নিয়তির কাছে হেরে গেল ভালবাসা, জীবনের চরম সিদ্ধান্ত নিলেন সব্যসাচী

না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। রবিবার বেলা ১টা নাগাদ থমকে গিয়েছে তাঁর লড়াই। এত কম বয়সে ঐন্দ্রিলার এই মৃত্যু যেন নাড়িয়ে দিয়েছে টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়াকে। ঐন্দ্রিলার জীবনের অধ্যায় সীমিত। মাত্র ২৪টি বসন্ত পেরিয়েছিলেন অভিনেত্রী। আরও অনেকটা পথ চলা বাকি ছিল। তার আগেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনেছেন তিনি। ঐন্দ্রিলার এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের জীবনের শেষ সময়টুকুতে তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী।

দীর্ঘ ১৯ দিনের লড়াইয়ের প্রতিটা পদে সব্যসাচী চৌধুরী চেষ্টা করেছিলেন ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনার। অতীতে এমন অনেক মিরাকেল ঘটেছে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে। তাই এবারও তেমনই আশা করেছিলেন সব্যসাচী। কিন্তু সেই আশা আর পূর্ণ হলনা। প্রসঙ্গত, ১ লা নভেম্বরের পর এইদিন প্রথম দেখা গেল সব্যসাচীকে। গাড়ির সামনে বসে তিনি, মাথা নিচু, পেছনে ফুল দিয়ে সাজানো ঐন্দ্রিলার মরদেহ। যেন কিছুই ফিরে পাওয়ার নেই। কঠোর অনুভূতি, কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা, সবকিছু একসাথে ফুটে উঠেছে তার চোখে মুখে।

 

প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মুহূর্ত চোখের সামনে প্রিয়তমাকে কষ্ট পেতে দেখেছেন তিনি। নিজে হাতে করে নিয়ে এসেছিলেন, চেয়েছিলেন নিজে হাতে করেই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু তা আর হল কই? এই মুহূর্তে সকলের উৎকণ্ঠা, অভিনেতা কেমন আছেন? সেই খোঁজ দিলেন সব্যসাচীর কাছের বন্ধু সৌরভ দাস। সৌরভ জানান, ‘‘সব্য ভেঙে পড়েছে। কেমনই বা থাকবে এই পরিস্থিতিতে! ঐন্দ্রিলার পরিবারও ভেঙে পড়েছে। তবে সব্যকে বলেছি, এক ফোঁটা চোখের জল না ফেলতে। আজ ওকে সামলাতে হবে ঐন্দ্রিলার পরিবারকে।

সব্যসাচী ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আর কখনও কিছু লিখবে না। কারণ ‘মিষ্টি’র কথাতেই ও লিখতে শুরু করে।” অভিনেতা আরো জানান, ‘এতদিন ঐন্দ্রিলার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর ভাগ করে নিচ্ছিল সকলের সঙ্গে। যদি কেউ আশা করেন, ফেসবুকে কোনও পোস্ট দেবে সব্য, তা আর হবে না।’ আসলে মেয়েটা যে তার আত্মায় মিশে আছে। সেই ২০১৭ সালে প্রথম দেখা। ঐন্দ্রিলার প্রথম ধারাবাহিক ‘ঝুমুর’-এর সেটে আলাপ হয় তাদের। তারপর সেই আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে।

ঐন্দ্রিলার সঙ্গে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন সব্যসাচী। মারণরোগের সঙ্গে লড়াইয়ে বান্ধবীকে কখনও একা ছাড়েননি তিনি। তাঁরা যেন হয়ে উঠেছিলেন একে অপরের জীবনের জিয়নকাঠি। একাদশ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে প্রথম বার ক্যানসারে আক্রান্ত হন ঐন্দ্রিলা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। সব্যসাচীর সঙ্গে তখনও তাঁর পরিচয় হয়নি। টানা দেড় বছর মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন ঐন্দ্রিলা। এর পর সব্যসাচীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের শুরু।

যদিও, প্রথম দেখাতেই যে, প্রেমে পড়েছিলেন এমনটা নয়। আসলে ঐন্দ্রিলা ঠিক ‘প্রথম দেখায় প্রেম’-এ বিশ্বাসী ছিলেননা। তাই শুরুটা হয় বন্ধুত্বের হাত ধরেই। আসলে অভিনেত্রী শুটিং থেকে ছুটি পেলেই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসতেন আড্ডা দিতে। সেখানে থাকতেন সব্যসাচীও। শুরু হয় ফোনালাপ। আর সেটাই যে কখন প্রেমালাপে পৌঁছে যায় তা ধরতেও পারেনি কেউ। শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক।

 

তারপর দীর্ঘ ৫ বছর বিভিন্ন চড়াই-উতরাই। মাঝে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবার অসুস্থ। কাঁধে যন্ত্রণা শুরু হয়। জানা যায়, ডান দিকের ফুসফুসে টিউমার তৈরি হয়েছে। আবার শুরু হয় কেমো। পুরোটা সময় একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন তারা। কিন্তু শেষমেশ হাত ছাড়লেন ঐন্দ্রিলা। অপূর্নই থেকে গেল একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প।