‘আরাধনা’ থেকে ‘অমর প্রেম’, ‘ত্যাগ’ থেকে ‘সফর’, ৮০ এর দশকে একের পর এক হিট ছবি দিয়েছে শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore) এবং রাজেশ খান্নার (Rajesh Khanna) জুটি। তাদের উপস্থিতি মানেই তখন সিনেমা হিট। কিন্তু হঠাৎই একদিন ঘটে গেল ছন্দপতন। শর্মিলা ও রাজেশ খান্নার একটি ছবিও আর মুক্তি পেল না বলিউডে। রাজেশ খান্নার সঙ্গে ছবি করতে হঠাৎ বেঁকে বসলেন শর্মিলা। কেন জানেন?
সালটা ছিল ১৯৬৯। ওই বছর বলিউডের সেরা ছবি হয়েছিল ‘আরাধনা’। রাজেশ খান্না এবং শর্মিলা ঠাকুরের জুটি দেখে কার্যত পাগল হয়েছিলেন দর্শকরা। হিন্দি, বাংলা সব ভাষাতেই সুপারহিট ‘আরাধনা’। রাজেশ-শর্মিলার কেমিস্ট্রিতে বুঁদ গোটা ভারত। সেই থেকেই শুরু। পরপর বেশ কয়েকটি সিনেমা করেন রাজেশ খান্না এবং শর্মিলা ঠাকুর। কী এমন হল যার ফলে বলিউডের প্রথম সুপারস্টারের সঙ্গে আর কাজ করতেই চাইলেন না শর্মিলা?
রাজেশ খান্নার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে একটি অডিও বুক তৈরি হয়েছিল। যার নাম ছিল ‘রাজেশ খান্না : এক তনহা সিতারা’, শর্মিলা ঠাকুর এই অডিও বুকেই ফাঁস করেছিলেন আসল রহস্য। জানিয়েছিলেন রাজেশের সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার আসল কারণ। আসলে রাজেশ খান্না ছিলেন বলিউডের প্রথম সুপারস্টার। একজন সুপারস্টার তিনিই শুধুমাত্র যাকে দেখার জন্য ভক্তরা হলে ভিড় করেন। না ছবি, না ছবির গল্প, না পরিচালনা, না নির্দেশনা, না নায়িকা, না নাচ-গান, এসব কিছু নিয়েই তখন দর্শকদের মাথাব্যথা থাকে না। তেমনই একজন অভিনেতা ছিলেন রাজেশ খান্না। যার উপস্থিতিতে সিনেমা হিট হত। যাকে এক নজর দেখার জন্য পাগল ছিল গোটা ভারত। এইজন্যই তিনি ছিলেন সুপারস্টার। আর এই কারনেই নাকি শর্মিলা তার সঙ্গে কাজ করতে চাননি।
সুপারস্টার হওয়ার দরুণ রাজেশ খান্নার স্বভাবে বেশ কিছু খারাপ দিকও ছিল। সব থেকে বড় ব্যাপার ছিল তার শুটিংয়ে দেরি করে আসার স্বভাব। কল টাইমের ৩-৪ ঘন্টা দেরি করে তিনি শুটিংয়ে পৌঁছতেন। সেটে সবাই উপস্থিত হয়ে গেলেও নায়কের দেখা মিলতো না। আবার পরিচালক বা প্রযোজকরাও তাকে কিছু বলার সাহস পেতেন না। এর ফলে প্রযোজকদের যেমন ক্ষতি হত, বাকিরাও বিরক্ত হতেন। কিন্তু রাজেশকে মুখে কিছু বলার সাহস কারও ছিল না।
অন্যদিকে শর্মিলা ছিলেন কঠোরভাবে সময়ানুবর্তি ও নিয়মানুবর্তি। রাত ৮ টার মধ্যে তাকে বাড়ি ফিরতেই হত। ৯ টাই শিফট থাকলে রাজেশ খান্না কোনদিনই ১২ টার আগে এসে পৌঁছতেন না। যার ফলে সময়ে কাজ শেষ হত না। শর্মিলার উপর বাড়তি সময় কাজ করার চাপ আসতো। যেটা অভিনেত্রী একেবারেই মানতে পারেননি। তাই তিনি একটা সময়ের পর রাজেশ খান্নার সঙ্গে আর কাজ করতে চাইতেন না। আর তাছাড়া রাজেশ খান্নাও নাকি পরপর একই নায়িকার সঙ্গে ছবি করতে চাইতেন না। এইসব কারণের জন্য বলিউড অন্যতম এক সেরা জুটিকে অকালেই হারিয়ে ফেলল।
আরও পড়ুন : এই বলিউড নায়িকার জন্য স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলেন কুমার শানু! কে সেই সুন্দরী?
আরও পড়ুন : শ্বশুরবাড়িতে অশান্তির কারণ! শাশুড়িদের দুচোখের বিষ এই বলিউড নায়িকারা
তবে একটা সময় পর কিন্তু রাজেশ খান্নার এই স্টারডমও আর রইল না। ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন নতুন মুখের আবির্ভাব হতে লাগলো। রাজেশের জায়গা নিলেন অমিতাভের মত তারকারা। আর রাজেশ খান্নাও চলে যেতে থাকলেন ব্যাকফুটে। তার হাতে ছবির সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকল। ২০১১ সালে তার ইন্টেস্টাইনাল ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১২ সালের জুলাই মাসেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে রাজেশ খান্নার বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৯ বছর।