এক সন্ধ্যায় বাড়ির সকলের সঙ্গে বসে রেডিও শুনছিল ৭ বছরের ছোট্ট একটি ছেলে। হঠাৎ রেডিওতে বাজতে শুরু করল কাওয়ালি (Qawwali) গান। গান শুনতে শুনতেই হঠাৎ ঝর ঝর কেঁদে ফেলল ছেলেটি। বাড়ির সকলেই তো ভীষণ অবাক। জিজ্ঞেস করলেন, “তুই এই গানের কী বুঝলি যে কাঁদছিস?” ছেলেটি উত্তর দিল, “কিছুই তো বুঝিনি আমি। কেন কাঁদছি তাও জানিনা।” আসলে সেদিন কাওয়ালি গানের সুর শিশুটির মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। জাগিয়ে তুলেছিল তার আবেগ। সেই দিন থেকেই কাওয়ালি গানের প্রতি গভীর টান অনুভব করতো ছেলেটি। কয়েক বছর বাদে সে হয়ে উঠল কাওয়ালি গানের সম্রাট। লোকে তাকে চেনে ওস্তাদ রাহাত ফাতেহ আলি খান (Rahat Fateh Ali Khan) নামে।
সেদিন কিছু না বুঝেই কাওয়ালি শুনে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন রাহাত ফাতেহ আলী খান। পরে কাওয়ালিই হয়ে ওঠে তার জীবনের মূলমন্ত্র। আসলে গানটা ছিল তার রক্তেই। তার বাবা ছিলেন ওস্তাদ ফররুখ ফাতেহ আলী খান। দাদা ফতেহ আলী খান ১৬ ঘণ্টা একটানা কাওয়ালি গেয়েছেন। কাকা নুসরাত ফাতেহ আলী খানের পরিচয় আলাদা করে বলতে হয় না। ৫০০ বছর ধরে কাওয়ালি গানের ঐতিহ্য বংশ-পরম্পরায় বহন করে চলেছে রাহাত ফাতেহ আলী খানের পরিবার। এই পাকিস্তানি পরিবারের প্রত্যেকেই বড় মাপের কাওয়ালি গায়ক। তাদের সান্নিধ্যেই বড় হচ্ছিলেন রাহাত। তাদের খেলাও ছিল অন্তাক্ষরী আর বলিউড গানের তালে তালে নাচ করা। কাজেই শিল্পী হওয়াটা ছিল রাহাত ফাতেহ আলী খানের ভাগ্য।
১৯৯৭ সালে যখন কাকা নুসরাত ফাতেহ আলী খানের মৃত্যু হয় তখন পারিবারিক কাওয়ালি গানের ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে রাহাতের কাঁধে। এক বছরের মাথায় ১৯৯৮ সালে হঠাৎ যে রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে রাহাত কাজ করতেন, সেটাও দেউলিয়া হয়ে যায়। কিন্তু রাহাতের জন্য আলাদাই কিছু লিখেছিল তার ভাগ্য। হঠাৎ একদিন পূজা ভাট তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান তিনি তার পরের সিনেমার জন্য রাহাতকে দিয়ে একটা গান গাওয়াতে চান। ২০০৩ সালে পূজার ‘পাপ’ সিনেমাতে রাহাত গেয়েছিলেন ‘মন কি লাগান’ গানটি। সেটাই ছিল বলিউডে রাহাতের প্রথম প্লেব্যাক। এর সঙ্গে ‘লাল’ নামেরও একটি গান তিনি গেয়েছিলেন এই সিনেমার জন্য। এরপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি রাহাত ফাতেহ আলী খানকে।
আরও পড়ুন : যৌনকর্মী থেকে অভিনেত্রী, নটি বিনোদিনীর করুণ জীবন কাহিনী
আরও পড়ুন : হৃত্বিক রোশনের আসল নাম কী? ৯৯% মানুষ এর উত্তর জানেন না
রাহাত ফাতেহ আলী খান এরপর একে একে বলিউডকে ‘জিয়া ধাড়াক ধাড়াক’, ‘ন্যায়না’, ‘বোল না হালকে হালকে’, ‘জাগ সুনা সুনা’, ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’, ‘তেরি মাস্ত মাস্ত দো ন্যায়’, ‘তেরি মেরি’র মত জনপ্রিয় সব গান উপহার দিয়েছেন। প্রায় দেড় দশক ধরে এই পাকিস্তানি গায়ক বলিউড ইন্ডাস্ট্রি কাঁপিয়েছেন, শ্রোতাদের কাঁদিয়েছেন, মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন তার গানের সুরে। গানই তার জীবন। আজও দিনের বেশিরভাগ সময় গান নিয়েই কাটে তার। তিনি একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা গেয়ে যেতে পারেন। তিনি বলেন আসলে নাকি দর্শকদের সামনে গান গাইতে গেলে তিনি সময় টেরই পান না। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলকেই রাহাত ফাতেহ আলী খানের গানের ভক্ত। কেউ গান বুঝুন বা না বুঝুন, রাহাত ফাতেহ আলী খানের গান মনের আবেগ উসকে দেবেই। ঠিক যেমনটা সেদিন সেই ৭ বছরের ছেলেটা কিছু না বুঝেই কাওয়ালি গানকে ভালোবেসে ফেলেছিল, শ্রোতারাও অজান্তেই আজ তার কাওয়ালি সুরের প্রেমে পড়ে যান।