ফেডারেশন এবং পরিচালক গিল্ড উভয়ের সংঘাত মাঝেমধ্যেই আসে প্রকাশ্যে। তবে এবার যেন তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে ব্যান করা প্রসঙ্গে টেকনিশিয়ান ফেডারেশন এবং পরিচালক গিল্ডের মধ্যে সংঘাত তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় অবশেষে কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে বটে। কিন্তু এই সমস্যা চিরস্থায়ী। টলিউডে (Tollywood) ফেডারেশনের দাপট চলে। আর তাতেই নাকি একের পর এক কাজ হাতছাড়া হচ্ছে।
আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে প্রযোজক-পরিচালকরা তুলে ধরেছেন টলিউডের বর্তমান অবস্থা। এমন নিয়ম নাকি দেশের আর কোথাও নেই। একতরফাভাবে দাদাগিরি চালিয়ে আসছে ফেডারেশন এমনটাই অভিযোগ। এমন কিছু নিয়ম বানিয়েছে তারা যার অন্যথা হলেই উঠছে আন্দোলনের ডাক। আবার সেই নিয়ম মেনে কাজও করতে পারছেন না নির্মাতারা।
পরিচালক, প্রযোজকদের একাংশ ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের কায়দায় কলাকুশলী সংগঠন ব্যবহার করার অভিযোগ তুলছেন। অভিনেতার সংখ্যা এক-দুজন বাড়লেই বাড়তি হেয়ার ড্রেসার, মেকআপ শিল্পী নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ফেডারেশনের ইচ্ছেমতো সহকারি পরিচালক নিতে হবে। ট্রলি দরকার না পড়লেও ট্রলি বসানোর জন্য কলা কুশলী নিতে হবে। বিদেশে শুটিং করতে গেলেও ফেডারেশনের নির্দেশ মতো কলাকুশলী নিয়ে যেতে হবে। তা সে প্রয়োজন পড়ুক বা না পড়ুক। আর এভাবেই বাড়তি চাপ বাড়ে প্রযোজকদের উপরে।
বাংলাদেশের ওটিটি মাধ্যম চরকির বেশ কিছু প্রজেক্টের শুটিং হওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। কিন্তু ফেডারেশনের নিয়মের ফাঁদে পড়ে চরকি কর্তারা বেশ বুঝেছেন যে এখানে কাজ করতে হলে অনেক বেশি টাকা দিতে হবে। তা না হলে টলিউডে এখন অন্তত ছয়-সাত টা প্রজেক্টের শুটিং চলতো সবসময়। বাড়তি ৬০০ থেকে ৭০০ জন কলাকুশলী কাজের সুযোগ পেতেন।
ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান এন্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার নিয়ম অনুসারে এখানে হিন্দি ছবি তৈরি করতে হলে শুটিংয়ের বিভিন্ন খাতে দ্বিগুণ টাকা দিতে হবে। শুধুমাত্র এই কারণেই বলিউডের ‘বরফি’ ছবির শুটিং বাংলায় মাঝপথে থামিয়ে মুসৌরিতে করতে হয়েছিল। ইংরেজি কাজ হলে চার গুণ বেশি টাকা দিতে হবে। এমনকি বাংলাদেশের প্রজেক্টে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে বাংলাতে কাজ হলেও বিদেশী বলে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন : বাংলা সিরিয়ালের সেরা নায়ক কে? নামটা না শুনলে বিশ্বাস হবে না
আরও পড়ুন : বন্ধ সব সিরিয়ালের শুটিং, মাত্র এই কদিনই দেখতে পাবেন নতুন এপিসোড
আজ থেকে নয়, টলিউডে এই সমস্যা বিগত ১০-১২ বছর ধরে চলছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষগুলোর উপরেও চলে ফেডারেশনের দাদাগিরি। টিভিতে এবং ওটিটিতে একসঙ্গে দুই জায়গায় ধারাবাহিক দেখানোর ক্ষেত্রে বাজেট বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস হলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই। মঙ্গলবার পরিচালকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের সময় মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর শুটিং শুরু হলেও এর জল যে আগামী দিনে কতদূর গড়াবে সেই বিষয়ে সন্ধিহান নির্মাতারা।