নিছক সিনেমা নয়, বাস্তবেই রয়েছে KGF সিনেমার সোনার খনি, রইলো সেই খনির গল্প

২০১৮ সালে যশ (Yash) অভিনীত কেজিএফ (KGF) ছবিটির প্রথম পার্ট মুক্তি পাওয়ার পর দ্বিতীয় পার্টের জন্য অপেক্ষা করে বসেছিলেন দর্শকরা। একটি সোনার খনি দখল করার লড়াইকে কেন্দ্র করে ছবির গল্প এগিয়েছে। যার প্রতি পরতে পরতে রয়েছে চমক। তবে আসল চমক কিন্তু রয়েছে ভারতের আসল কোলার গোল্ড ফিল্ডসে (Kolar Gold Field)। কর্নাটকের বেঙ্গালুরু শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আসল কেজিএফ অর্থাৎ কোলার গোল্ড ফিল্ডস।

ব্যাঙ্গালোর চেন্নাই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে এই সোনার খনিতে পৌঁছানো যায়। কেজিএফ ছবি নিয়ে চর্চা শুরু হওয়ার ফাঁকে ভারতের আসল সোনার খনির হদিস মিলেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। কর্ণাটকে অবস্থিত এই কোলার গোল্ড ফিল্ড সম্পর্কে প্রথম এশিয়াটিক জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রথম দেখা যায়। সালটা ছিল ১৮০৪। ব্রিটিশ সরকারের লেফটেন্যান্ট জন ওয়ারেন কোলার সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। ১৮৭১ সালে ব্রিটিশ সৈনিক মাইকেল ফিটজেরাল্ড লেওয়ালি এই প্রতিবেদনটি পড়ে সোনার খনি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন। গরুর গাড়িতে করে বেঙ্গালুরু থেকে খোলার পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে তিনি সোনার খনিতে পৌঁছান।

kgf real mine

এরপর তিনি মাইসুর মহারাজের কাছে কোলার এলাকায় খনন করার জন্য ২০ বছরের লাইসেন্স পেয়ে যান। সেখানে ২ বছর গবেষণা করে সেখানকার মাটিতে সোনার অবশিষ্টাংশ খুঁজে পান। তারপর বেশ কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম আর খোঁড়াখুঁড়ি করে তারা সেখান থেকে সোনা উত্তোলন করতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম খনির ভিতরটা ছিল অন্ধকার। মশাল এবং লন্ঠন ব্যবহার করে কাজ করতে হত। তবে খনির গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ সরকার সেখানে বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।

এই কোলার গোল্ড ফিল্ড হয়ে উঠেছিল বিদ্যুৎচালিত ভারতের প্রথম শহর যেখানে সোনা তোলার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হত। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য খনি থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে কাবেরী পাওয়ার স্টেশন স্থাপন করা হয়। এটি জাপানের পর এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্র। খনিতে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর পর দ্রুত সোনা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছিল। ১৯০২ সাল পর্যন্ত ভারতের ৯৫ শতাংশ সোনা কেজিএফ থেকে তোলা সম্ভব হয়েছিল। গোটা বিশ্বে ভারত তখন সোনা উৎপাদনে ষষ্ঠ স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল।

১৮৭৫ থেকে ১৯০৫, ভারতের সোনার অধ্যায় বলা যেতে পারে। এই এলাকায় তখন ব্রিটিশ অফিসাররা বসতি গড়তে শুরু করেন। এখানকার ঠান্ডা জলবায়ু এবং প্রচুর সোনার যোগান তাদের আকর্ষণ করতো। ব্রিটিশরা কোলার জনপদের রূপরেখা অবিকল ইংল্যান্ডের মতই গড়ে তোলেন। ব্রিটিশ অফিসাররা এই জায়গাটিকে লিটল ইংল্যান্ড নাম দেন। আশেপাশের এলাকা থেকে বহু শ্রমিক এখানে কাজ করতে আসতেন। একসময় এই খনিতে ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক দিনরাত পরিশ্রম করে সোনা আহরণ করতেন।

তবে স্বাধীনতার পর থেকেই এই এলাকার চিত্র বদলে যায়। ১৯৪৭ সালের পর ভারত সরকার কেজিএফ দখল করে নেয়। কিন্তু ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার পর কেজিএফ থেকে সোনা আসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৫৬ সালে ভারত গোল্ড মাইনস লিমিটেড কোম্পানি ভারত সরকারের অধীনে কেজিএফে সোনা খননের কাজ শুরু করে। কিন্তু ১৯৭০ সাল থেকে এই খনি থেকে সোনা বের হওয়ার পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে যায়।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে খনি থেকে সোনা উত্তোলন করতে লাভের চেয়ে লোকসানই হতে থাকে কোম্পানির। ২০০১ সালে এই সংস্থা কেজিএফ থেকে সোনা খননের কাজ বন্ধ করে। তারপর থেকে বিগত কয়েক দশক এই সোনার খনি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। তবে ব্রিটিশ সরকারের আমলে ১২১ বছর এই সোনার খনি থেকে প্রায় ৯০০ টনের কাছাকাছি সোনা বেরিয়েছে। ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে বসতি স্থাপনের আগে স্থানীয়রা হাত দিয়ে মাটি খুঁড়েই ৫৬ কেজি সোনা পেয়েছিলেন স্থানীয়রা! এখনও এই এলাকাতে অনেক সোনা মজুত আছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।