ভারতীয় সংগীতকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন তেমনই একজন গায়ক হলেন উদিত নারায়ণ (Udit Narayan)। দীর্ঘ বেশ কয়েক দশক ধরে তিনি বলিউড (Bollywood) ইন্ডাস্ট্রিকে তার গানের সুরে মোহিত করে রেখেছেন। এই আধুনিক যুগে নতুন নতুন তারকাদের ভিড়ের মাঝেও উদিত নারায়ণের কিন্তু আকাশছোঁয়া। তবে প্রত্যেক সফলতার পেছনে কোনও না কোনও ব্যর্থতার কাহিনী লুকিয়ে থাকে। সফল ব্যক্তিরা সেই ব্যর্থতাকেই কীভাবে নিজেদের শক্তিতে পরিণত করেন সেই গল্প বেশ অনুপ্রেরণা দেয়। যেমনটা করেছিলেন উদিত নারায়ণও।
১৯৯৫ সালে ১লা ডিসেম্বর বিহারে জন্ম হয়েছিল উদিত নারায়ণের। তার পুরো নাম হল উদিত নারায়ণ ঝা। আজ তাকে গোটা বিশ্ব চেনে। তবে একটা সময় ছিল যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চরম সংগ্রাম করতে হয় তাকে। ১৯৭০ সালে নেপালের রেডিও অনুষ্ঠানে একজন লোকশিল্পী হিসেবে শুরু হয়েছিল উদিত নারায়ণের কেরিয়ার।
সেখান থেকেই নেপালি ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ছবির নাম ছিল ‘সিঁদুর’। তবে এই ছবিতে গান গেয়ে খুব একটা পরিচিতি পাননি তিনি। এরপর এক দীর্ঘ সময়ের জন্য তার স্ট্রাগল শুরু হয়। তার জীবনে এই সংগ্রামকালের স্থায়িত্ব ছিল ১০ বছর। এই দশটা বছর তিনি বিভিন্ন ছোটখাট অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন। এমনকি সংসার চালাতে হোটেলে গান গাওয়ার পাশাপাশি অনেক ধরনের কাজ তাকে করতে হয়েছিল।
তবে কঠোর সংগ্রাম এবং পরিশ্রমের ফল তিনি পেয়েছিলেন। দেরিতে হলেও উদিত নারায়ণের জীবন ঘুরিয়ে দেয় একটি ভোজপুরী গান। এই ছবির গান গাওয়ার সময় তার সঙ্গে আনন্দ-মিলিন্দের যোগাযোগ হয়। তার গানের গলা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বলিউডের সেই দুই তারকা গায়ক। তারাই তাকে প্রথম বলিউড ছবিতে গানের সুযোগ দেন। ছবির নাম ছিল ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’। আর উদিত যে গানটি গেয়েছিলেন তার নাম ছিল ‘পাপা কেহতে হে’।
এই ছবি যেমন সুপারহিট হয়েছিল, তেমনই উদিত নারায়ণের কন্ঠে ‘পাপা কেহ তে হে’ গানটিও শ্রোতাদের মধ্যে দারুণ সাড়া যুগিয়েছিল। তাই এই গান গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাতারাতি তারকা হয়ে যান তিনি। তারপর আর তাকে ঘুরে তাকাতে হয়নি। সাফল্য নিজে এসে ধরা দিয়েছিল তাকে। পর পর ছবিতে কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরেও তার জীবনে অনেক বড় একটা স্ট্রাগল পিরিয়ড গিয়েছিল। এতে তিনি এতটাই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মত ভাবনাও এসেছিল এই সফল শিল্পীর মাথায়।
করণ জোহরের ছবি ‘কুছ কুছ হোতা হে’ ছবিতে গান গাওয়ার পর উদিত নারায়ণের জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে। ঠিক এরপর থেকেই তার কাছে আসতে শুরু করে হুমকি ফোন। ১৯৯৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার কাছে এই ফোন এসেছিল একটানা। একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন কেউ হয়তো তাকে মেরে ফেলার সুপারি দেয়। এতে তিনি এতটাই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।
উদিত নারায়ণের ব্যক্তিগত জীবন কিন্তু বেশ রঙিন। প্রথমবার তিনি বিয়ে করেছিলেন রঞ্জনা নারায়ণ ঝাকে। এরপর তিনি বিয়ে করেন দীপা নারায়ণকে। একবার তিনি তার প্রথম বিয়ে অস্বীকার করেন। সেই সময় তার প্রথম স্ত্রী রঞ্জনা কোর্টে গিয়ে তাদের বিয়ের ছবি দেখিয়ে দেন। এতে বেশ বিপাকে পড়ে যেতে হয়েছিল গায়ককে। তাই শেষমেষ তাকে সবকিছু স্বীকার করে নিতে হয়।