টেলিভিশনের পর্দা তো বটেই, সিনেমার জগতেও তার সমানভাবে বিচরণ রয়েছে। যে কোনো চরিত্রে সাবলীলভাবে অভিনয় করেন তিনি। তিনি হলেন সুভদ্রা চক্রবর্তী (Subhadra Chakraborty)। হাতে জপ মালা, মাথায় তিলক কেটে একেবারে অন্য রূপে সম্প্রতি ধরা দিলেন তিনি। বললেন নিজের জীবনের অনেক অজানা কথা।
সম্প্রতি আলোর কোলে (Alor Kole) ধারাবাহিকে পার্বতীর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে সুভদ্রা চক্রবর্তীকে। পার্বতী এমন একটি চরিত্র যে শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবে। আদিত্যর সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য সমস্ত রকম চেষ্টা করবে এই চরিত্রটি। তবে ভূতের ভয় সে খুব পায় তাই সবসময় হাতে জপ মালা রেখে দেয় যাতে আলো তাকে কিছু না করতে পারে। আলোর কোলে ধারাবাহিকের এই চরিত্রটি খারাপ বা ভালো তার থেকেও বড় কথা এই চরিত্রটির মধ্যে আমরা সবাই কোথাও নিজেদের খুঁজে পাবো, কারণ দিনের শেষে আমরা সবাই নিজের ভালোটাই চাই।
নিজের অভিনয় যাত্রার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমার উপর ঈশ্বরের কৃপা রয়েছে। আমি এত দীর্ঘ অভিনয় জীবনের অনেক রকমের চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি। সাড়ে তিন বছর বয়সে যখন অভিনয় শুরু করি তখন যেমন চাইল্ড আর্টিস্ট হিসাবে অভিনয় করেছি তেমন নায়িকার ভূমিকাতেও একসময় অভিনয় করেছি আবার আজ মাসিমা কাকিমা বা ঠাকুরমার ভূমিকাতে অভিনয় করছি। ভালো-মন্দ সব রকমের চরিত্রে আমি অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি বলে আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করি।”
নতুন জেনারেশনের অভিনেতা-অভিনেত্রী সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে অভিনেত্রী বলেন,” এখনকার ছেলে মেয়েরা ভীষণ কঠোর পরিশ্রম করে। একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সব সময় তাদের মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করে। সব থেকে বেশি ভালো লাগে যখন তারা এসে জিজ্ঞাসা করে যে কিভাবে আরো ভালো অভিনয় করব তখন খুব ভালো লাগে। আগে আমরা পরিচালকের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেতাম কিন্তু এখন পরিচালকরা পরিচালনার পাশাপাশি অনেক কাজ করেন তাই তাদের থেকে সেই ভাবে শেখা যায় না। যারা বয়োজ্যেষ্ঠ হয় বা আমাদের মত যারা আর্টিস্ট তাদের থেকেই এই নতুন ছেলেমেয়েরা সব কিছু শিখে নেয়। যদি শেখার মানসিকতা না থাকে তাহলে সে বেশি দূর এগোবে না কিন্তু শেখার মানসিকতা থাকলে তাকে কেউ থামাতে পারবে না।”
সিনেমা না সিরিয়াল কোনটা বেশি পছন্দ জিজ্ঞাসা করায় অভিনেত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সিরিয়ালের থেকে সিনেমা করতে বেশি পছন্দ করি কারণ সিনেমার হাত ধরেই যেহেতু আমি অভিনয় জীবন শুরু করেছি তাই সিনেমার প্রতি আমার আকর্ষণ চিরকাল। তবে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মোটামুটি অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গেই আমি কাজ করে ফেলেছি শুধু বাকি দেব আর রুক্মিণী। ওদের সঙ্গেও কাজ করার খুব ইচ্ছা আছে আমার। আমি ওদেরকে এই কথা বলেছি।
নেতিবাচক চরিত্র বারবার বেছে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কেমন জিজ্ঞাসা করায় অভিনেত্রী বলেন, আমি খুব মানুষকে ভালবাসতে চেষ্টা করি। আমি চাই যারা বিপদে আছে তাদের পাশে দাঁড়াতে। আমার মেয়ের জন্মদিন হোক অথবা আমাদের যে কোন অনুষ্ঠান আমি পথশিশু বা অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সেই দিনটা পালন করি। যাদের অনেক আছে তাদের সঙ্গে না থেকে যাদের কিছু নেই তাদের সঙ্গে কাটানোটাই আমার মনে হয় বেশি ভালো। কোন মানুষ বিপদে পড়লে যথা সম্ভব পাশে দাঁড়াই তাই আজও আমাকে মানুষ খোঁজে বিপদে পড়লে। আমি কর্মফলে ভীষণ বিশ্বাসী। চেষ্টা করি আমার কর্ম যেন সবসময় ভালো হয় যাতে আমি মৃত্যুর পর ঈশ্বরের ভালোবাসার পাত্র হতে পারি।
আরও পড়ুন : স্টারকিড হয়েও মিলল না সুযোগ! কোথায় হারিয়ে গেলেন অরুনিমা ঘোষ?
আরও পড়ুন : সাবিত্রীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন পরাণ! কেন বিয়ে হল না? এতদিনে ফাঁস করলেন অভিনেত্রী
সবাইকে সবসময় সাহায্য করেন যে অভিনেত্রী তিনি ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সাহায্য পেয়েছেন স্বামী সন্তানের থেকে জিজ্ঞাসা করলে অভিনেত্রী বলেন,”আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ভীষণ সাহায্য পেয়েছি আমার স্বামীর থেকে। বাবা এবং শ্বশুর মশাই যখন বেঁচে ছিলেন তখনও তাদের থেকে খুব সাহায্য পেতাম কিন্তু ওনারা একই দিনে মারা গেছেন। দুই বাবাকে হারিয়ে আমি কিছুদিন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলাম। তবে শুটিং থেকে ফিরে আমি কখনো ব্যক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন হয়নি আমার স্বামী সারাজীবন আমার সাপোর্টে কথা বলেছেন। আমার মেয়েও বাবার মতই আমার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করে। এই ভাবেই যাতে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারি, সেটাই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি।”