দেনার দায়ে হয়েছিলেন সর্বস্বান্ত, খাটতে হয়েছে জেল, লোক হাসিয়েই আজ কোটিপতি রাজপাল যাদব

বলিউডের (Bollywood) সেরা পাঁচ কমেডিয়ানদের (Commedian) মধ্যে রাজপাল যাদবের (Rajpal Yadav) নাম থাকবেই। এই মুহূর্তে তিনি বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা। হাসির জাদুকর রাজপাল যাদব বলিউডের যে ক’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন, নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। তবে আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে তাকে কিছু কম পরিশ্রম করতে হয়নি। একটা সময় ছিল যখন বলিউডে জায়গা করতে তাকেও পরিচালক প্রযোজকদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয়েছিল। এমনকি বলিউডে নাম করার পরেও তার সংগ্রামের দিন কাটেনি।

জন্ম ১৯৭১ সালের ১৬ই মার্চ। স্কুলের নাটকে পাঠ করতে করতে অভিনয় প্রতি তার আকর্ষণ জন্মায়। ছেলেবেলা থেকেই দেখতেন বড় তারকা অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন। বাড়িতে একা একাই করতেন অনুশীলন। বিয়ে বাড়িতে দরজা বন্ধ করে নাচতেন। সেটাও ছিল তার অনুশীলন। নিজেকে অভিনেতা হিসেবে গড়ে তুলতে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা, ভারতীয় অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্টস ও মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে রোহিলখন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিনয় শিখেছেন। শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন, আজ বলিউড তাকে দুই হাত ভরিয়ে দিয়েছে। তবুও এখনও নিজেকে ‘জিরো’ বলেই ভাবেন তিনি।

অভিনয়ের প্রতি টান থেকে ১৯৯৭ সালে তিনি সবকিছু ছেড়ে মুম্বাইতে চলে আসেন। ছোট পর্দা দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হয় রাজপাল যাদবের। দুরদর্শনের একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসাও পান। এরপর শুরু হয় তার আসল লড়াই। বলিউডে নিজের জন্য জায়গা ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই। সেসময় রামগোপাল ভার্মা, মহেশ ভাট, শ্যাম বেনেগাল, প্রকাশ ঝাঁদের মত পরিচালকদের দরজায় দরজায় ঘুরতেন। এভাবেই হাল না ছেড়ে সংগ্রামের মঞ্চে টিকে যাওয়ার ধৈর্য থেকে রামগোপাল ভার্মার ১৭টি‌ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।

পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। শুরুর জীবনে রোজগারের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয় রাজপাল যাদব এবং তাঁর ভাইকে। সেখান থেকে নিজেকে বলিউডে প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা হিসেবে গড়ে তুলতে স্ট্রাগল করেন তিনি। একসময় দেনার দায়ে জর্জরিত ছিলেন বলিউডের কমেডিয়ান অভিনেতা রাজপাল যাদব। বলিউডের বহু জনপ্রিয় ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু ২০১৮ সালে ৫ কোটির ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় তিন মাসের জেল হয়েছিল তাঁর।

কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয় রাজপাল যাদবের কেরিয়ার একেবারেই কমেডি দিয়ে শুরু হয়নি। বরং, ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি পরিচিত হন খলনায়ক হিসেবে। খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করে তিনি পুরস্কারও জেতেন। জীবনের শুরু দিনগুলোয় তিনি এবং তাঁর পরিবার যখন চরম আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তখন লটারির টিকিট কাটার নেশা ছিল তাঁর। দাদার কাছ থেকে টাকা নিয়ে লটারির টিকিট কাটতেন। তার জন্য দাদার কাছে বকুনিও খেয়েছেন।

একবার একটি সাক্ষাৎকারে রাজপাল যাদব বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে কখনোই নিজেকে হিরো বলে ভাবি না। কারণ, আমি সত্যিকারের হিরোদের দেখেছি। যিনি বড় ভবনের ওপরে জানালার গ্লাস পরিষ্কার করেন, যিনি পাহাড়ের ওপরে ওঠার নিখুঁত সুড়ঙ্গ তৈরি করেন, এমন অনেকে আছেন— তাঁরাই সত্যিকারের আইনস্টাইন, তাঁরাই সত্যিকারের হিরো, আমি পুরোপুরি জিরো।’ নিজের নজরে আপাতদৃষ্টিতে ‘জিরো’ এই মানুষটিই আজ প্রতি মাসে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি উপার্জন করছেন। বর্তমানে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮৬ কোটি টাকা।