

করোনার দুর্দশা চলাকালীন সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে তালা লেগে গিয়েছিল। এইসময় শিল্পী থেকে কলাকুশলী সকলেই সংসার চালানোর তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ বাজারে বসে সবজি কিংবা মাছ বিক্রি করেছেন, কেউ আবার ফাস্টফুডের দোকান (Fast Food Shop) দিয়েছেন। এবার টলিউডেরই এক নামকরা পরিচালক কাজের অভাবের সংসার চালাতে ফাস্টফুডের দোকান দিতে বাধ্য হলেন।
‘চিলেকোঠা’ ছবির পরিচালক প্রেমাংশু রায় (Premangshu Roy) কিছু দিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের আর্থিক অনটনের কথা প্রকাশ করেছিলেন। ২৭ বছর ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত তিনি। তার কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি কাজের আর্জি জানিয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রির কাছে। তার ‘চিলেকোঠা’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন ব্রাত্য বসু, ঋত্বিক চক্রবর্তী, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়রা। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি তার যোগ্যতা অনুযায়ী সিনেমা, সিরিজ কিংবা ধারাবাহিকে কাজের সুযোগ চেয়েছিলেন।
তারপর বেশ কয়েকটা মাস পেরিয়ে গেলেও সমাধান কিছুই বেরলো না। তাই এবার নতুন উদ্যমে ফাস্টফুড সেন্টার খুলে নতুন পেশা নিলেন পরিচালক। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি সেই খবর শেয়ার করেছেন। সঙ্গে তার এই সিদ্ধান্তের জন্য টলিউডের প্রতিই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি লিখেছিলেন, “আমি আপাতত বাংলা নাট্য জগত থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। যদিও এটা বড় কোন খবর নয়। আমি থেকেও বাংলা নাট্য জগতে বিশাল কোন সৃষ্টি বা উন্নতি করতে পারিনি গত সাতাশ বছরে। তাই আমি নাট্য জগতে থাকলে বা না থাকলে নাট্য জগতের কিছুই আসে যায় না। কিন্ত সত্যি কথা বলতে , আমার এসে যায়। কষ্ট হচ্ছে খুবই। গত সাতাশ বছরের অভ্যাস তো !”
কিন্তু কেন হঠাৎ নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন পরিচালক? এই প্রশ্নের জবাব দিলেন তিনি নিজেই। পরিচালকের কথায়, ‘‘প্রথম কারন হলো, নিজস্ব আর্থিক সমস্যা। দ্বিতীয় কারন হলো, পুরোটাই ব্যক্তিগত, তাই সকলকে বলা যাবে না। আর তৃতীয় কারন হলো, এত বছর নাট্য যাপনের (ভুল বা ঠিক যেটাই হোক) পর বুঝলাম, আমি এখনও মানুষ চিনতে শিখিনি। যদি সাতাশ বছর নাট্য যাপন করে মানুষ চিনতেই না শিখতে পারি, তবে আমার নিজেকে নাট্য কর্মী বা শিল্পী পরিচয় দেওয়াই মানায় না। তবে তারমানে এটা নয় যে আমার কারও নামে কোনও অভিযোগ আছে। নিজের ছাড়া কারও নামে কোনও অভিযোগ আমার নেই। এই জগতে সকলেই ভালো, আমি ছাড়া।”
তিনি আরও লিখেছেন, “তাই যে সকল আমার বন্ধু ও সহকর্মীরা এখনও আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন, যাতে আমি আর কাজ না করতে পারি, তাঁরা ওসব করে ফালতু নিজেদের সময় নষ্ট করবেন না। কারন, আমি নিজেই সরে গেলাম। আপনারা ভালো মানুষ, ভালো থাকুন, আপনাদের হাত ধরে বাংলা থিয়েটার এগিয়ে যাক।”
বেহালা, সরশুনা , বাগপোতা রোডে ‘নিউ ভিস্তা আকাদেমি’ স্কুলের ঠিক বিপরীতে রয়েছে প্রেমাংশু রায়ের এই ফাস্টফুডের দোকান। ছেলে সূচক রায়ের নামে তিনি তার দোকানের নাম দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে সকলকে আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘সকলে আজ সব খাবার খেয়ে খুব খুশি। মেনু কার্ড দিলাম। কয়েক দিন পর জোমাটো ও সুইগি থেকে অর্ডার করে বাড়ি বসে উপভোগ করতে পারবেন “সূচক ফুড কর্নার” এর খাবার।’’