হাসির ছলে হোক অথবা দুঃখের বেদনায় সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (Sabitri Chatterjee) একটা কথা বারবার বলেন, “যখনই আমি কারোর প্রেমে পড়েছি তার কিছুদিন পরেই জানতে পেরেছি তিনি নাকি বিবাহিত।” এই কথাটি হয়তো মজার ছলে নেন অনেকেই, কিন্তু এই কথাটির মধ্যে যে কতটা দুঃখ লুকিয়ে রয়েছে তা একমাত্র জানেন সাবিত্রী দেবী। সাবিত্রী দেবী এবং উত্তম কুমারের প্রেমের সম্পর্কের কথা তো আমরা সকলেই জানি কিন্তু আপনি কি জানেন উত্তমবাবুর পরেও সাবিত্রী দেবীর জীবনে এসেছিল প্রেম?
উত্তম কুমারের জীবনে প্রেম এসেছিল একাধিকবার। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি গৌরী দেবীকে বিয়ে করলেও সুচিত্রা সেনের সঙ্গে উত্তম কুমারের সম্পর্ক নিয়েও কম জল ঘোলা হয়নি। অন্যদিকে সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে উত্তম কুমারের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সেই সময়, যখন উত্তম কুমারকে টাকা দিয়ে সাহায্য করার বিনিময়ে সুপ্রিয়া দেবী তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলেন। কিন্তু যে প্রেমিকার কাছে বার বার নতজানু হয়েছিলেন উত্তম কুমার, তিনি হলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়।
উত্তম কুমারের প্রেমের কাছে নতি স্বীকার করে নিজেকে আজীবন বিয়ে থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন সাবিত্রী দেবী। অন্যদিকে উত্তমও যেন কোনভাবে মেনে নিতে পারেননি যে তার প্রিয় সাবু অর্থাৎ সাবিত্রী অন্য কারোর সঙ্গে বিয়ে করবেন তাই সাবিত্রী দেবীর বিয়ের প্রস্তাব এলেই বারবার ভেঙ্গে দিতেন তিনি। উত্তম বাবুর সাথে এই প্রেমের কথা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না সাবিত্রী দেবীর জীবনে আরো একজন এসেছিলেন প্রেমিক হয়ে, কিন্তু সেই প্রেমও অধরা থেকে যায় শেষমেষ।
উত্তম পরবর্তী সময়ে যে মানুষটি সাবিত্রীর মনিকোঠায় জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন তিনি হলেন সর্বেন্দ্র সিং। তিনিও ছিলেন একজন অভিনেতা। তবে জনপ্রিয়তায় উত্তম কুমারের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি তিনি। উত্তম কুমারের মতো সর্বেন্দ্র বাবুও ছিলেন বিবাহিত। সেই সময় নেশায় বুঁদ হয়ে সাবিত্রীর বাড়িতেই পড়ে থাকতেন তিনি। একটা সময় অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে সর্বেন্দ্র বাবুর অসহ্য পেটে যন্ত্রণা হতো যা কমানোর বহু চেষ্টা করেছিলেন অভিনেত্রী। অবশেষে যখন মুম্বাইতে অস্ত্রপচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সর্বেন্দ্রবাবুকে, তখন তার সঙ্গে মুম্বাইতে যেতে চেয়েছিলেন সাবিত্রী দেবী, কিন্তু পারলেন না।
আরও পড়ুন : মাঝরাতে সাবিত্রীর বাড়ির বাথরুমে লুকিয়েছিলেন উত্তমকুমার, এতদিন পর ফাঁস হল মহানায়কের সিক্রেট
মুম্বাই যাওয়ার সময় সাবিত্রী দেবীকে না নিয়ে গিয়ে নিজের স্ত্রী এবং সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন সর্বেন্দ্র। পুরুষ মানুষ বলে কথা!! অন্যদিকে অন্যের ঘর ভাঙবেন না বলে সাবিত্রী দেবীও কোন কথা বলেননি। তবে মনে মনে তিনি সর্বেন্দ্রকে দিয়েছিলেন নিজের স্বামীর স্বীকৃতি। নিজের আত্মজীবনী ‘সত্যি সাবিত্রী’- তে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সর্বেন্দ্রকে নিজের স্বামীর বলে উল্লেখ করেছিলেন। সর্বেন্দ্রর মৃত্যুর সময় সাবিত্রী দেবীকে তার ধারে কাছে ঘেষতে দেওয়া হয়নি। ফুলের মালাটুকু পড়াতে দেওয়া হয়নি তাকে, এভাবেই হয়তো ফের ভালোবাসার কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল সাবিত্রী দেবীকে।
আরও পড়ুন : পর্দার প্রেম গড়িয়েছে বাস্তবেও? প্রেম করছেন স্টার জলসার জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা, জল্পনা তুঙ্গে
আরও পড়ুন : ভালোবাসতেন মনে প্রাণে, তবুও কেন উত্তম কুমারের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হননি সাবিত্রী?
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে ‘দাদাগিরি’-তে সাবিত্রী দেবীকে মজার ছলেই ফের বলতে শোনা গেল, যারই প্রেমে পড়েছি, দেখি সেই বিবাহিত। এমনকি পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও যে তার বিয়ের সম্বন্ধে হয়েছিল, সে কথাও তিনি বললেন হাসতে হাসতে। কিন্তু এত হাসির মধ্যেও যে সাবিত্রী দেবীর চাপা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে থাকে, সেটা হয়তো আমাদের চোখে পড়ে না। শাঁখা সিঁদুর না পড়েও তিনি বারবার নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন মনের মানুষদের কাছে, কিন্তু চিরকালই খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল তাকে।
আরও পড়ুন : সাবিত্রীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন পরাণ! কেন বিয়ে হল না? এতদিনে ফাঁস করলেন অভিনেত্রী