ভারতীয়দের হয় না, মোনালিসার ‘অ্যাম্বার চোখে’র রহস্য কী? কাদের হয় এমন চোখ?

কুম্ভমেলায় ভাইরাল মোনালিসার কটা চোখের মায়াজালে জড়িয়ে গোটা সোশ্যাল মিডিয়া। বিরলের মধ্যেও নাকি বিরলতম মোনালিসার চোখ। কোটিতে একজন মানুষের নাকি এমন চোখ হয়। কাদের হয় এমন চোখ? কেনই বা হয়? শুনলে অবাক হবেন ভারতীয়দের মধ্যে কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন চোখ পাওয়া যায়নি। মোনালিসার চোখ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন তা শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। আজ আপনাদের শোনাবো মোনালিসার ওই দুটি মায়াবী চোখের রহস্য।

মোনালিসার ‘অ্যাম্বার চোখে’র রহস্য কী?

বছর ষোলোর মোনালিসা ভোঁসলে রাজস্থানের চিতোরগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। মালা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। সেই মালা বিক্রি করতেই এই বছর কুম্ভ মেলায় পৌঁছেছিলেন তিনি। সেখানে তার ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছাড়েন এক ব্যক্তি। তারপর? যেন রূপকথার মত ঘুরে গেল মোনালিসার জীবন। এখন সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই তাকে নিয়ে যত পোস্ট, যত ভিডিও, যত ছবি চোখে পড়ে। বিশেষ করে মোনালিসার চোখ থেকে চোখ সরাতে পারছেন না কেউই। বড় বড় টানা টানা দুই চোখ, যার মাঝে মেটে সোনালী রঙের দুই মণি, তাতে হলদেটে ভাবই বেশি চোখে পড়ে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘অ্যাম্বার চোখ’। এমন চোখ নাকি বিশ্বের কেবল ৫ শতাংশ মানুষেরই রয়েছে। তবে সব থেকে আশ্চর্যের কথা হলো এই যে কোনও ভারতীয়ের এমন চোখ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

Monalisa

এই অ্যাম্বার চোখ সাধারণত মধ্য এশিয়ার কিছু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই পাওয়া যায়। স্পেন, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু কিছু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এমন চোখের মানুষ পাওয়া যায়। তাও কোটিতে একটা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মোনালিসা কীভাবে এমন চোখ পেলেন? বিজ্ঞানীরা বলছেন এই সবই আসলে জিনের কারণে। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন বিভাগের গবেষকরা চোখের রং নিয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা জানাচ্ছেন মোনালিসার চোখের এমন রঙের পেছনে রয়েছে মেলানিন নামের এক রঞ্জকের কারসাজি।

মোনালিসার চোখের রং বদলে দিয়েছে এই রঞ্জক

ত্বক থেকে চোখের রং নির্ধারণ করে এই মেলানিন। মোনালিসার চোখের রং বদলে দিয়েছে এই মেলানিন। মেলানিন তৈরি হয় মেলানোসাইটস কোশ থেকে যা চোখের মণিতে থাকে। মেলানিন যদি বেশি থাকে তাহলে চোখের মণির রং গাঢ় বাদামি হয়। মেলানিন কম থাকলে মণির রং হালকা হবে। যাদের চোখের রং হালকা, বাইরের আলো সহজেই শুষে নেয় তাদের চোখ। যার ফলে সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখ অমন দেখায়। মেলানিনের মধ্যে আবার ইউমেলানিন এবং ফিয়োমেলানিন এই দুটি ভাগ আছে। ফিয়োমেলানিনের মাত্রা বেশি থাকলে চোখের মণির রং লালচে হলুদ হয়। এই ফিয়োমেলানিনের মাত্রার একটু এদিক ওদিক হলেই চোখের মণির রং হলুদ সোনালী বা মেটে সোনালী হতে পারে। তবে মোনালিসার মত অ্যাম্বার রঙের চোখের মণি যাদের, তাদের ক্ষেত্রে ইউমেলানিন এবং ফিয়োমেলানিন দুটোই থাকে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন : বলিউডে পা রাখবেন কুম্ভ মেলার মোনালিসা! বড় ঘোষণা করলেন পরিচালক

Monalisa

আরও পড়ুন : কুম্ভমেলার মোনালিসা এবার সিনেমার নায়িকা! নায়ক দক্ষিণের এক নম্বর সুপারস্টার

তবে এই মেলানিন কমবে না বাড়বে তা নিয়ন্ত্রণ করে জিন। কার চোখের মণির রং কেমন হবে সেটা নিয়ন্ত্রণ করে OCA1 এবং HRC2 নামের দুটি জিন। এর মধ্যে রং বদলাতে অবশ্য OCA1 এর গুরুত্বই বেশি। এই জিনের হেরিফেরের কারণেই কারও চোখ বাদামী, কারও নীল কিংবা কারও মোনালিসার মত মেটে সোনালী রংয়ের চোখ হতে পারে। তবে চোখের এমন রঙ যে বংশপরম্পরায় একজনের থেকে অন্য জনের মধ্যে সঞ্চারিত হতে থাকে এমন কিন্তু নয়। অনেক সময় দেখা গিয়েছে বাবা-মার চোখ নীল হলেও সন্তানের চোখ বাদামী রঙের হতেই পারে। এক্ষেত্রে চোখের রং জিন কীভাবে নির্ধারণ করছে সেই রহস্য এখনও অবশ্য ধরতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা। তাই মোনালিসার চোখের আসল রহস্য এখনও অধরা।