বডি বিল্ডার থেকে বাংলা সিনেমার কৌতুক অভিনেতা, পুলিশের চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন অভিনয়ে। কিন্তু শুধু কমেডিয়ান নন, রবি ঘোষ (Rabi Ghosh) ছিলেন ৬০-৭০ এর দশকের টলিউড ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক অভিনেতা। সত্যজিৎ রায় থেকে তপন সিনহা, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তাবড় তাবড় পরিচালকরা ছিলেন তার গুণমুগ্ধ। ছোটখাটো চেহারার এই মানুষটি পর্দায় কখনও হাসিয়েছেন, কখনও কাঁদিয়েছেন দর্শককে। তবে জানেন কি অভিনয়ে আসার আগে রবি ঘোষ ছিলেন বডি বিল্ডার? পুলিশে চাকরি করতেন তিনি।
১৯৩১ সালের ২৪শে নভেম্বর কোচবিহারে জন্ম নেন রবি ঘোষ। তার আসল নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। কোচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা করেন তিনি। চাকরির সুবাদে তার বাবা জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে কলকাতার সাউথ সাববার্ন মেন স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এই স্কুলেই তার সঙ্গে পড়তেন উত্তম কুমারের ছোট ভাই তরুণ কুমার।
তরুণ কুমার এবং রবি ঘোষ একসময় পেশাদার রঙ্গমঞ্চে নিয়মিত নাটক করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও তিনি খুব মেধাবী ছিলেন। আশুতোষ কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষায় পাস করে শ্যামাপ্রসাদ কলেজে বিকমে ভর্তি হন তিনি। সেই সঙ্গে বডি বিল্ডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রবি ঘোষ। নিয়মিত শরীর চর্চা আর অটুট লক্ষ্যে ভর করে চরম অভাব অনটনের মধ্যেও রবি ঘোষ বডি বিল্ডার হতে পেরেছিলেন। তখন তার চেহারা ছিল দেখার মত।
১৯৫৩ সালে কলকাতা পুলিশ কোর্টে চাকরিও পেয়ে যান রবি ঘোষ। কিন্তু ১৯৬১ সালে চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে অভিনয়ই বেছে নেন তিনি। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘কিছুক্ষণ’ ছবি দিয়ে হয়েছিল তার হাতেখড়ি। খুব কম সময়ের মধ্যেই টলিউডে পরিচিতি পেতে শুরু করেন রবি ঘোষ। তখন ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে ছিলেন উত্তম কুমার, সৌমিত্র চ্যাটার্জীরা। তাদের মাঝে নায়ক হওয়ার সুযোগ তেমন ছিল না রবি ঘোষের। কিন্তু অভিনয় গুনে তিনি তার আলাদা পরিচিতি গড়ে নেন খুব তাড়াতাড়ি।
সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে তপন সিনহা, দিনেন গুপ্ত, অঞ্জন চৌধুরীর মত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন রবি ঘোষ। দশকের পর দশক বিভিন্ন ধারার ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন তার অভিনয় দক্ষতা। গুপী গাইন বাঘা বাইন থেকে আগন্তুক, নির্জন সৈকতে, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা থেকে ঠগিনি, রূপসী, শহর থেকে দূরে, বাঘিনী, অরণ্যের দিনরাত্রি, গল্প হলেও সত্যি, এসব সিনেমা আজও টলিউডের অমূল্য সম্পদ। কলকাতা দূরদর্শনে ‘গোপাল ভাঁড়’ টিভি শো ছিল তার শেষ কাজ।
আরও পড়ুন : আত্মহত্যা নাকি খুন, মহুয়া রায় চৌধুরীর মৃত্যুর রাতে ঠিক কী হয়েছিল?
আরও পড়ুন : বাঙালি হয়ে বাঙালিরই ক্ষতি করেছেন! এই কারণে জয়া ভাদুড়িকে সহ্য করতে পারেন না মৌসুমী চ্যাটার্জী
পর্দার কমেডিয়ান রবি ঘোষ কিন্তু বাস্তবে খুবই রাশভারী মানুষ ছিলেন। আলাদাই এক ব্যক্তিত্ব ছিল তার মধ্যে। তাকে অভিনয় জগতের ‘সিন স্টিলার’ বলা হত। তিনি যে কোনও দৃশ্য অনায়াসেই চুরি করে নিতে পারতেন, এমনই ছিল তার অভিনয় দক্ষতা। ১৯৯৭ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি রবি ঘোষের মৃত্যু হয়। বাংলা সিনেমার এমন এক উজ্জ্বল প্রতিভাকে এখন প্রায় ভুলতে বসেছে টলিউড। টলিউডের বহু লেজেন্ডের মত রবি ঘোষের নামটাও যেন মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। তবে তিনি আজীবন অমর থাকবেন দর্শকদের মনে। টলিউড তাকে যোগ্য সম্মান দিক বা না দিক, দর্শকরা রবি ঘোষের গুণের কদর আজও করেন।