বলিউড (Bollywood) তারকাদের মধ্যে এভারগ্রিন কিছু নায়ক আজ এত বছর বাদেও দর্শকদের মনের মধ্যে রাজত্ব করছেন। এরা ৭০-৮০ এর দশকে অভিনয়ের দুনিয়াতে নিজেদের আধিপত্য গড়েছিলেন। একের পর এক সুপারহিট ছবি বেরিয়েছিল এদের হাত থেকে। তেমনই একজন জনপ্রিয় তারকা ছিলেন বিনোদ খান্না (Vinod Khanna)। তাকে প্রধানত দেশ ভক্তিমূলক ছবিতে বেশি অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। বলিউডের সেই নায়কের জীবনের কিছু অজানা তথ্য নিয়ে সাজানো আজকের এই প্রতিবেদন।
বিনোদ খান্নার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৬ সালে, অবিভক্ত ভারতবর্ষের পেশোয়ারে এক ব্যবসায়ী পরিবারে। দেশভাগের পর তাদের পাকিস্তানের পেশোয়ার ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল ভারতবর্ষে। বিনোদ খান্নার পরিবার প্রথমে মুম্বাইতে বসতি স্থাপন করেন। পরে তারা মুম্বাই ছেড়ে দিল্লিতে চলে যান। সেখানেই কেটেছিল তার ছোটবেলা। দিল্লি পাবলিক স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন ছোটবেলায়।
বিনোদ খান্নার পরিবারের অবশ্য দিল্লি এবং মুম্বাইতে যাতায়াত লেগেই ছিল। বড় হওয়ার পর মুম্বাইয়ের একটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক হয়েছিলেন অভিনেতা। কলেজে পড়তে পড়তেই কলেজ থিয়েটারে যোগ দিয়ে অভিনয়ের সঙ্গে তার যোগসূত্র গড়ে ওঠে। এখানেই তার আলাপ হয়েছিল গীতাঞ্জলি তলেয়ার খানের সঙ্গে। গীতাঞ্জলিই ছিলেন বিনোদ খান্নার প্রথম স্ত্রী।
কলেজ থিয়েটারে অভিনয় করার সময় সুনীল দত্তের নজরে পড়ে যান বিনোদ খান্না। তিনিই তাকে বলিউডে প্রবেশের সুযোগ করে দেন। ১৯৬৮ সালে ‘মন কা মিত’ ছবির হাত ধরে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন। এরপর তাকে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। একে একে পূরব অউর পশ্চিম, মাস্তানা, মেরা গাঁও মেরা দেশ, অচানক, রোটি কাপড়া অউর মকান ইত্যাদি বহু সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করে তিনি বলিউডে নিজের ভিত মজবুত করেন।
এত বড় মাপের অভিনেতার জীবনে বিতর্ক কিছু কম ছিল না। প্রেমিকা গীতাঞ্জলিকেই তিনি বিয়ে করেন। প্রথম প্রথম তাদের সংসার জীবন ভালই কেটেছিল। একে একে তাদের দুই সন্তান রাহুল এবং অক্ষয়ের জন্ম হয়। তবে তাদের সুখের সংসারে বাধা হয়ে দাঁড়ালো তার আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা। ১৯৮২ সালে বলিউড থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়ে বিনোদ খান্না আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ডুবে যান। সংসারের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি দেন আমেরিকায়।
এদিকে স্বামীর মতিগতি দেখে তাকে ডিভোর্স দেন গীতাঞ্জলি। পরে অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরে আবার বলিউডে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হয়েছিল বিনোদ খান্নাকে। একই সঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়ে তিনি রাজনীতিতেও নেমেছিলেন।
বিনোদ খান্নার জীবনের এই পর্যায়ে অভিনেত্রী অমৃতা সিংয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অমৃতার মা তাদের সম্পর্কটা মেনে নেননি। পরে কবিতা দত্তানি নামের আরেক মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তারা বিয়ে করেন। এরপর আর বাবার খোঁজ খবর নিতেন না অক্ষয়-রাহুলরা। দ্বিতীয়পক্ষেও দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন বিনোদ। ২০১৭ সালে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। শোনা যায় জীবনের শেষের দিনগুলোতে পরিবারের থেকে বড় অবহেলা পেয়েছিলেন অভিনেতা। এমনকি তার সন্তানরা কেউ তার কাছে পর্যন্ত যেতেন না। তার শরীর একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। ওই বছরই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর ছেলেরা কেউ তার মুখাগ্নিটুকুও করেননি। বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতার পরিণতি ছিল এতটাই করুণ যে তা কল্পনাও করা যায় না।