মহানায়ক উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর বাংলার স্টুডিওগুলোতে ঝুলতো বড় বড় তালা। সিনেমা দেখতে বড় একটা আর সিনেমা হলের পথ ধরতেন না দর্শকরা। সেই দর্শককে আবার হলমুখী করেছিল যে জুটি, তাদের নাম তাপস পাল ও দেবশ্রী রায় (Debashree Roy)। ছবির নাম ছিল ‘দাদার কীর্তি’। এহেন দেবশ্রী রায়ের মনে টলিউডের (Tollywood) প্রতি জমেছে একরাশ ক্ষোভ। সম্প্রতি আনন্দবাজারের কাছে সেই ক্ষোভ উজার করে দিলেন অভিনেত্রী।
টলিউড তিনি ছেড়েছেন বহু বছর আগে। ‘সর্বজয়া’ সিরিয়ালের হাত ধরে বহু বছর পর আবার ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন দেবশ্রী। বলতে গেলে এটাই তার কামব্যাক ছিল। সদ্য মুক্তি পেয়েছে দেবশ্রীর প্রথম ওয়েব সিরিজ কেমিস্ট্রি মাসি (Chemistry Masi)। যার রিভিউ আসছে দুর্দান্ত।
সিনেমা হোক সিরিয়াল কিংবা ওয়েব সিরিজ, বরাবর বেছে বেছে কাজ করারই পক্ষপাতি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই বাঙালি অভিনেত্রী।
‘উনিশে এপ্রিল’ ছবিটির জন্য দেবশ্রী জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন বঙ্গবিভূষণ এবং আরও বেশ কিছু পুরস্কার। তবে তার আক্ষেপ এই যে তাকে নিয়ে টলিউড কোনও ভাল কিছু আর ভাবল না। দেবশ্রীর কথায় তার ‘উনিশে এপ্রিল’ সিনেমাটার জন্য কুড়ি বছর পর সিনেমা হলের সামনে গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছিল। কারণ তখন এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে ভদ্রলোকেরা সিনেমা হলে ঢুকতেন না। দেবশ্রীর ছবি তাদের আবার হলে ফিরতে বাধ্য করে।
দেবশ্রীদের সময় ছিল না আজকের মত কোনও মেকআপ ভ্যান, এসি ফ্লোরের বন্দোবস্ত। আউটডোরে লোকের বাড়িতে, বাসের মধ্যে চাদর টাঙিয়ে পোশাক বদলাতেন। টাকা বাঁচানোর জন্য মায়ের সঙ্গে রিকশা করে যাতায়াত করতেন স্টুডিওতে। শুটিংয়ে পৌঁছতে ১০ মিনিট দেরি হতেই পরিচালক তরুণ মজুমদার বাইরে বের করে দিয়েছিলেন। এসব স্মৃতি এখনও দেবশ্রীর চোখে ভাসে।
তবে এত যে স্ট্রাগল করেছেন, তার মাঝেও তিনি যা কিছু দিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে, তার দরুণ যোগ্য সম্মান পাননি বলেই মনে করেন দেবশ্রী। আনন্দবাজারে দেওয়া তার সাক্ষাৎকার অনুসারে, “স্ট্রাগল করে হলটা কী? দেবশ্রী রায় কি পদ্মশ্রী পেয়েছেন? না পাননি। এখান থেকে আমি অন্য কোনও সেরা সম্মান পাইনি। জাতীয় পুরস্কার জয়ী এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাওয়া দেবশ্রী রায়কে হয়তো ওগুলো দেওয়া যায় না।” ক্ষোভ ঝরে পড়লো দেবশ্রীর কথায়।
আরও পড়ুন : স্ত্রীর সাফল্যে হিংসা নাকি পরকীয়া, কেন ভেঙেছিল প্রসেনজিৎ-দেবশ্রীর সম্পর্ক
আরও পড়ুন : দেবশ্রীকে ডিভোর্স দিয়ে আজও পস্তাচ্ছেন প্রসেনজিৎ!
তিনি আরও বলেছেন, “মাঝে মাঝে মনে হয় আমি মারাঠি। কিন্তু জন্মেছি আর বড় হয়েছে কলকাতায়। আমার মনে হয় আমি যোগ্য নই। তাই হয়তো পাইনি।” তাই দেবশ্রীর সম্বল শুধু দর্শকদের ভালোবাসা। আজও তার অভিনীত ‘দাদার কীর্তি’, ‘উনিশে এপ্রিল’ এর মত সিনেমাগুলো নিয়ে চর্চা চলে ফ্যানপেজে। দেখে গর্বে ভরে ওঠে দেবশ্রীর বুক। তিনি তো আর যেমন তেমন প্রজেক্টে কাজ করতে পারেন না, দর্শকদের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে যে। তবে বাংলা ছবি থেকে আজও চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের জন্য ডাকের প্রত্যাশা করছেন অভিনেত্রী।