সিধু মুসেওয়ালা থেকে বাবা সিদ্দিকী, একের পর এক হাইপ্রোফাইল মার্ডারের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের (Lawrence Bishnoi)। সালমান খান (Salman Khan) অনেকদিন ধরেই তার হিটলিস্টে আছেন। বেশ কয়েকবার তার উপর হামলাও চালায় বিষ্ণোইয়ের গ্যাং। বাবা সিদ্দিকীর খুনের দায় স্বীকার করে সালমান খানকে আরও একবার খুনের হুমকি দিয়েছে বিষ্ণোইয়ের গ্যাং। ৭০০ শুটার আছে এই দলে। টাকার বদলে সুপারি কিলিংয়ে তারা সিদ্ধ হস্ত। শুধু পাঞ্জাবেই এই দলের ৩০০ শুটার ছড়িয়ে রয়েছে। পাঞ্জাব ছাড়াও হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, রাজস্থান এবং ঝাড়খন্ড, গোটা উত্তর ভারতের ত্রাস এই বিষ্ণোইয়ের দল। এই দলেরই নেতা লরেন্স বিষ্ণোই। কীভাবে এত কুখ্যাত দুষ্কৃতী হলেন তিনি?
১৯৯৩ সালে পাঞ্জাবের আবোহারে জন্ম নেন লরেন্স। স্কুলের পর তিনি চন্ডিগড়ের ডিএভি কলেজে ভর্তি হন। ২০১১ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে যোগ দিয়েছিলেন বিষ্ণোই। তখনই গোল্ডি ব্রারের সঙ্গে তার আলাপ হয়। এরপর ছাত্র রাজনীতি থেকে অপরাধমূলক কার্যকলাপে যুক্ত হতে থাকেন লরেন্স। চন্ডিগড়সহ পাঞ্জাবে তাদের তোলাবাজির কারবার চলত। ২০১৩ সালে এক ছাত্র নেতাকে খুনের ঘটনায় প্রথম লরেন্সের নাম খবরের শিরোনামে আসে।
তোলাবাজির পর মাদক পাচার, মদের কালোবাজারি, আগ্নেয়াস্তের চোরাচালান, সুপারি কিলিং, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গোল্ডি এবং বিষ্ণোইয়ের অপরাধের কারবার। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন দুজনে। সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে যুবকদের মগজধোলাই করে দল বাড়ায় তারা। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামে লরেন্সকে আদালতে নিয়ে যাওয়া ছবি বারবার পোস্ট হয়। যাতে অপরাধমনস্ক বহু যুবক প্রভাবিত হয়ে তাদের দলে নাম লিখিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
এছাড়াও পাঞ্জাবের যে যুবকেরা উত্তর আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের কানাডা নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষ্ণোইয়ের দল তোলাবাজি, খুন, মাদক পাচার করায়। একবার এদের দলে যোগ দিলে আর ফিরে আসার উপায় থাকে না। এরা ৯০ এর দশকের ত্রাস দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাংয়ের মতই হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। বাবা সিদ্দিকীকে খুন করার পর প্রকাশ্যে তারা জানিয়েছে, “আমাদের সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা নেই। দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাং ও সালমান খানকে সাহায্য করলে কোনও ছাড় পাওয়া যাবে না। যারা সাহায্য করছেন তারা সমস্ত হিসাব ঠিক রাখুন।” কিন্তু প্রশ্ন হল কেন সালমানের উপর এত চটেছে বিষ্ণোইয়ের গ্যাং? কী এমন করেছেন সালমান?
আসলে ১৯৯৮ সালে রাজস্থানের যোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হে’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে সালমান খান কৃষ্ণসার হরিণ শিকার করেন। কৃষ্ণসার হরিণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে খুবই পবিত্র। সালমানের বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সেই কারণেই তারা তাকে মারতে চায়। ২০১৮ সালেও সালমানের বাড়ির চারপাশে রেকি করে গিয়েছিল সম্পথ নেহেরা নামের এক সুপারি কিলার। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে দাবি করে বিষ্ণোইয়ের নির্দেশেই ওই ব্যক্তি সেদিন সালমানের বাড়ির আশেপাশে গিয়েছিল। তবে বিষ্ণোই তা অস্বীকার করে আদালতে দাঁড়িয়ে হুমকি দেয়, “যোধপুরে আমরা সালমান খানকে হত্যা করব। আমরা ব্যবস্থা নিলেই সবাই জানতে পারবে। আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই করিনি। ওরা বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছে।”
২০২৩ সালের ১৪ই এপ্রিল সালমানের বান্দ্রার বাড়ির সামনে বাইকে করে এসে তার উপর গুলি চালানো হয়। কিন্তু তাতে সালমানের কোনও ক্ষতি হয়নি। ২০২২ সালের ২৯ শে মে পাঞ্জাবের জনপ্রিয় গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় দুষ্কৃতী দল। তাতেও নাম জড়ায় লরেন্স বিষ্ণোইয়ের। তবে সেই সময় তিনি তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন। জেলে বসেই বিষ্ণোই এই খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন : বলিউড সেরা অভিনেত্রী হয়েও ছেড়ে দিয়েছিলেন অভিনয়! মিঠুন চক্রবর্তীর স্ত্রী আসলে কে?
আরও পড়ুন : এই বলিউড অভিনেত্রীর জন্য ডিভোর্সের পথে ঐশ্বর্য-অভিষেক! নাম শুনলে চমকে যাবেন
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে কানাডার ভ্যানকুভারে পাঞ্জাবি গায়ক গিপ্পি গ্রেওয়ালের বাড়িতেও গুলি চালায় বিষ্ণোই গ্যাং। তার অপরাধ ছিল তিনি সালমানের প্রশংসা করেছিলেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাঞ্জাবি গায়ক এপি ধিঁলোর বাড়িতেও গুলি চালানো হয়, কারণ তার একটি গানের অ্যালবামে সালমানকে দেখা গিয়েছিল। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দল পাকিস্তানি গুপ্তচর আই এস আই এস থেকে টাকা পায় বলে ভারতীয় তদন্তকারীরা দাবি করছেন। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের শুটারদের টার্গেট কিলিংয়ের জন্য ব্যবহার করছে পাকিস্তান, এমন অভিযোগও আছে।