বলিউডের (Bollywood) ‘জোহরা জবীঁ’কে মনে আছে? ‘ওয়াক্ত’ সিনেমায় বলরাজ সাহানির লিপে মান্না দের গাওয়া সেই গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যাকে উদ্দেশ্য করে সেই গান ছিল, সেই অভিনেত্রী অর্থাৎ অচলা সচদেবের (Achala Sachdev) জীবনের গল্পই আজ শোনাবো আপনাদের। বলিউডের এই দাপুটে অভিনেত্রীর অন্তিম পরিণতি হয়েছিল খুবই করুণ।
১৯২০ সালের ৩রা মে অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে জন্ম নেন অচলা। অল ইন্ডিয়া রেডিওর লাহৌর স্টেশনের শিশু শিল্পী হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। এরপর যখন দেশভাগ হয় তখন ওয়াঘার এপারে এসে অল ইন্ডিয়া রেডিওর দিল্লি স্টেশনে তিনি অনুষ্ঠান করতেন। ১৯৩৮ সালে প্রথমবার সিনেমার পর্দায় তিনি কাজ শুরু করেন। ‘ফ্যাশনেবল ওয়াইফ’ ছবি ছিল তার প্রথম কাজ। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
অচলা এরপর সারা জীবনে ১৩০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। এমনকি অন্তিম লগ্নে তিনি যশরাজ ফিল্ম ব্যানারের সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। যশরাজ ফিল্মসের একের পর এক সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তাকে দেখা গিয়েছে বারবার। একবার যশ রাজ ফিল্মসের একটি ছবির সেটে যশ চোপড়া তার সঙ্গে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তথা ব্যবসায়ী ক্লিফোর্ড ডগলাস পিটার্সের আলাপ করিয়ে দেন। প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর ডগলাসকে বিয়ে করেন অচলা। স্বামী-স্ত্রীর সুখের সংসার ছিল। অচলাকে কাজের ব্যাপারে সম্পূর্ণ সমর্থন করতেন তার স্বামী।
কিন্তু হঠাৎ করেই অচলার জীবন থমকে যায় তার স্বামীর মৃত্যুর পর। নিজেকে বাইরের দুনিয়া থেকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেন অভিনেত্রী। আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যে নিজেকে বন্দী করে ফেলেন। প্রায় ১২ বছর তিনি নিজেকে দুই কামরার ফ্ল্যাটে বন্ধ করে রেখেছিলেন। তার দেখাশোনা করতেন একজন আয়া। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে ছিল বটে, কিন্তু মায়ের খোঁজ রাখতো না তারা। মেয়ের সঙ্গে নাকি কোনও যোগাযোগই ছিল না অচলার। আমেরিকানিবাসী ছেলের সঙ্গে কথা হত কেবল টেলিফোনে, তাও মাঝে মাঝে। ভারতে সম্পূর্ণ একাই ছিলেন অচলা।
অচলার শেষ জীবনটা কেটেছিল খুবই কষ্টে। তিনি সারাদিন ভক্তিমূলক গান শুনে এবং জপ, তপ ও ধ্যান করে দিন কাটাতেন। মৃত্যুর ৫ বছর আগে তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি এবং ফ্ল্যাট একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে দান করে দিয়েছিলেন। শর্ত ছিল শেষ জীবনে অচলাকে দেখভাল করবে ওই সংস্থা। ২০১১ সালে ফ্ল্যাটের বাথরুমে পড়ে গিয়ে পা ভেঙে গিয়েছিল তার। এরপর ধীরে ধীরে গোটা শরীরটাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শয্যা নেন অচলা। শয্যাশায়ী অবস্থাতেই বাকি দিন গুলো কেটেছিল তার।
আরও পড়ুন : ‘রামাইয়া ভাস্তাভাইয়া’ সিনেমার নায়ক আজ কোথায়? অভিনয় ছেড়ে এখন কি করছেন তিনি
আরও পড়ুন : বিক্রান্ত মাসে একা নন! অকালে বলিউড ছেড়েছিলেন এই ৫ তারকাও
ওই দুর্ঘটনার পর ৮ মাস শয্যাশায়ী অবস্থায় ছিলেন অভিনেত্রী। দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি। জীবনের শেষ কয়েকটা দিন আর্থিক এবং মানসিক সংকটে কেটেছিল তার। এরপর ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল তার প্রয়াণ ঘটে। বলিউডের স্বর্ণযুগের এত বড় একজন অভিনেত্রীর এমন পরিণতি আশা করেননি কেউই। অচলা তার কাজের মাধ্যমে আজও বেঁচে রয়েছেন দর্শকদের মনে।