চরম অর্থকষ্টে ভুগছেন মহিষাসুর, পেটের দায়ে কাজ করছেন গ্যারেজে

একসময় মহালয়ার দিন ভোরে টিভি খুললেই দূরদর্শনের (Durdarshan) মহালয়া (Mahalaya) অনুষ্ঠানে অসুরবেশে হাজির হতেন তিনি। তখন অবশ্য টিভিতে এতগুলি বাংলা চ্যানেল ছিল না। ছিল মহালয়ার দিন ভোরে উঠে রেডিওতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার প্রচলন এবং তারপর টিভিতে মহালয়া দেখার পালা। দূরদর্শন ছাড়া তখন মহালয়া দেখার কথা ভাবতেও পারতেন না কেউ। সেই দিনগুলিতে দূরদর্শনে অসুর সাজতেন অমল চন্দ্র চৌধুরী (Amal Roy Chowdhury)।

একসময় তার পেশীবহুল চেহারা, মোটা গোঁফ দেখলে ছোটরা শিউরে উঠতো। অসুররুপি অমল চন্দ্র চৌধুরীকে দেখলেই ভয়ে কাঁপতেন আট থেকে আশি। তাইতো তার নামই হয়ে গিয়েছিল ‘অমল অসুর’। অশোকনগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আজও তাকে সেই নামেই চেনেন। আজ ১০ বছর হয়ে গেল, ইন্ডাস্ট্রি থেকে আর ডাক পান না ‘অমল অসুর’। তবে একসময় দূরদর্শনের কাজ নিজে থেকে যেচে এসেছিল তার কাছে। প্রথমদিকে অভিনয় নিয়ে তেমন আগ্রহী ছিলেন না তিনি। তবে দূরদর্শনের দুই টেকনিশিয়ানের নজরে পড়ে গিয়েছিলেন। তার বিরাট আকারের চেহারাই হয়ে উঠেছিল তার ইউএসপি।

অসুরের অবতারে তিনি যে কতটা মানানসই, দূরদর্শনের মহালয়া তার প্রমাণ। তবে টলিউড থেকে দূরে আজ তার দিন কাটছে অন্ধকারে। একসময় টলিউডের প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন অমল চন্দ্র চৌধুরী। একের পর এক কাজ পেয়েছেন। ক্রমে অভিনয়ের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মে যায়। কিন্তু আজ আর তাকে মনে রাখেনি কেউ।

যখন তিনি অভিনয় করতেন, তখন তাদের সংসার চলত বেশ স্বচ্ছলভাবেই। আত্মীয়-পরিজনের আনাগোনাও লেগে থাকতো বাড়িতে। তবে ক্রমে টলিউডের সঙ্গে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। কাজের অভাবে তাই ভিন্ন পেশা বেছে নিতে বাধ্য হন অমল চন্দ্র চৌধুরী। সংসারে সদস্য বলতে কেবল দুজন। তিনি এবং তার দিদি। অমল চন্দ্র চৌধুরী যখন অভিনয় করতেন, তার দিদি সেই সময়ের শোলার কাজ করতেন।

যখন স্টুডিও পাড়ার দরজা ‘অমল অসুর’এর জন্য বন্ধ হয়ে গেল, তখন দিদির সঙ্গে শোলার কাজ শুরু করলেন অমলবাবু। হাতে তুলে নিলেন রং তুলি। সেই থেকে কষ্টে-সৃষ্টে দিন কাটছে তাদের। কোনওরকম সরকারি সহায়তাও পাননি। ভবিষ্যতে সংসার কিভাবে চালাবেন? সেই চিন্তা করেই আজকের এক একটা দিন কাটাচ্ছেন ‘অমল অসুর’ এবং তার দিদি।