সিনেমার পর্দায় দুর্দান্ত খলনায়ক! যাকে দেখলেই চিড়বিড়িয়ে জ্বলে উঠতেন দর্শকরা। কখনও ভিলেনের চরিত্রে ভয় ধরানো অভিনয়, তো কখনও কৌতুক চরিত্রে সবাইকে হাসিয়েছেন নিমু ভৌমিক (Nimu Bhowmik)। কিন্তু বাস্তবে তার জীবনের কাহিনী শুনলে আপনার চোখে জল আসবে। কারণ বাংলা সিনেমার এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের শেষ জীবন কেটেছে অন্ধকারে।
১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের দিনাজপুরে জন্ম হয়েছিল নিমু ভৌমিকের। খুব ছোট থেকেই অভিনয়ের শখ ছিল তার। পড়াশোনা কোনওকালেই ভাল লাগত না। কলেজের পড়া শেষ না করেই তিনি কলকাতায় চলে এসেছিলেন অভিনয় করার স্বপ্ন নিয়ে। তার স্বপ্নের পুরুষ ছিলেন উত্তম কুমার। উত্তম কুমারকে দেখেই অভিনয়ের প্রতি তার অনুপ্রেরণা জন্মায়।
তবে নিমু ভৌমিক যখন কলকাতায় আসেন তখন প্রথম প্রথম তাকে কাজ দিচ্ছিল না কেউই। টলিউডের অন্দরে প্রবেশ করা অতটা সহজ ছিল না। কিন্তু তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে গিয়েছিলেন শুরু থেকেই। তার ফলও পেয়েছিলেন। টলিউডে বেশ কিছুদিন চক্কর কাটার পর তার হাতে প্রথম ‘বাঘাযতীন’ সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ আসে। সেটা ছিল ১৯৫৮ সাল। কিন্তু তবুও ইন্ডাস্ট্রিতে সেভাবে তার জায়গা গড়ে উঠছিল না।
নিমুর ভাগ্যের দরজা খুলে দেয় ‘মণিহারা’ ছবি। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল সেই ছবি। এখানে একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চরিত্র ছোট হলেও অভিনয় দক্ষতা জেরে তিনি সকলের নজরে পড়েন। ব্যাস, এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘বিকেলে ভোরের ফুল’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘গণদেবতা’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘ছোট বউ’ এর মত কালজয়ী সিনেমাতে তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান।
নিমু ভৌমিক ছিলেন জাত অভিনেতা। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার জাত চিনিয়েছিলেন। প্রসেনজিৎ, তাপস পাল থেকে শুরু করে চিরঞ্জিতের মত ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় অভিনেতাদের সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছিলেন। পরবর্তীকালে অঞ্জন চৌধুরীর একের পর এক ছবিতেও তাক লাগানো অভিনয় করেছিলেন নিমু। পর্দায় তাকে দুঁদে খলনায়ক হিসেবে দেখা গেলেও বাস্তবে তিনি খুবই আমুদে লোক ছিলেন।
আরও পড়ুন : ‘দুই শালিকে’র নায়িকা ঝিলিক আসলে কে? রইল স্টার জলসার নতুন নায়িকার পরিচয়
আরও পড়ুন : বাংলা ছবির এই অভিনেত্রী দাদাঠাকুর শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের নাতনি
২০১৪ সালে নিমু ভৌমিকের নতুন জীবন শুরু হয় রাজনীতির হাত ধরে। ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে তিনি বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। তাই রাজনীতি থেকে তিনি সরে আসেন। পাশাপাশি টলিউডের সঙ্গেও তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। তাকে শেষবার সন্দীপ সরকারের ‘দশ মাস দশ দিনের গল্প’ নামের ছবিতে দেখা গিয়েছিল। শেষ জীবনে তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছিল তার। ২০১৯ সালে বাড়িতেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর ১০ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজও তাকে ভোলেননি দর্শকরা।