কফি শপের সাধারণ এক কর্মচারী থেকে সরাসরি বলিউডে (Bollywood) এন্ট্রি! আউটসাইডার হয়েও একের পর এক দুর্ধর্ষ কাজ। অভিনেতা বিক্রান্ত মাসে (Vikrant Massey) বর্তমানে বলিউডের সেরা অভিনেতাদের মধ্যে একজন। সম্প্রতি অভিনয় থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে ফেললেন বিক্রান্ত। কিন্তু কেন? এই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে ভক্তদের।
১৯৮৭ সালে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় বিক্রান্তের। বাবা মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে তার ছোট্ট সংসার। খুব একটা সচ্ছল কোনদিনই ছিল না তাদের পরিবার। একসময় খুব আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে তাদের দিন কেটেছে। সংসারে কিছু সাহায্য করবেন বলে কফি শপের কাজ নিয়েছিলেন বিক্রান্ত। সেখানে কফি তৈরি করা, কফি পরিবেশন করা এবং টেবিল পরিষ্কার করা ছিল তার কাজ।
বিক্রান্তের গোটা পরিবার আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের তুলনায় কিছুটা আলাদা। তাদের পরিবারের ৪ জন সদস্যই ৪ টি আলাদা আলাদা ধর্ম মেনে চলেন। তার বাবা খ্রিস্টান, মা শিখ, ভাই মুসলিম ধর্ম নিয়েছে এবং বিক্রান্ত হিন্দু ধর্ম পালন করেন। তবে ধর্ম আলাদা হলেও গোটা পরিবারের মধ্যে একতা ছিল বরাবর। মুম্বাইয়ের স্কুল এবং কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার খুব আগ্রহ ছিল। ৭ বছর বয়স থেকে তিনি মঞ্চে অভিনয় করতেন। থিয়েটারেও অভিনয় করেছিলেন বিক্রান্ত।
বিক্রান্তের কাছে ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে খুবই অদ্ভুত ভাবে। একদিন তিনি একটি বাথরুমের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন এক মহিলা তাকে বলেন, “তুমি অভিনয় করতে চাও? তাহলে আমাদের অফিসে এসে দেখা কর।” বিক্রান্ত চমকে গিয়েছিলেন। পরদিনই তিনি ছুটে যান সেই অফিসে। ধুম মাচাও ধুম ধারাবাহিকে তাকে কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন তার পারিশ্রমিক ছিল এপিসোড পিছু ৬০০০ টাকা। কিন্তু টাকার অংকের কথা না ভেবেই শুধুমাত্র কাজ শিখবেন ভেবে রাজি হয়ে যান অভিনেতা।
কাহা হু ম্যায়, ২০০৪ সালে এই হিন্দি ধারাবাহিকে তিনি কাজের সুযোগ পান। কিন্তু এই ধারাবাহিক কখনো টিভিতে সম্প্রচার হয়নি। কাজটা মাঝপথে থেমে যায়। তারপর তিনি সহকারি পরিচালক হিসেবে ওই প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি অভিনেতা হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ধরমবীর, বালিকা বধূ, ঝলক দিখলা যা, ইয়ে হে আশিকির মত একাধিক ধারাবাহিকের প্রস্তাব তিনি পান। তবে তার লক্ষ্য ছিল বলিউড।
বিক্রান্ত এরপর বলিউডের অভিনেতা হওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। ওই সময় সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রিতে তার বেতন ছিল মাসে ৩৫ লক্ষ টাকা। তিনি সেই প্রস্তাব ছেড়ে দেন। ২০১৩ সালের লুটেরা সিনেমা দিয়ে তিনি বলিউডে পা রাখেন। তারপর দিল ধড়কনে দো, হাফ গার্লফ্রেন্ড সিনেমাতে তিনি পার্শ্ব চরিত্রে সুযোগ পান। তবে তার কছরিয়ারের মোড় ঘুরে যায় কঙ্গনা সেন শর্মার আ ডেথ ইন দ্যা গঞ্জ সিনেমাতে অভিনয় করার পর। মেঘনা গুলজারছর ছপক সিনেমাতে দীপিকা পাড়ুকোনের বিপরীতে তার অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কাটে।
আরও পড়ুন : এবছর বলিউডের সেরা অভিনেতা এবং অভিনেত্রী কে? প্রকাশ্যে এল ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড তালিকা
আরও পড়ুন : কত টাকার মালিক বিক্রান্ত মাসে? অভিনেতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ কত?
এরপর তাপসী পান্নুর সঙ্গে হাসিনা দিলরুবা, মির্জাপুর ওয়েব সিরিজ, ব্রোকেন বাট বিউটিফুল ওয়েব সিরিজ, টুয়েলভফ ফেল, দ্য সবরমতি রিপোর্ট ইত্যাদি সিনেমাতে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। কিন্তু মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানিয়েছেন এবার পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে তাকে। তাই তিনি আর অভিনয় করবেন না। ২০২৫ সালে তাকে শেষবার পর্দায় দেখা যাবে। বিক্রান্তের এই অকাল অবসর বলিউডের বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন ভক্তরা।