মানসিক অবসাদে মোটা হয়েছেন! সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরলেন শ্রীলেখা মিত্র

অবসাদগ্রস্ত মানুষের খোঁজ নেয় কজন? নায়িকাদেরও অবসাদ হয়। চরম মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে ভেঙে যায় শরীর। মানসিক অবসাদ এমনই ভয়ানক যে মোটা হয়ে যান অনেকেই। যেমনটা ঘটেছে ইন্দ্রাণী হালদারের (Indrani Halder) সঙ্গে। একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন শ্রীলেখা মিত্রও (Sreelekha Mitra)। তাই ইন্দ্রাণীর হয়ে কলম ধরলেন তিনিও।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে ইন্দ্রাণী হালদারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভাইফোঁটাতে একটি মাচা শোয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাকে দেখে অবাক হন সকলে। কারণ এই ইন্দ্রাণীর সঙ্গে আগের ইন্দ্রাণীর যেন মিল নেই কোনও। নায়িকাদের মত সেই ছিপছিপে চেহারা আর নেই। যেন ম্যাজিকের মত রোগা থেকে মোটা হয়ে গিয়েছেন তিনি। আর সেই থেকে শুরু হয় কটুক্তি। যার জবাব দিয়েছেন ইন্দ্রাণী। জানিয়েছেন তার শারীরিক অসুবিধার কথা।

Indrani Halder

ইন্দ্রাণী বলেন বিগত এক বছর ধরে তিনি শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। পিঠের ব্যথায় কাবু ছিলেন অভিনেত্রী। বন্ধ হয়েছিল বাইরে বেরোনো। পিঠের অতিরিক্ত যন্ত্রণার কারণে প্রচুর ওষুধ খেতে হত তাকে। এইভাবে বাড়িতে বসে বসে তিনি ওজন অনেকটাই বাড়িয়ে ফেলেন। তাই তিনি অনুরোধ করেছিলেন তার পরিস্থিতি বুঝে যেন কেউ তার চেহারা নিয়ে সমালোচনা না করেন। এই প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতে কলম ধরেন শ্রীলেখাও।

এর আগেও বহুবার মানসিক অবসাদ নিয়ে কথা বলেছেন শ্রীলেখা। আর সেটা করতে গিয়ে তাকে অনেকবার কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, “অনেক আগে এই নিয়ে কথা বলেছিলাম।‌ তখন আমাকে পাগল বলা হয়েছিল।” শ্রীলেখা লেখেন, “বহু ক্ষেত্রে অবসাদেও মানুষ মোটা হয়। আমি নিজেই জলজ্যান্ত উদাহরণ। খোঁজ নিয়েছেন কখনও, মানুষটা কেমন আছেন?”

Sreelekha Mitra

এরপর একটি সাক্ষাৎকারে ইন্দ্রাণীর নাম না নিয়ে শ্রীলেখা বলেন, “এক অভিনেত্রীর নাম নিতে চাই না কারণ বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হবে। সেই অভিনেত্রীর চেহারায় পরিবর্তন এসেছে বলে যে ভাবে ট্রোল করা হচ্ছে! এটা যে একজন অভিনেত্রীর উপরে কত বড় চাপ হতে পারে। আমরা নিজেরাও তো দশ বছর আগের ছবি দেখে ভাবি, ইস! কী সুন্দর দেখতে ছিলাম। মানুষ তো এক রকম থাকে না। বয়সের সঙ্গে বাহ্যিক সৌন্দর্য বদলায়।”

আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’র নায়িকা অঞ্জু ঘোষ?

SREELEKHA MITRA

শ্রীলেখার মতে, হলিউডের বেঁধে দেওয়া সৌন্দর্যের সংজ্ঞা অনুসরণ করে বলিউড। আর বলিউডকে অনুসরণ করে টলিউড। তথাকথিত সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য অনেকেই কড়া ডায়েট করেন। কিন্তু ভবিষ্যতে এর ফলাফল হতে পারে মারাত্মক। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই নিজেকে ভালোবাসেন। নিজেকে সুন্দর দেখতে পছন্দ করেন। বিনোদন দুনিয়াতে ছবি এবং সৌন্দর্য, এগুলোই যেন আসল কথা। লোকে ভাবেন, তারকারা সাজগোজ করেন, আবার টাকাও পান। তাই তাদের সরাসরি আক্রমণ করা হয়। আর এর থেকেই তারকাদের মনে জন্ম নেয় অবসাদ। যার চিকিৎসা খুবই প্রয়োজন।

আরও পড়ুন : কোথায় হারিয়ে গেলেন আয়েশা টাকিয়া? কেন ছেড়ে দিলেন অভিনয়?

শ্রীলেখার মতে, মানসিক অবসাদ চিহ্নিত করা সবথেকে বেশি জরুরী। অনেকে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে পারেন না। শ্রীলেখা যেমন জানতেই পারেননি যে তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। ডিভোর্সের পর যখন তিনি নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন তখন এমনটা হয়েছিল তার সঙ্গে। যেন বিছানা থেকে উঠতে পারছিলেন না তিনি। ঘন্টার পর ঘন্টা একই জায়গায় বসে থাকতেন। এরপর তিনি বুঝতে পারেন তাকে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে। জীবনটা রূপকথা নয়। এখানে নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। অবসাদ যে কোনও মানুষের আসতে পারে। অবসাদের যেমন চিকিৎসা আছে তেমন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। সরাসরি শরীরের উপর পড়ে তার প্রভাব। তাই মানসিক অবসাদ নিয়ে কথা বলাটা খুবই জরুরী বলে মনে করেন শ্রীলেখা। এটা নিয়ে কথা বলতে না চাওয়া বা লজ্জা পাওয়া কখনও কাজের কথা নয়। শারীরিক অসুস্থতার থেকেও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে মানসিক অবসাদ। তাই আরও বেশি সচেতনতা জরুরি।