ছোটতেই অনাথ, ভুগেছেন চরম অর্থকষ্টে! পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন শুনলে চোখে জল আসবে আপনার

Paran Bandopadhyay Life Story : সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে সুচিত্রা ভট্টাচার্য এমন অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যারা নিজের জীবনে সাফল্য পেয়েছেন মধ্য বয়স থেকে। কিন্তু আজ যার কথা বলবো তিনি নিজের জীবনের সাফল্য পেতে শুরু করেছেন জীবনের শেষ ইনিংস থেকে। আজ বলবো টলিউড (Tollywood) অভিনেতা পরান বন্দ্যোপাধ্যায় (Paran Bandopadhyay) -র কথা যিনি নিজের অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন ৬০ বছর বয়স থেকে। আজ আমরা জানবো পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের নানান অজানা কাহিনী।

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম জনপ্রিয় নাম হল পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। কমেডি হোক অথবা সিরিয়াস চরিত্র সর্বত্র তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। মীরাক্কেলের বিচারকের আসনে বসে থাকা পরান বাবুর মন্তব্য ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের ৮০ টা বসন্ত পার করে গেলেও আজও যেন তিনি মনের দিক থেকে একটি ফুরফুরে যুবক। তবে বাইরে থেকে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়কে যতই হাসিখুশি দেখা যাক না কেন, জীবনে তিনি পেয়েছেন বহু যন্ত্রণা।

Paran Bandopadhyay

১৯৪০ সালের ১৮ই অক্টোবর বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। জন্মের কিছু মাস পরেই মা প্রয়াত হন। স্ত্রীর মৃত্যুর শোক সহ্য না করতে পেরে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা হয়ে যান নিরুদ্দেশ। একটি সদ্যোজাত জীবন হয়ে ওঠে অনিশ্চিত। সেই সময় পরানের পিসি নিয়ে আসেন দমদমে এবং তারপর পুত্র স্নেহে তাকে বড় করতে শুরু করেন।১৪ বছর বয়স থেকেই অভিনয়কে ভালোবেসে নাটকে যোগদান করেছিলেন পরান।

অভিনয়ের পাশাপাশি অল্প উপার্জনও করতেন তিনি। সিটি কলেজ থেকে পাশ করার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। গণনাট্য আন্দোলনে থিয়েটারে অভিনয় করার পাশাপাশি কাজ করে গেছেন সমানে। থিয়েটারে কাজ করার জন্য হয়তো অনেক সময় এমনও হয়েছে তিনি অফিসে যেতে পারেননি সেক্ষেত্রে টাকাও কেটে নিয়েছেন অফিস থেকে।

Paran Bandopadhyay

এভাবে চলতে চলতে একদিন ভালোবেসে বিয়ে করলেন তিনি। সেই সময় যেহেতু ভালোবেসে বিয়ে করার চল ছিল না তাই বিয়ের প্রথম দিন থেকেই পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যান পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। স্ত্রী করতেন শিক্ষকতা কিন্তু পরান বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু অর্ধেক দিন কাজে যেতে পারতেন না তাই সংসার খরচ উঠে আসতো না সেই ভাবে। অভাব একসময় এমন ভাবেই দরজায় করা নেড়েছিল যে স্ত্রীর গয়না পর্যন্ত বেচে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। এতকিছুর পরেও পরান কখনো অভিনয় ছেড়ে দেবার কথা চিন্তা করেননি।

২০০০ সালে চাকরি থেকে পাকাপাকিভাবে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পরান বাবু। ঠিক সেই সময় মানিক বাবুর ছেলে সন্দীপ রায়ের চোখে পড়েন পরান। সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘সাধন বাবুর সন্দেহ’ গল্পকে পর্দায় তুলে ধরার জন্য একটি নতুন মুখ ছিলেন সন্দীপ রায়। সেই শুরু। সন্দীপ রায়ের হাত ধরে টেলিভিশনের পর্দায় হাতে খড়ি হয় পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এরপর ‘জন্মভূমি’ নামক একটি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয় করে সকলের নজরে আসেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন : শ্রাবন্তী তো কিছুই না, সর্বাধিক বিয়ে করে রেকর্ড করেছেন এই বলিউড অভিনেত্রী

Paran Bandopadhyay

আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন ভিক্টর ব্যানার্জী? বয়সের ভারে জীর্ণ অভিনেতার কীভাবে কাটছে দিন

২০০০ থেকে ২০১০ মাত্র ১০ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৫টি সিনেমায় অভিনয় করে ফেলেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। একসময় যে অভিনয়কে ভালোবেসে নিজের জীবনের সমস্ত কষ্ট সহ্য করতে রাজি হয়েছিলেন তিনি সেই অভিনয় শেষ জীবনে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল শতগুণ আনন্দ। প্রলয়, টনিক, যেখানে ভূতের ভয়, ভূতের ভবিষ্যৎ, সিনেমা হল, গয়নার বাক্স, ধনঞ্জয় সহ আরও বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। জীবনের শেষ দিনটাও যেন সৌমিত্র বাবুর মত অভিনয় করতে করতেই শেষ হয় এমনটাই কামনা করেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়।