃশ্য। অত্যন্ত বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন সৌমিত্র। মাত্র ১০ বছর বয়সে ‘সুভা’ ও ‘দেবতার গ্রাস’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি অভিনয় জগতে পা রাখেন। ১৯৮২ সালে মিঠুন চক্রবর্তী ও দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে ‘ত্রয়ী’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি আবার নতুন করে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে তুমুল হিট হয়।

এরপর আর সৌমিত্রকে ফিরে তাকাতে হয়নি। গুরুদক্ষিণা, ইন্দ্রজিৎ, অমর সঙ্গী, জীবন যুদ্ধের মত একাধিক সুপার হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। নায়কের তুলনায় খলনায়ক হিসেবে তাকে বেশি পছন্দ ছিল ছবি নির্মাতাদের। শুধু অভিনয় নয়, গায়ক হিসেবেও তিনি বেশ গুণী ছিলেন। তার গলায় কিশোর কুমারের গান শুনে মুগ্ধ হতেন শ্রোতারা। এত গুণী একজন অভিনেতা বিয়ে করেছিলেন বাংলা সিনেমার আরেক সুপারহিট খলনায়িকা রীতা কয়ালকে।

 

SOUMITRA BANERJEE

কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। বৈবাহিক জীবনে অশান্তি, তার উপর আবার সৌমিত্রর মদ্যপানের অভ্যাসের ফলে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। অতিরিক্ত মাদকাসক্তি সৌমিত্রকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। শেষ জীবনে তার হাতে কাজের সুযোগও কমে গিয়েছিল। ব্যাপক অর্থকষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হত তাকে। জীবনে প্রায় ১৫০ টি ছবিতে অভিনয় করলেও তিনি মনের মত চরিত্র না পাওয়ায় আক্ষেপ করতেন। শেষমেষ ২০০০ সালে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।