ভারতের শেষ মহিলা নবাব! আলাপ করুন সেইফের ১৫ হাজার কোটি সম্পত্তির আসল মালকিনের সঙ্গে

ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ মহিলা নবাব! যার ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি এখন ভারত সরকারের অধীনে। ভোপালের সিংহাসনের শেষ মহিলা উত্তরাধিকারী নবাব সুলতান জাহানই ছিলেন পতৌদিদের বর্তমান নবাব সেইফ আলি খানের প্রপিতামহী। সমসাময়িক সময়ের থেকে অনেক এগিয়েছিলেন তিনি। মুসলিম পরিবারে জন্ম হলেও রক্ষণশীলতা ছুঁতে পারেনি তাকে। আজ আপনাদের সামনে পেশ করব ১২৪ বছর আগের এক দাপুটে মহিলা নবাবের কাহিনী যার বাস্তব জীবনের গল্প যে কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানাতে পারে।

সুলতান জাহান ছিলেন ভোপালের সব থেকে বয়স্কা বেগম। ৪৩ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে বসেন। তার জন্ম হয়েছিল ১৮৫৮ সালে। তার বাবা এবং মা ছিলেন বাকি মোহাম্মদ খান এবং বেগম সুলতান শাহ জাহান। সুলতান জাহানের জন্মের কয়েক বছর পরই ১৮৬৮ সালে তার দিদিমা সিকান্দার বেগমের মৃত্যু হয়। তখন সুলতান জাহানের মা সুলতান শাহ জাহানকে সিংহাসনে বসানো হয়। সেই সঙ্গে সুলতান জাহানকে ভোপালের মসনদের পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মায়ের মৃত্যুর পর ১৯০১ সালে সুলতান জাহান সিংহাসনে বসেন এবং ভোপালের নবাব বেগম হন।

Begum Sultan Jahan

সুলতান জাহান তার সমসাময়িক মুসলিম মহিলাদের থেকে অনেক এগিয়েছিলেন। মুসলিম নারীদের মধ্যে যে রক্ষণশীলতা দেখা যেত সেটা সুলতান জাহানের মধ্যে ছিল না। ভোপালের উন্নতির জন্য বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ব্রিটিশ রাজত্বে শাসকদের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন সুলতান। তিনি ভোপালকে ইউরোপীয় ধাঁচে সাজাতে চেয়েছিলেন। সেইমত এই শহরে তিনি একটি ইয়ট ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ভোপালকে একটি প্রগতিশীল এবং আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার দিকে নজর ছিল তার। বিশেষ করে মহিলাদের শিক্ষার উপর তিনি জোর দিতে চেয়েছিলেন। সেইমত গোটা শহরে তিনি অনেক স্কুল এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। সেসব স্কুলের পরিচালনার জন্য তিনি বাছাই করে শিক্ষক নিয়োগ করতেন।

শুধু তাই নয়, সুলতান জাহান নিজেও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন। তিনিই একমাত্র মহিলা ছিলেন যিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন একমাত্র মহিলা যিনি মহিলা হয়েও এই পদে দায়িত্ব পান। এছাড়াও কর, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও কারা বিভাগের কাঠামো বদলে দিয়েছিলেন নবাব বেগম। মদের উপরেও জারি করেছিলেন নিষেধাজ্ঞা। গাড়ির প্রতি ব্যাপক শখ ছিল এই নবাবের। আধুনিক সংস্করণের রোলস রয়েজের মত বিলাসবহুল সব গাড়ি তার গ্যারেজে জায়গা পেয়েছিল।

আরও পড়ুন : হামলার ঘটনা পুরোটাই নাটক? সেইফের উপর হামলার ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ হল

Begum Sultan Jahan

আরও পড়ুন : জীবন বাঁচানোয় অটোচালককে পুরস্কারে ভরিয়ে দিলেন সেইফ আলি খান! কী কী পেলেন ভজন সিং রানা

সুলতান জাহানের মৃত্যু হয় ১৯৩০ সালে। প্রায় ৩০ বছর তিনি দাপটের সঙ্গে ভোপালে রাজত্ব করেছিলেন। শুধু রাজত্ব নয়, রাজ্যের উন্নয়নে তিনি অনেক কাজ করেছিলেন। আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে তিনি তার শহরকে ইউরোপীয় শহরের ধাঁচে গড়ে তুলতে সমর্থ হতেন বলেই বিশ্বাস করেন ইতিহাসবিদরা। সুলতান জাহানের একটি আত্মজীবনী আছে, যার নাম ‘অ্যান একাউন্ট অফ মাই লাইফ’। তার মৃত্যুর ৪ বছর আগে ভোপালের নবাব হিসেবে সিংহাসনে বসেন তার একমাত্র ছেলে হামিদুল্লাহ খান। ইনিই সেইফের ঠাকুমার বাবা ছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সুলতান জাহানের থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি পেয়েছিলেন হামিদুল্লাহ খান।

Begum Sultan Jahan

হামিদুল্লাহ খানের ৪ কন্যা সন্তান ছিলেন, আবিদা, সাজিদা, ফারজানা এবং রাবিয়া। সুলতান জাহানের যোগ্য উত্তরসূরী ছিলেন তার নাতনী আবিদা বেগম। ঠাকুমার মতোই তিনি ছোটবেলা থেকে রোলস রয়েজের মত গাড়ি চালাতেন। বাঘ শিকার করতেন। ১৫ বছর বয়সে ভোপালের সিংহাসনে বসেছিলেন আবিদা। তিনি পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। সাইফের ঠাকুরদা নবাব ইফতিকার আলী খান পতৌদির সঙ্গে বিয়ে হয় সাজিদা সুলতানের। যেহেতু আবিদা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন তাই তার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে চলে আসে সাজিদার হাতে। বংশানুক্রমে সেই সম্পত্তি পান সাইফের বাবা মনসুর আলি খান এবং তার মৃত্যু হলে এতদিন তা ছিল সাইফ এবং তার দুই বোন সোহা আলি খান ও সাবা আলি খানের হাতে।

Saif Ali Khan

এখন সেই ১৫ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তি নিয়েই দেখা দিয়েছে নতুন বিবাদ। শত্রু সম্পত্তি আইনের অধীনে নবাবের সম্পত্তি দাবি করেছে ভারত সরকার। শত্রু সম্পত্তি আইন, অর্থাৎ ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে ভারত সরকার দখল করে নিতে পারে। ভোপাল হাইকোর্ট সেই মামলার উপর স্থগিতাদের তুলে নেওয়াতে বেশ বিপাকে নবাব সাইফ। কী হবে এই মামলার পরিণতি? তা ক্রমশ প্রকাশ্য। তবে ভোপালের বাসিন্দারা তাদের আদর্শ নবাব বেগম হিসেবে আজও স্মরণ করেন সুলতান জাহানকে।