ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নষ্ট জীবন! শোলের ‘গব্বর সিং’ এর পরিণতি শুনলে কান্না পাবে

গব্বর সিং, ৯০ এর দশকে এই নামটা শুনলেই শিউরে উঠত বাচ্চা থেকে বড় সবাই। আসলে বলিউডের ‘শোলে’ সিনেমাটির এই দাপুটে খলনায়কের চরিত্রটির রেশ কেবল পর্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাস্তবেও গব্বরের নাম শুনলে চমকে উঠতেন সকলে। বলিউডের সবথেকে ভয়ংকর খলনায়কের এই চরিত্রটিকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন আমজাদ খান (Amjad Khan)। আজ আপনাদের শোনাব সেই অভিনেতার বাস্তব জীবনের কাহিনী। যা কোনও সিনেমার থেকে কিছু কম ছিল না।

১৯৪০ সালের ১২ ই নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের পেশোয়ারে জন্ম গ্রহণ করেন আমজাদ খান। তার পিতা জয়ন্ত খান সিনেমাতে অভিনয় করতেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘নাজনীন’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন আমজাদ। এর পাশাপাশি তিনি থিয়েটার করতেন এবং স্কুলের পড়াশোনাও চালাচ্ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ সিনেমাতে অভিনয় করেন আমজাদ। কিন্তু তার এই সিনেমাটি তেমন চলেনি।

Amjad Khan

১৯৭৫ সালে মুক্তি পায় শোলে সিনেমাটি। পরিচালক রমেশ সিপ্পি একটি নাটকে আফ্রিকান চরিত্রে আমজাদ খানের অভিনয় দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি তাকেই গব্বর সিং হিসেবে নির্বাচন করে ফেলেন। বলা হয় গব্বরের চরিত্রটি ‘শোলে’র জনপ্রিয়তার পেছনে অন্যতম কারণ। এই একটি সিনেমাতে অভিনয় করার পর আর পেছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি আমজাদ খানকে। বলা হয় বহু যুগ পর্যন্ত সিনেমার গব্বরের ভয় দেখিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতেন মায়েরা। সিনেমার গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে এই চরিত্রটি এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে সেই সময় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও গব্বর ছিলেন মুখ। বিশেষ করে ব্রিটানিয়া গ্লুকোজ ডি বিস্কুটের বিজ্ঞাপনটি আজও ভোলার নয়, যেখানে দেখানো হয় গব্বর তার সঙ্গীদের মেরে ফেলছেন অন্য বিস্কুট আনার জন্য। তারপর অর্ধেক প্যাকেট বিস্কুট তিনি একসঙ্গে মুখে পুরে ফেলেন।

এরপর একের পর এক সিনেমাতে অভিনয় করতে শুরু করেন আমজাদ খান। সিনেমার পর্দায় তাকে যতই ভয়ঙ্কর ভিলেন হিসেবে দেখানো হোক না কেন বাস্তবে তিনি কিন্তু খুবই ভালো মনের মানুষ ছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি তার স্কুলের বান্ধবী শায়লাকে বিয়ে করেন। তাদের প্রেমকাহিনীও ছিল সিনেমার মত। সময়টা বেশ ভালোই কাটছিল আমজাদ খানের। তিনি অ্যাক্টরস গিল্ডের সভাপতি হয়ে ওঠেন।

Amjad Khan

‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’, ‘ইয়ারানা’, ‘বরসাত কি এক রাত’, ‘দেশ পরদেশ’, ‘নাস্তিক’, ‘সত্তে পে সত্তা’, ‘দাদা’, ‘লাওয়ারিস’, ‘গঙ্গা কি সৌগন্ধ’, ‘হম কিসিসে কম নেহি’ থেকে শুরু করে সত্যজিৎ রায়ের ‘নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ’, গিরিশ কারনাডের ‘উৎসব’ ইত্যাদি একাধিক সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। কিন্তু এরপরই ঘটে যায় অঘটন।

১৯৭৬ সালে ‘দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার’ সিনেমার শুটিংয়ের জন্য যাচ্ছিলেন আমজাদ খান। গাড়িতে তখন তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীও ছিলেন। গাড়ি চালাতে গিয়ে ক্ষণিকের ভুলে বড়সড় অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে যায়। গাড়ির স্টিয়ারিং আমজাদের বুকের মধ্যে ঢুকে ফুসফুস ভেদ করেছিল। তার স্ত্রী শায়লার পাঁজরের হাড় ভেঙে যায়। থেঁতলে গিয়েছিল মুখ। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় তাদের অনাগত সন্তানের কোনও ক্ষতি হয়নি। সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন শায়লা।

আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন অমৃতা রাও? এখন কেমন দেখতে হয়েছে তাকে?

Amjad Khan

আরও পড়ুন : বলিউডে আসার আগে সেলসম্যান ছিলেন এই বলিউড তারকারা

আর আমজাদ খান? তিনি চলে গিয়েছিলেন কোমায়। বহুদিন লেগেছিল তার সুস্থ হয়ে উঠতে। ওষুধের প্রভাবে তার ওজন বেড়ে গিয়েছিল। অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আজীবন স্টেরয়েড নিতে হয়েছে তাকে। এর ফলে তিনি অনেক বেশি মোটা হয়ে যান। তখন ভিলেনের চরিত্র ছেড়ে তাকে কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। ততদিনে বাজার কাঁপাচ্ছিলেন ওমরেশ পুরী। দুর্ঘটনার প্রভাবে আমজাদ খান কোনওদিনই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে মাত্র ৫১ বছর বয়সে হার্ট এটাকে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তার মৃত্যু হলেও গব্বরের চরিত্রটি অমর। গব্বরের সেই ‘কিতনে আদমি থে?’, ‘ইয়ে হাথ মুঝে দে দে ঠাকুর’, ‘জো ডর গয়া, সমঝো মর গয়া’ আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।