রঙিন জীবনের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিলেন কঠিন সংগ্রাম, চিনুন অজানা বাপ্পি লাহিড়ীকে

চোখে চশমা, চকমকে পোশাক, সর্বাঙ্গ সোনার আভরণে মোড়ানো বাপ্পি লাহিড়ী (Bappi Lahiri) আর কখনও স্টেজ বা মঞ্চে উঠে গান গাইবেন না! লতা মঙ্গেশকর এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদে এমনিতেই বাঙালি শোকোস্তব্ধ। এরইমধ্যে ফের দুঃসংবাদ এল মুম্বাই থেকে। বুধবার সকালে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাপ্পি লাহিড়ী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। সকলকে কাঁদিয়ে শেষ বিদায় নিলেন ভারতের ডিস্কো কিং।

তার জন্ম হয়েছিল ১৯৫২ সালে। পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলাতে তার বাড়ি। তার আসল নাম অলোকেশ লাহিড়ী। তবে এই নামে পরে আর কেউই তাকে চেনেননি। তার এক আত্মীয় ডাক নাম রেখে দিয়েছিলেন বাপি। সেই নামেই তার খ্যাতি জগৎজোড়া। তিনি ছোট থেকেই চাইতেন মুম্বাইতে গিয়ে গান গাইবেন। তবে তার পরিবার তাকে নিয়ে এতটাও আশা করেননি। কিন্তু মুম্বাইতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন নিয়ে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি তার শহর ছেড়ে চলে আসেন বাণিজ্যনগরীতে।

Bappi Lahiri rubbishes false reports of him losing his voice

সংগীতজগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে পরিশ্রম করতে হলেও গানকে জীবনের মূলমন্ত্র করে এগোনোর জন্য কখনও পরিবারের সঙ্গে লড়াই করতে হয়নি। আসলে তার বাড়িতেই সঙ্গীত চর্চা হত। তার বাবা অপরেশ লাহিড়ী এবং মা বাশুড়ি লাহিড়ী সংগীতজগতের বেশ পরিচিত মুখ ছিলেন। ছেলের স্বপ্নের পথে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি তারা। বাবা মায়ের আশীর্বাদ মাথায় নিয়েই মাত্র ১৯ বছর বয়সে মুম্বাইতে চলে আসেন তিনি।

১৯৭২ সালে তিনি বাংলা ছবি ‘দাদু’র গানে প্রথম সুর দিয়েছিলেন। এরপর তিনি কলকাতা ছেড়ে চলে আসেন মুম্বাইতে। সেখানে বলিউড অভিনেত্রী কাজলের বাবা এবং তনুজার স্বামী শমু মুখোপাধ্যায় তাকে প্রথমবার সুযোগ করে দেন। বলিউডে প্লেব্যাক গাওয়ার সুযোগ আসে ১৯৭৩ সালে। বলিউড ছবি ‘নানহা শিকারি’ তাকে প্রথম সেই সুযোগ দেয়। এরপর কেটে যায় ২ টো বছর। ১৯৭৪ সালে হোসেনের ছবি ‘মদহোস’ এ কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে এর জন্য তাকে আগে রাহুল দেব বর্মনের থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট আনতে হয়। এরপরই তিনি বলিউডে ব্রেক পান।

১৯৭৫ সালে তিনি তাহির হুসেনের ‘জখমী’ সিনেমার জন্য কাজ করেছিলেন। এই ছবির গান সেই সময় ব্যাপক হিট হয়। বাপ্পি লাহিড়ীও জনপ্রিয়তা পান। এরপর তিনি তার কেরিয়ারে একাধিক রোমান্টিক, ভজন, কাউয়ালি, রাগাশ্রয়ী গানে নিজের দক্ষতা তুলে ধরেন। ৩৩ টি ছবির জন্য ১৮০টি গান রেকর্ড করার সুবাদে ১৯৮৬ সালে তার নাম ওঠে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে। ১৯৮৯ সালে জোনাথন রসের লাইভ পারফরম্যান্সে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। তার গান ‘জিমি জিমি’ ছিল আইকনিক। এই গান হলিউডের (You Don’t Mess With The Zohan’s) ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল।