কোথায় হারিয়ে গেলেন ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ (Beder Meye Josna) অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ (Anju Ghosh)? চিরঞ্জিত চক্রবর্তী অভিনীত টলিউডের এই সিনেমাটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি সিনেমা। যেখানে চিরঞ্জিতের নায়িকা ছিলেন বাংলাদেশী অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। তবে শুধু ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’ নয়, টলিউডের আরও অনেক অভিনেতার সঙ্গে একাধিক সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন অঞ্জু। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ইন্ডাস্ট্রি থেকে হারিয়েও গেলেন তিনি। ঢালিউড (Dhallywood) এবং টলিউড কাঁপানো সেই নায়িকাকে এখন দেখলে চিনতেই পারবেন না।
কলকাতা এবং বাংলাদেশ কাঁপানো নায়িকা অঞ্জু ঘোষের আসল নাম অঞ্জলি। তিনি প্রায় ৩৫০ টিরও বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। টলিউড অভিনেতাদের মধ্যে তিনি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী, চিরঞ্জিত চক্রবর্তী, তাপস পালদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। বাংলাদেশের পাশাপাশি টলিউডেও তার প্রচুর সিনেমা হিট হয়েছিল। বিশেষ করে পারিবারিক সিনেমাতে অঞ্জুর অভিনয় প্রত্যেকের মনে দাগ কাটতো। আজও ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’ নামে সবাই এক ডাকে তাকে চেনেন। এই সিনেমা সেই সময়কালে দাঁড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা আয় করেছিল। যা বর্তমান সময়কালে অনায়াসে ১৫০ কোটির গণ্ডি পার করে যাবে।
এক সময় অঞ্জু ছিলেন বাংলা সিনেমার লক্ষ্মী। তিনি যে ছবিতেই থাকতেন, সেটাই সুপারহিট হত। প্রযোজকরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করতেন তাকে। তারা জানতেন অঞ্জু ছবিতে থাকা মানেই লগ্নি করা টাকা ঘরে ফিরবেই। আর অঞ্জুও দায়িত্ব সহকারে ছবি রিলিজের পর দর্শকদের থেকে টাকা ঠিকই তুলে আনতেন। বাংলাদেশের সবথেকে সফল ছবি ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’ ছিল তার কেরিয়ারের অন্যতম মাইলস্টোন। এছাড়াও তিনি যত সিনেমা করেছেন পরবর্তীকালে, সব সুপারহিট হয়েছে।
কিন্তু একটা সময় পর অঞ্জু গ্ল্যামার দুনিয়া থেকে সরে যেতে শুরু করেন। ৯০ এর দশকের এই অভিনেত্রী বহুবছর কাজ করেননি সিনেমাতে। ২০১৮ সালে তিনি শেষবার ‘মধুর ক্যান্টিন’ নামের একটি সিনেমা করেন। কিন্তু ওই শেষ। এরপর তাকে আর কখনও ক্যামেরার সামনে। এখন তার চেহারাতেও অনেকখানি বদল এসেছে। এক নজরে দেখলে অঞ্জু ঘোষকে এখন অনেকেই চিনতে পারবেন না।
এছাড়াও জাতিভেদের শিকার হতে হয়েছিল বাংলাদেশের এই সুন্দরী নায়িকাকে। একটি সাক্ষাৎকারে অঞ্জু নিজেই আফসোস করে জানিয়েছিলেন, “জাতি-জাতি করে একটা হিড়িক উঠেছিল–ও হিন্দু, ও মুসলমান! আমি এর মধ্যে পড়তে চাইনি। কেরিয়ারে ৩৫০ ছবিতে অভিনয় করেছি। তার মধ্যে ২০০টা ছবি ছিল বাংলাদেশের। হিন্দুর বাড়ির মেয়ে হয়েও সেই ২০০টা ছবিতেই কলমা পড়ে অভিনয় করেছি। সেজেছি মুসলমানের বেটি। কিন্তু বাংলাদেশ আমাকে বলল হিন্দুর বেটি। অন্যদিকে এখানে যখন এলাম আমার গোটা প্রেজ়েন্টেশন দেখে ভারত বলল আমি মুসলমানের বেটি। ফলে হল কী, আমি ওপারে সংখ্যালঘু, এপারেও সংখ্যালঘুই থেকে গেলাম।” মনে খুবই আঘাত লেগেছিল তার। তিনি বলেছিলেন, “ওপারে যখনই আমাকে ‘হিন্দুর মেয়ে’ কথাটা বলল, হিন্দু-মুসলমানের এত তফাত করে দিচ্ছিল, যে মনটা আমার ভেঙে গেল। আমি শিল্পী, তাই না। আমার তো কোনও জাতি নেই। আমার পরিচয় আমি কেবলই একজন শিল্পী।”
আবার অঞ্জু টলিউডে যখন আসতেন, তখন এপার বাংলার মানুষেরা তাকে বলতেন ‘মুসলমানের বেটি’। অঞ্জুর চেহারা নিয়েও খোঁটা দেওয়া হয় তাকে। আসলে বাংলাদেশের নায়িকারা কলকাতার নায়িকাদের মত অতটা ছিপছিপে নয়। তাই সহ শিল্পীর থেকে তাকে শুনতে হয়েছিল, ‘’বাংলাদেশের সব কিছুই বড় বড়।” এই কথা একেবারেই ভালো লাগেনি তার। তাই ইন্ডাস্ট্রির প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণায় অঞ্জু অভিনয় ছেড়েই দেন।
আরও পড়ুন : ছোট হাতি থেকে মুটকি! মোটা হওয়ায় রোজ খোঁটা শোনেন টলিউডের এই নায়িকারা
আরও পড়ুন : বাংলা ছবির এই অভিনেত্রী দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের নাতনি
অঞ্জুর প্রসঙ্গে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার সঙ্গে যখন অঞ্জু কাজ করেছিলেন তাঁর খুবই ডিমান্ড ছিল। কিন্তু এটা সত্যি এখানকার লোকজনের মনে হয়েছিল, তিনি হিন্দু টাইপ নন। কথাবার্তা, চালচলনের মধ্য়ে মুসলমান ছাপ ছিল। বাংলাদেশের নিজস্ব একটা ছাপ থেকে শিল্পীদের শরীরে। সেটা অঞ্জুর মধ্যেও ছিল। অনেক বড় স্টার ছিলেন তিনি। ফলে সেই কারণে তাঁর সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে একটা কুণ্ঠাভাব চলে এসেছিল ইন্ডাস্ট্রির অনেকের মধ্যে।”