Shankar Chakraborty Life Struggle : বাংলা টেলিভিশন তথা বাংলা সিনেমার খুব জনপ্রিয় একজন অভিনেতা হলেন শংকর চক্রবর্তী। থিয়েটারকে ভালোবেসে কেরানির চাকরি ছেড়ে এসেছিলেন অভিনয় করতে। দীর্ঘ দিন অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরেও তার মনে থেকে গেছে কিছু আক্ষেপ, মেনে নিতে পারেননি স্ত্রী সোনালী চক্রবর্তীর (Sonali Chakrabarti) মৃত্যু, নিজের জীবনের এমন অনেক নানান অজানা কথা সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের সামনে তুলে ধরলেন অভিনেতা শংকর চক্রবর্তী (Shankar Chakraborty)।
কষ্টে ছোটবেলাটা কেটেছে
ছোটবেলায় হারিয়েছিলেন বাবাকে। মামার বাড়িতে থাকেন তিনি। রাতে ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সকালে স্কুল করতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্রওপড়াতেন তিনি। দিদি এবং মা দুজনেই কাজ করতেন সংসার চালানোর জন্য। এইভাবে চলতে চলতে তিনি স্টোর কিপারের কাজ পেয়ে যান একদিন। হায়ার সেকেন্ডারি পাস করার পর আসানসোলে একটি সাইকেল ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। কিন্তু সেখানে বেশ কিছু মাস কাজ করে থিয়েটারের টানে বাড়ি ফিরে আসেন।
সোনালীর সাথে আলাপ হয়েছিল কীভাবে?
থিয়েটার করতে করতেই আলাপ হয় স্ত্রী সোনালী চক্রবর্তীর সঙ্গে। সোনালী তখন নাচে মাস্টার্স করছেন। সেই সময় শঙ্করের আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনে সোনালী তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। নাচের টিউশনির পুরো টাকাটাই তিনি দিয়ে দিতেন শংকরকে। এইভাবেই আস্তে আস্তে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাড়ির অমতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন সোনালী। বিয়ে করে বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন শঙ্কর। বৌভাতের দিন সোনালীকে নিয়ে থিয়েটারও করতে গিয়েছিলেন তিনি। যে মানুষটা সুখে-দুখে সব সময় পাশে ছিলেন সেই মানুষটাকে হারিয়ে আজ বড্ড অসহায় অভিনেতা।
দূরদর্শনের হাত ধরে কাজ শুরু করেন শঙ্কর
দূরদর্শনে একটি নাটকের হাত ধরে অভিনয় শুরু করেছিলেন অভিনেতা। ‘জন্মভূমি’তে কাজ না করলেও ‘জননী’ সিরিয়ালে কাজ করে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলেন অভিনেতা। এরপর ধীরে ধীরে শুরু হয় একের পর এক মেগা সিরিয়ালের কাজ। বাংলা সিনেমাতেও কাজ করেছিলেন শংকর। মুখ্য চরিত্রে এমনভাবে সুযোগ না পেলেও পার্শ্ব চরিত্র এবং ভিলেন চরিত্রে বহুবার অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে। তবে এত কিছুর পরেও কিছু আক্ষেপ আজও মনে থেকে গেছে অভিনেতার।
টলিউডের প্রতি আক্ষেপ
অভিনেতার কথায়, তিনি বড্ড ভুল সময়ে এসেছিলেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে। যে সময় প্রসেনজিৎ, অভিষেক, চিরঞ্জিতরা বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ করছেন, সেই সময় তিনি কাজ শুরু করেন। স্বাভাবিকভাবেই তখন পরিচালকরা নতুন মুখ নিতে চাইতেন না সিনেমায়। অগত্যা খলনায়ক অথবা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করতে হতো তাকে। কৌশিক গাঙ্গুলী থেকে শুরু করে অরিন্দম শীল, কারোর কাছেই ডাক পান না অভিনেতা। পেটের দায়ে তাই এখন সিরিয়ালকেই সঙ্গী করতে হয়েছে তাকে।
‘বেলাশেষে’ সিনেমা চলাকালীন সৌমিত্রবাবু শংকরকে বলেছিলেন, “আমি জানি না কেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তোমায় ব্যবহার করতে পারল না।” একসাথে কাজ না করলেও উৎপল দত্ত শঙ্করের অভিনয়ের প্রশংসা করেছিলেন। যেখানে এত মহান ব্যক্তিত্বরা শঙ্করের অভিনয়ের প্রশংসা করলেন সেখানে কেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রি সুযোগ করে দিল না তাকে? শুধুমাত্র সিরিয়ালে অভিনয় করতেন বলেই কী বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তাকে চিরকাল সরিয়ে রেখে দিল?
আরও পড়ুন : ছোটতেই বন্ধ পড়াশোনা, কম বয়সে বিয়ে! কিভাবে অভিনেত্রী হলেন ‘নিম ফুলের মধু’র ঠাম্মি লিলি চক্রবর্তী?
আরও পড়ুন : কাজ দেয় না টলিউড, দুবেলা খাবার জোটেনি! অভিনয় ছেড়ে এখন কী করছেন মাস্টার রিন্টু?
আজ একটি ফ্ল্যাট ছাড়া আর কিছুই নেই শংকরের
আজ একটি ফ্ল্যাট ছাড়া আর কিছুই নেই অভিনেতার কাছে। সেটাও ভবিষ্যতে থাকবে কিনা তা নিয়ে বেশ সংশয়ে রয়েছেন তিনি। কাজ না থাকলে একটি ছোট ফ্ল্যাটে চলে যাবেন আর বাকি টাকা রেখে যাবেন একমাত্র মেয়ের জন্য। গাড়িও হয়তো বেচে দেবেন তিনি। একজন সুদক্ষ অভিনেতার এমন করুন পরিণতি দেখলে সত্যি চোখে জল চলে আসে।