বলিউডের (Bollywood) সবথেকে জনপ্রিয় আইটেম ড্যান্সার, ‘ক্যাবারে কুইন’ হিসেবে আজও জনপ্রিয় যিনি, তিনি হলেন হেলেন (Helen)। বলিউড প্রযোজক সেলিম খানের (Selim Khan) দ্বিতীয় স্ত্রী, সালমান খানের সৎ মা হেলেনের জীবনটাও যেন সিনেমার থেকে কিছু কম নয়। একটার পর একটা ঘটনা ঘটেছে তার জীবনে। রয়েছে অনেক বিতর্ক। আজ আপনাদের শোনাবো সেই হেলেনের জীবনের অজানা গল্প।
হেলেনের জন্ম হয়েছিল ১৯৩৮ সালে। তার বাবা ছিলেন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং মা বার্মিজ। হেলেনের আসল নাম হেলেন অ্যান রিচার্ডসন। তাদের আরও দুই সন্তান ছিল রজার এবং জেনিফার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হেলেনের বাবা মারা যান। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে হেলেনের অন্তঃসত্ত্বা মা রাতারাতি রেঙ্গুন ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং সাধারণ মানুষের সহায়তায় এক শরণার্থী দলের সঙ্গে তারা আসামের ডিব্রুগড়ে এসে ওঠেন প্রথমে। গর্ভেই মৃত্যু হয়েছিল হেলেনের মায়ের অনাগত সন্তানের। কয়েক মাস আসামের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন হেলেন। তারপর তারা চলে আসেন কলকাতায়। এখানে গুটি বসন্তে তার ভাই রজারের মৃত্যু হয়। তারপর মা এবং বোনকে নিয়ে হেলেন চলে আসেন মুম্বাইতে।
হেলেনের মা হাসপাতালে নার্সের কাজ নিয়েছিলেন। কিন্তু তার আয়ে সংসার চলত না। টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি হেলেন। এক পারিবারিক বন্ধু সহায়তায় তিনি সিনেমাতে কাজের সুযোগ পেয়ে যান। শাবিস্তান, আওয়ারা সিনেমায় কাজ করেছিলেন তিনি। তারপর ১৯৫৪ সালে আলিফ লায়লা এবং হুর এ আরবে একক শিল্পী হিসেবে কাজের সুযোগ পান। কিন্তু তার ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায় ১৯৫৮ সালে হাওড়া ব্রিজ সিনেমায় আইটেম নাচ নেচে। গীতা দত্তের গলায় ‘মেরা নাম চিন চিন চু’ তে হেলেনের নাচ তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে। তখন হেলেনের বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি।
হেলেন মণিপুরী, কত্থক এবং ভারতনাট্যমের তালিম নিয়েছিলেন। ‘পিয়া তু’ গানের সেই মনিকা ডার্লিংয়ের রূপে এবং নাচে একসময় পাগল ছিল গোটা বলিউড। শোলে সিনেমার ‘মেহেবুবা ও মেহেবুবা’, ইন্তেকামের ‘আ জানেজা’, ক্যারাভানের ‘পিয়া তু আব তো আজা’ গানগুলো আজও দারুণ জনপ্রিয়। অন্তত ৬০০টি ছবিতে আইটেম নেচেছেন তিনি। নাচের দৌলতে তার জনপ্রিয়তা কোনও বলিউড অভিনেত্রীর তুলনায় ছিল না সেই সময়। একেকটি নাচ নাচতে তখনকার দিনে ৬ হাজার টাকা করে নিতেন হেলেন। এর থেকেই বলিউডে তার আধিপত্য বোঝা যায়।
কেরিয়ারের পাশাপাশি হেলেন তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও চর্চায় ছিলেন। দীর্ঘদিন পরিচালক পি এন অরোরার সঙ্গে সম্পর্ক ছিলেন তিনি। বয়সে হেলেনের থেকে ২৭ বছরের বড় ছিলেন অরোরা। তাদের ১৭ বছরের সম্পর্ক চলেছিল। কিন্তু এরপর হেলেন সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর বলিউড প্রযোজক সেলিম খানের সঙ্গে হেলেনের সম্পর্ক শুরু হয়। ১৯৮১ সালে চার সন্তানের বাবা সেলিমকে বিয়ে করেন হেলেন। এই নিয়ে বলিউডে তুমুল ঝড় উঠেছিল সেই সময়। সেলিম খানের প্রথম স্ত্রী সালমা এবং তার সন্তান সালমান, আরবাজ, সোহেল এবং আলভিরা কিছুতেই বাবার দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। তবে পরে অবশ্য সব ঠিক হয়ে যায়। হেলেন এবং সেলিম খান এক কন্যাকে দত্তক নেন যার নাম অর্পিতা।
আরও পড়ুন : বয়সে বুড়ি হয়েও হাঁটুর বয়সী ছেলেকে বিয়ে করেছেন এই ৮ বলিউড অভিনেত্রী
আরও পড়ুন : ২৯ বছর ধরে সালমানের রক্ষাকবচ! ভাইজানের বডিগার্ডের বেতন শুনলে আকাশ থেকে পড়বেন
বর্তমানে সেলিম খান তার দুই স্ত্রী এবং ৫ পুত্র ও কন্যা সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিন গুজরান করছেন। হেলেন বর্তমানে খান পরিবারেরই একটি অংশ। সকলের সঙ্গে মিলে মিশে থাকেন তিনি। সেলিম খানের সন্তানদের তিনি নিজের সন্তানের মত স্নেহ করেন। ১৯৮৩ সালে অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন হেলেন। তারপর বেশ কিছু বছর পর তিনি খামোশি দ্য মিউজিকাল, হাম দিল দে চুকে সানাম সিনেমাতে অভিনয় করেন। হাম দিল দে চুকে সানামে সালমান খানের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় তাকে। বর্তমান যুগে কিংবা ভবিষ্যতে যতই নতুন নতুন আইটেম ডান্সার লাইম লাইটে উঠে আসুন না কেন, ক্যাবের কুইন হেলেনকে আজও টেক্কা দিতে পারবেন না কেউই।