এই বছর দুর্গাপুজো থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে ‘বাগিচায় বুলবুলি’ (Bagichay Bulbuli)। কোক স্টুডিওর সম্পাদনায় বাংলার এই গান ভাইরাল হতে সময় নেয়নি। তবে জানেন কি এই গানের ইতিহাস? কে লিখেছিলেন এই গান? কোন পরিস্থিতিতে লিখেছিলেন? ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানের নিদারুণ সত্যিটা জানলে আপনার চোখেও আসবে জল।
সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনও কিছু একবার মানুষের মনে ধরলে ভাইরাল হতে সময় নেয় না। ভাইরাল ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গান রীতিমত ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছিল অল্প সময়ের মধ্যেই। দুর্গাপূজার সময় সুন্দরীদের শাড়ি পরার ভিডিও থেকে শুরু করে মাটন বিরিয়ানি কিংবা উদ্দাম নাচানাচির রিল ভিডিওতে বারবার শোনা যাচ্ছিল এই গান। মোটকথা, এই গান শুনে মানুষেরা বেশ আনন্দ পাচ্ছিলেন। তবে এই গানের উৎপত্তিটা কিন্তু একেবারেই আনন্দের ছিল না। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক অসহায় বাবার করুণ পরিস্থিতির ইতিহাস।
‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী কবির এই গজলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিদারুণ এক ইতিহাস। এই গানটি আসলে কবি লিখেছিলেন তার ছেলে অরিন্দম খালেদ বুলবুলের অসুস্থতার টাকা যোগাড় করার জন্য। বুলবুল অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসা করানোর মত টাকা ছিল না নজরুলের হাতে। তখন তিনি কলকাতায় এসেছিলেন টাকা যোগাড় করার জন্য। কলকাতার একটি পত্রিকার অফিসে আসার সময় গাড়িতে পাওয়া একটি বিজ্ঞাপনের উল্টোপিঠে গজলটি লেখেন নজরুল। টাকা জোগাড় হলে তিনি নৃপেন কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়কে এই গজলটি দেন।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন বর্তমানে নতুন করে ‘বাগিচায় বুলবুল’ গানটি ভাইরাল হচ্ছে তখন অনেকেই গুলিয়ে ফেলছেন। অনেকে বলছেন বুলবুলের মৃত্যুর পর তাকে সমাধিস্থ করার টাকা জোগাড় করতেই নাকি এই গানটি লিখেছিলেন নজরুল। কিন্তু তা আদতে সত্যি নয়। তবে ঘটনাটা পুরোটা মিথ্যেও নয়। মাত্র ৪ বছর বয়সেই মারা যায় নজরুল পুত্র বুলবুল। ছেলেকে কবর দেওয়ার মত টাকা ছিল না নজরুলের হাতে। তখন তিনি টাকা পাওয়ার আশায় এক প্রকাশকের কাছে যান। ওই প্রকাশক তাকে বলেন এক্ষুনি কবিতা লিখে দিলে তবেই তিনি নজরুলকে টাকা দেবেন।
আরও পড়ুন : কেন বাংলা সিরিয়াল দেখছেন না দর্শকরা? চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন রান্নাঘরের সুদীপা
আরও পড়ুন : ‘কোন গোপনে’তে আর দেখা যাবে না এই অভিনেত্রীকে! কেন অভিনয় ছাড়লেন রোশনি?
সন্তানহারা নজরুল তখন ছেলের নামেই লিখে ফেলেন আরেকটি গান। “ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার প্রাণের বুলবুলি”, এই গান লিখে ছেলেকে কবর দেওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করতে হয়েছিল নজরুলকে। সেই গানের সঙ্গে ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটিকে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকেই। তবে দুটি গান আলাদা এবং দুটি আলাদা আলাদা পরিস্থিতিতে লেখা।