পেট চালাতে স্পটবয়ের কাজ, ব্যর্থতার অবসাদে চরম পদক্ষেপও নিতে চেয়েছিলেন মিঠুন

বলিউড (Bollywood) ইন্ডাস্ট্রিতে তারকাদের বিলাসবহুল জীবন এবং গ্ল্যামার দেখে হিংসে হতে পারে অনেকেরই। অনেকেই বলিউডে গিয়ে নাম প্রতিষ্ঠা করার লোভে ঘরবাড়ি ত্যাগ করে দীর্ঘদিন পড়ে থাকেন মুম্বাইতে। একটা সময় ছিল যখন মিঠুন চক্রবর্তীকেও (Mithun Chakraborty) বলিউডে দিয়ে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। আজ তাকে ‘মহাগুরু’ বলে মানে ইন্ডাস্ট্রি। শুধু টলিউড নয়, এই বাঙালি অভিনেতার কদর রয়েছে বলিউডেও। কিন্তু শুরুর দিকে এত সহজ ছিল না তার জীবন।

১৯৫২ সালে অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্ম হয়েছিল মিঠুন চক্রবর্তীর। বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন গৌরাঙ্গ। মুম্বাইতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন বুকে লালন করে তিনি বেড়ে উঠেছিলেন কলকাতাতে। তবে তিনি এখন মুম্বাইতে এসে পৌঁছান তখন বলিউড কিন্তু তাকে সাদরে দুই হাত বাড়িয়ে দেয়নি। বলিউডে কেরিয়ার গড়তে এসে প্রথম প্রথম স্পট বয় হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল তাকে। আজ এত বছর পর সেই পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করে রীতিমতো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তিনি।

সদ্য ৭১ বছর বয়সে পা রেখেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। তিনি তার কেরিয়ারে বাংলা-হিন্দিসহ দেশের বিভিন্ন ভাষা মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ ছবির হাত ধরে শুরু হয়েছিল তার কেরিয়ার। এই ছবিটি সোভিয়েত ইউনিয়নে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এটাই ছিল প্রথম ভারতীয় ছবি যা বক্স অফিসে ১০০ কোটির গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নে। তবে জানেন কি কেরিয়ার শুরুর এই মুহূর্তে কিন্তু চরম অবসাদে ঘিরে ধরেছিল মিঠুনকে?

২০১১ সালে সংবাদ মাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় মিঠুন চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘আমি স্ট্রাগল নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না। কারণ প্রত্যেকের জীবনে একটা স্ট্রাগল থাকে, আমার এত বেশি যা অনেকের স্পিরিটটা ভেঙে দেবে। এইটুকুই বলব আমি কিন্তু ফুটপাথ থেকে উঠে এসেছি’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মুম্বই শহরে আমি এমন অনেক রাত কাটিয়েছি যখন আমাকে কোনও গার্ডেনে খোলা আকাশের নীচে শুতে হয়েছে। আমার এক বন্ধু আমাকে মটুঙ্গা জিমখানায় এক মেম্বারশিপ করিয়ে দিয়েছিল, যাতে সেখানকার বাথরুমটা আমি ব্যবহার করতে পারি। সকালে সেখানে যেতাম, ফ্রেশ হতাম, এরপর পথে বেরিয়ে পড়া। জানি না কোথায় যাব, কী খাব? আজ কী হবে!’

এই সময় তার মানসিক পরিস্থিতিও রীতিমতো চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি হার মানেননি। মহাগুরুর কথায়, ‘আমি কারুর স্বপ্নে চিড় ধরাতে চাই না। কিন্তু এমন সময় এসেছে যখন আমার মনে হয়েছে আমি পারব না। আমি ভেবেছি হয়ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে। সেই ভাবনার পিছনে অনেক কারণ ছিল। আমি কলকাতা ফিরতে পারতাম না নিজের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জেরে, আমি অন্য কিছু করতে পারতাম না। আপনারা কখনই ভাববেন না কোনও লড়াই ছাড়া নিজের জীবন শেষ করে দেওয়াটা ঠিক। আমার মধ্যে ওই ভাবনা এসেছিল কারণ আমি হারতে শিখিনি, হার কী আমি জানতাম না, আমি খেলার মাঠেও কোনওদিন হারিনি’।