কেরিয়ারের শুরুতেই জোর ধাক্কা। নামী প্রযোজকের লালসার শিকার হয়েছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী (Ritabhari Chakraborty)। এতদিন বাদে সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা অবশেষে ফাঁস করলেন টলিউড অভিনেত্রী। এমনকি অভিযোগ নিয়ে তিনি সরাসরি পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তিনি শুধু একা নন, ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে অহরহ ঘটে চলছে এই অন্যায়। আরজি করের ঘটনার পর তাই আর মুখ বুজে থাকলেন না ঋতাভরী। ঠিক কী ঘটেছিল তার সঙ্গে?
ঋতাভরী তখন সবেমাত্র ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছেন। তখন তার বয়স খুবই কম। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ সিরিয়ালে অভিনয় করার সুবাদে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে তার বেশ নামডাক হয়েছে ততদিনে। পরবর্তী ধাপ হিসেবে তখন সিনেমার নায়িকা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঋতাভরী। তার জন্য মিটিং করতে টলিউডের বিখ্যাত একজন প্রযোজকের কাছে যান ঋতা। কথা বলতে বলতে হঠাৎ সেই প্রযোজক তাকে নোংরাভাবে স্পর্শ করেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার গায়ে হাত দেন। ঋতাভরী সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে বেরিয়ে আসেন সেই ঘর থেকে। তারপর থেকে নিজেকে নোংরা লাগছিল তার। নিজের মাকেও বলতে পারেননি এই জঘন্য ঘটনার কথা।
আসলে সেই সময় ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন ঋতাভরী। তখনও টলিউডে তার পায়ের তলার মাটি ততটা শক্ত ছিল না। মুখ খুললেই হয়তো ওই প্রযোজক তাকে শেষ করে দেবেন, এই ভয়ে এই অন্যায় দীর্ঘদিন মুখ বুজে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু না, আর জি করের ঘটনা তাকে রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছে। তার মধ্যে আবার প্রকাশ্যে এসেছে মালায়ালাম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে হেমা কমিটির রিপোর্ট। তাতে ধরা পড়েছে কীভাবে পরিচালক, অভিনেতাসহ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মাথাদের হাতে নির্যাতিত হন অভিনেত্রীরা। টলিউডেও এই ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এই অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন ঋতাভরী।
ঋতাভরী সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এত বছর তার সময় লেগেছে সেই যৌন হেনস্থার ট্রমা থেকে বের হতে। বিশেষ করে আরজি করের ঘটনার পর প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়ে যেদিন তিনি রাস্তায় নামলেন সেদিন সেই অভিযুক্ত প্রযোজক ও তার মত ইন্ডাস্ট্রির আরও অনেক নোংরা মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখেছেন। অভিনেত্রীর মনে হয়েছে এবার অন্তত এদের স্বরূপটাও প্রকাশ্যে আসা দরকার। তাই তিনি বাংলাতেও হেমা কমিটির মত কিছু কমিশন হওয়ার দাবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেন এবং তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ফোন করেন ঋতাভরীকে। নবান্ন থেকে ডাক আসাতে ঋতা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন।
আরও পড়ুন : গুরুতর রোগে আক্রান্ত আলিয়া ভাট! উদ্বিগ্ন ভক্তরা
আরও পড়ুন : “মুখ্যমন্ত্রীর উচিত আপনাকে মিউজিয়ামে রাখা!” ভুলভাল মন্তব্য করে ট্রোলের মুখে রচনা ব্যানার্জী
ঋতাভরী বলেছেন বিগত কয়েক বছরে তিনি অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে সকলেই খারাপ নন। বেশ কিছুজনের সঙ্গে কাজ করে তিনি সুরক্ষিত বোধ করেছেন। যেমন মৈনাক ভৌমিক, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তীর মত পরিচালকদের নাম নিয়েছেন তিনি। যাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তাকে কখনোই নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে হয়নি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের পণ্য হিসেবে দেখার প্রথা আজও চলছে। রাজ্য প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ঋতাভরী সেটাই বন্ধ করতে চান।