বাংলার স্বর্ণযুগের গায়িকা তিনি। তার কন্ঠে অসংখ্য সুপারহিট গান রয়েছে যেগুলো আজও বাঙালি শ্রোতাদের মন ভরিয়ে তোলে। একসময় বাংলার গায়িকা আরতি মুখোপাধ্যায় (Aarti Mukherji) টলিউডের (Tollywood) গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বলিউডেও (Bollywood)। কিন্তু সেখানে তার গানের জাদু সমকালীন সময়ের বলিউড শিল্পীদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ফিরে আসতে হয় আরতিকে।
তখন তোমার একুশ বছর, লাজে রাঙা হল কনে বউ গো, মাধবী মধুপে হল মিতালী, এক বৈশাখে দেখা হল দুজনার, আমি মিস ক্যালকাটার মত অসংখ্য সুপারহিট গান গেয়েছেন আরতি। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় গায়িকা। বাংলা থেকে তিনি অনেক সম্মান পেয়েছেন। বলিউড থেকেও তার আরও সম্মান পাওনা ছিল। কিন্তু পক্ষপাতিত্ব আর ষড়যন্ত্র তার কাছ থেকে অনেক সুযোগ ছিনিয়ে নেয়।
আরতি মুখোপাধ্যায় খুব ছোটবেলা থেকেই গানের পরিবেশের মধ্যে মানুষ হয়েছিলেন। তার বাবা এবং মা দুজনেই ভাল গান গাইতেন। খুব ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছিলেন আরতি। মা ছিলেন তার প্রথম সঙ্গীতগুরু। পুজোর সময় জামার বদলে ৩০০ টাকা দিয়ে তানপুরা উপহার দিয়েছিলেন তার দিদিমা। সেই থেকে শুরু হয় সংগীত জগতে তার যাত্রা।
আরতি মুখোপাধ্যায় সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গান শিখেছিলেন। এরপর তিনি চেতলার আদি শাস্ত্রীয় সংগীত প্রতিযোগিতা মুরারি সংগীত সম্মেলনে জয় লাভ করেন এবং সেখান থেকে শুরু হয় তার কেরিয়ার। ‘মামলার ফল’ ছবিতে তিনি প্রথম প্লেব্যাক করেন। তাকে আর এরপর ঘুরে তাকাতে হয়নি। সুচিত্রা সেন থেকে শুরু করে অপর্ণা সেন, সুপ্রিয়া দেবীর হয়ে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি।
আরতি পরবর্তী দিনে দেবশ্রী রায়, শতাব্দী রায়ের মত নায়িকাদের লিপেও গান গেয়েছিলেন। তিনি বিয়ে করেন গীতিকার সুবীর হাজরাকে। কিন্তু তার প্রথম বিয়ে সুখের হয়নি। স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে তিনি বম্বে পাড়ি দেন। মুম্বাইতে গিয়ে লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলেদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন আরতি। তাকে সেখানে ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি কেউ। এমনকি তার খাবারে বিষ মিশিয়ে তার গলা নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছিল।
বলিউডে একের পর এক গানের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ‘উপর মহলের চাপে’ তার হাত থেকে সব সুযোগ বেরিয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনেও তখন ঝড় চলছিল। প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর মায়ের অনুরোধে এক গুজরাটি পরিবারে ফের বিয়ে করেন গায়িকা। কিন্তু সেখানেও তিনি সুখে থাকতে পারেননি। বর্তমানে গানের জগত থেকে সরে গিয়ে তিনি তার ছেলে সোহমকে নিয়ে একাই দিন কাটাচ্ছেন।