কথা দিয়ে রাখেননি কথা, বিড়ি বেঁধে সংসার চালাচ্ছেন আমির খানের বন্ধুর স্ত্রী

সালটা ২০০৯। রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবি ঘিরে তখন সারা ভারতবর্ষ জুড়ে তোলপাড় চলছে। ছবি মুক্তির আগে জোর প্রচার চালাচ্ছে ছবি নির্মাতা সংস্থাও। প্রচারের ত্রুটি রাখছিলেন না ছবির নায়ক আমির খান (Aamir Khan), নায়িকা করিনা কাপুর। সারা দেশজুড়ে প্রচার চালাতে চালাতে তারা পৌঁছে গিয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের একটি গ্রামে। সেই গ্রামের এক সাধারণ তাঁত ব্যবসায়ী পরিবার সাধ্যমত আপ্যায়ন করেছিলেন বলিউড তারকাদের। বদলে মিলেছিল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি। তবে সাহায্যের প্রয়োজন যখন হল, আমিরের টিকিটিরও দেখা পাননি তারা।

মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি শহরের প্রাণপুর গ্রামের বাসিন্দা কমলেশের পরিবার কষ্টেসৃষ্টে তাঁত বুনে সংসার চালাত। আজ থেকে ১২ বছর আগে এই পরিবারে তারকাদের পায়ের ধুলো পড়ে। মধ্যপ্রদেশে প্রচার চালাতে গিয়ে কমলেশদের বাড়িতেই উঠেছিলেন আমির, করিনারা। তখন তাঁতে বোনা কাপড় বিক্রি করে কোনওমতে সংসার চালাতেন তারা। বাড়িতে তারকা অতিথিদের আগমনে ধন্য হয়ে গিয়েছিলেন কমলেশ, তার স্ত্রী কমলা বাঈ এবং ছেলে-মেয়েসহ গোটা পরিবারের সদস্যরা।

কমলার হাতে তৈরি রুটি-তরকারি তৃপ্তি করে খেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন তারকারা। যাওয়ার আগে অবশ্য গোটা পরিবারকে আসন্ন ছবির প্রিমিয়ারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে গিয়েছিলেন। যাতায়াতের খরচ আমির নিজে বহন করার কথা বলেছিলেন। ফিরে যাওয়ার আগে আমির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কমলেশের রোজগার বাড়াতে মুম্বাইয়ের একটি শো রুম খুলবেন তিনি। সেখানে কমলেশ এবং তার গ্রামের তাঁত শিল্পীরা নিজেদের হাতে বোনা শাড়ি বিক্রি করতে পারবেন। তারা চাইলে আমির এবং করিনার নাম ব্যবহার করতে পারবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন আমির।

শুধু তাই নয়, কমলেশের থেকে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের দুটি শাড়িও কিনেছিলেন আমির। সেখান থেকে একটি উপহার দেন করিনাকে। কমলেশকে বন্ধু বলে কাছে টেনে নিয়ে ‘এ কে’ আদ্যক্ষর খোদাই করা একটি আংটিও উপহার দিয়েছিলেন। যেকোনও প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য ফোন নম্বরও দিয়ে গিয়েছিলেন। আমির খানের থেকে দরাজ হয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন এই গরিব পরিবারের সদস্যরা। তারপর দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে ১২টা বছর। এতগুলি বছরের মধ্যে বন্ধুর একটি খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি আমির। মুম্বাইয়ের শোরুম খোলা তো দূরের কথা, আমিরের দেওয়া ওই নাম্বারে ফোন করলেও সেই ফোন কেউ তোলেননি। যখন এই পরিবারের সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল, তখন বন্ধুর পাশে দাঁড়াননি আমির খান।

২০২০ সালে সারা দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। ২০২১ এ করোনা আক্রান্ত হন খোদ কমলেশ। বিপর্যয় আরও বাড়ে যখন তার মৃত্যু হয়। পরিবারের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যায়। কমলেশের স্ত্রী কমলা স্বামীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারেননি। অর্থাভাবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়েছে। কমলা যেহেতু নিজে তাঁত বুনতে পারেন না তাই বিড়ি বেঁধে কোনওমতে সংসার চালাচ্ছেন। তবে এখনও এই পরিবার আমিরের থেকে সাহায্যের প্রত্যাশায় দিন গোনে। আশা করে, একদিন হয়তো ওই অকেজো ফোন নাম্বার থেকে একটা ফোন আসবে। সাহায্যের হাত ফের বাড়িয়ে দেবে আমির।