চারিদিকে যখন ঠান্ডার আবহাওয়া তখন কৃষ্ণনগরের আবহাওয়া রীতিমতো গরম। গতমাসে শাসক দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অপরাধে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে তাপস পালের (Tapas Paul) স্ত্রী নন্দিনী পাল (Nandini Paul) এবং কন্যা সোহিনী পালকে (Sohini Paul), সম্প্রতি বাড়িতে পুলিশ ডেকে এনে এমনই অভিযোগ জানলেন তারা। ঠিক কী ঘটেছিল? শাসক দল তৃণমূলের (Trinamool Congress) বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ এনেছেন নন্দিনী ও সোহিনী?
নন্দিনীর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক
মহুয়া মৈত্রের বিতর্ক চলাকালীন নিজের ফেসবুক দেওয়ালে একটি লম্বা পোস্ট করেছিলেন তাপস পালের স্ত্রী। তাপস পাল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে শুরু করে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি কার কার কাছে সাহায্যের আবেদন করেছিলেন এবং কোথায় কোথায় তিনি ধাক্কা খেয়েছিলেন পুরোটাই ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন নন্দিনী। সব থেকে বড় কথা, এই তালিকা থেকে তিনি বাদ দেননি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও (Mamata Banerjee)। তৃণমূল কংগ্রেস তাপস পালের স্টারডমকে শুধু ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেন নন্দিনী।
শাসক দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন সোহিনী পাল
তাপস পালের কন্যা সোহিনী পাল বলেন, “মলয় ঘটকের অফিসে গিয়ে শুনতে পাই উনি বলছেন, বলো আমি নেই।” অরূপ বিশ্বাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ” মুম্বাই থেকে যখন বাবার দেহ কলকাতায় নিয়ে আসি তখন অরূপ বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে ছিলেন। পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে মায়ের ফোন নাম্বার ব্লক করে দেন তিনি। আমাদের সাথে কেন এমন ভন্ডামি করা হলো? ”
কেন হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে তাপস পালের পরিবারকে?
গোটা বিষয়টি নিয়ে এবিপি আনন্দকে নন্দিনী পাল বলেন, “কাজের লোক আসছে না। অসহযোগিতা করা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে। দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছি। একটা সময় ও যাদের জন্য কাজ করেছে, তারাই এসব করছেন। শাসকের ইন্ধন ছাড়া কে আর এই কাজ করবে? ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছি না তাই। এক মন্ত্রীকে ফোন করেছিলাম অভিযোগ জানানোর জন্য। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। আমি আর মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ব্রিটিশ আমল, বাম আমল ভালো ছিল। শিরদাঁড়া বেঁচে এই দল করতে হয়। আমি ভেঙে পড়েছি। গোটা বিষয়টি কুনাল ঘোষকে জানিয়েছি কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি।”
চরম অর্থকষ্টে ভুগছেন তাপস পালের স্ত্রী ও কন্যা
প্রসঙ্গত, গত বছর হঠাৎই একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাপস পালের স্ত্রী জানিয়েছিলেন তাদের অর্থের ভীষণ দরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁকা দুটি ছবি বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। সিঙ্গুরে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় ওই ছবি দুটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভালোবেসে তাপস পালকে দিয়েছিলেন। ছবি দুটি বিক্রি করার পাশাপাশি নিজেদের অর্থ কষ্টের কথা সংবাদমাধ্যমের সামনে জানিয়েছিলেন নন্দিনী।
আরও পড়ুন : টাকার অভাবে চলছে না সংসার! কীভাবে দিন কাটছে তাপস পালের স্ত্রী-কন্যার
আরও পড়ুন : স্ট্রাগল না করে স্টার হওয়াই কাল হল! তাপস পালকে নিয়ে বোমা ফাটালেন চিরঞ্জিত
তাপস পাল একজন দুর্দান্ত অভিনেতা হলেও মৃত্যুর কয়েক মাস আগে রাজনীতির মঞ্চে বিতর্কিত কিছু মন্তব্য করে সমস্যায় পড়ে যান। “আমি চন্দননগরের মাল”, “ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেবো” এই দুটি কথা তাপস পালের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কলঙ্ক হয়ে থেকে যায়। পরে রোজভ্যালি মামলায় অভিনেতা তথা রাজনীতিবিদ তাপস পালের জেল হেফাজত হয়। মৃত্যুর আগে নিজের বলা কথার জন্য বারবার ক্ষমা চাইলেও তাপস পালের সঙ্গ দেননি কেউ।