পর্দার ‘ঝগড়াটে’ ছায়া দেবী অবিরাম কুড়িয়েছেন দর্শকের অভিশাপ, অন্তিম পরিণতি হয় চরম মর্মান্তিক

ষাট-সত্তরের দশকে টলিউডের জাঁদরেল অভিনেত্রী বলতে সকলে ছায়া দেবীকেই বুঝতেন। তার চেহারার মধ্যে ছিল আলাদাই এক আভিজাত্য। ধনী পরিবারের কত্রী কিংবা ঝগড়াটে স্বভাবের বিধবা চরিত্রে দারুণ মানাত তাকে। বলতে গেলে সেই সময়ের টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একজন জাঁদরেল খলনায়িকার পর্যায়েও তাকে ফেলা যায় অনায়াসে। এহেন ছায়া দেবীর (Chaya Devi) শেষ জীবনটা কেটেছে অনেক কষ্টে।

১৯১৪ সালের ৩রা জুন ভাগলপুরের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারেই জন্মেছিলেন ছায়া দেবী। তার আসল নাম ছিল কনকবালা গাঙ্গুলী। ছোটবেলাতে পড়াশোনা করতেন তিনি। সেই সময় সমাজে বাল্য বিবাহের প্রথা চালু ছিল। সেই প্রথামতো মাত্র ১১ বছর বয়সেই তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কনকবালার স্বামী ছিলেন রাঁচির একজন অধ্যাপক। তবে ভাগ্য তার জন্য অন্য কিছুই ঠিক করে রেখেছিল।

Chaya Devi

অতটুকু বয়সে বিয়েটা মোটেও ভালভাবে নিতে পারেননি ছায়া দেবী। তবে ওই অবস্থায় তিনি শ্বশুরবাড়িতে পড়েও থাকেননি। তিনি স্বামীর সংসারে মন বসাতে পারতেন না। তাই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে তিনি বাপের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর আবার নতুন করে জীবন শুরু করেন ছায়া দেবী। বাড়িতে ফিরে পড়াশোনায় মন দেন।

তার বাবার ছিল বদলির চাকরি। সেই সময় তারা ভাগলপুর ছেড়ে দিল্লিতে চলে যান। সেখানে গিয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যান অভিনেত্রী। সেই সঙ্গে গানটাও শিখে নেন। বাবার চাকরির সুবাদে যখন কলকাতায় আসেন তখন কিংবদন্তি মান্না দের কাকা তথা প্রবাদপ্রতিম শিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দের কাছে তিনি সংগীত শিক্ষা নেন। ঠিক এই সময়েই দুই পিসতুতো দাদার সুবাদে তিনি অভিনয়ের দুনিয়াতে পা রাখেন।

দাদারা বুঝতে পেরেছিলেন সংসার না করতে পারার যন্ত্রণাটা বোনের মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে তাকে বের করে আনতে অভিনয়ের কথাই তাদের মাথায় এসেছিল। তার এক পিসতুতো দাদার বন্ধু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন। তার কাছে খবর পেয়েই ছায়া দেবীকে ‘পথের শেষে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পাঠানো হয়। এই সময় এই তিনি দেবকী কুমার বসুর নজরে পড়ে যান। তারপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

‘পথের শেষে’ ছবির পর ‘সোনার সংসার’, ‘ঘনা’, ‘রজনী’, ‘প্রতিশোধ’ ইত্যাদি বহু ছবিতে তিনি অভিনয়ের সুযোগ পান। অভিনয়ের দুনিয়ায় তখন তার নামডাক বাড়তে থাকে হুহু করে। ঠিক এই সময়ই তিনি আচমকা কলকাতা ছেড়ে ভাগলপুরে গিয়ে দামোদর মিশ্রের কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষা নিতে শুরু করেন। তবে পরিচালক সুশীল মজুমদারের অনুরোধে আবার টলিউডে ফিরে আসেন ছায়া দেবী। শুরু হয় অভিনয় দুনিয়াতে তার দ্বিতীয় ইনিংস।

Chaya Devi

‘রাজা রামমোহন’, ‘রাজকুমারী’, ‘সপ্তপদী’, ‘উত্তর ফাল্গুনী’ ইত্যাদি বহু ছবিতে অভিনয় করেন ছায়া দেবী। তিনি তার কেরিয়ারে প্রায় ১০০ টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। তবে শেষের জীবনটা চরম একাকিত্বের মধ্যে কেটেছিল তার। সেই সময় তার পাশে আর কেউ বিশেষ ছিলেন না। শেষমেষ ২০০১ সালের ২৭ এপ্রিল সেরিব্রাল অ্যাটাকের কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলার এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী।