গত দুদিন ধরে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। না, কোনও রাজনৈতিক ইসুতে নয়। বরং একটি বিয়ের খবরে। বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন বিজেপির রাজ্যসভার প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ৬০ বছরের দিলীপ আজ ৫১ বছরের রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন। এতদিন সংঘের দায়িত্ব পালন করে এবার সংসারে প্রবেশ করবেন দিলীপবাবু। তার স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার আসলে কে? কীভাবেই বা তাদের পরিচয় হলো? কেনই বা রিঙ্কুকে বিয়ে করলেন দিলীপ ঘোষ?
দিলীপ ঘোষের বউ রিঙ্কু মজুমদার আসলে কে?
দিলীপের মতো রিঙ্কুও বিজেপি দলের একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি নিউটাউনে বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী। দিলীপ ঘোষই তাকে এই দলে এনেছিলেন। তিনি ডিভোর্সী। তার ২৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। রিঙ্কুর ছেলে সল্টলেকের একটি আইটি সংস্থায় কর্মরত। স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর ১৭ বছর সিঙ্গেল মাদার হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন রিঙ্কু। ছেলে এখন বড় হয়ে গেছে। এবার তিনি নিজেকে নিয়ে ভাবতে চান। নতুন সংসার গড়তে চান। দিলীপের সঙ্গে রিঙ্কুর ৪ বছরের সম্পর্ক। ৪ বছরের পরিচয় কিংবা প্রেম পরিণতি পেল শুক্রবার বিকেলে।
কীভাবে আলাপ হয়েছিল দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদারের?
রিঙ্কুর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের প্রথম আলাপ হয়েছিল ইকোপার্কে। কলকাতায় থাকলে দিলীপ ঘোষ নিয়মিত ইকোপার্কে শরীরচর্চা করতে যান। এরকমই একদিন ইকো পার্কে ঘুরতে গিয়ে রিঙ্কুর সঙ্গে তার আলাপ হয়ে যায়। সেই আলাপ থেকে হয় বন্ধুত্ব। কিছুদিনের মধ্যেই দিলীপ ঘোষের উৎসাহে রিঙ্কু বিজেপি দলের মহিলা মোর্চার নেত্রী হয়ে ওঠেন। এরপর তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তো ছিলই, তবে তা গভীর হয় নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর।
কেন রিঙ্কু মজুমদারকেই বিয়ে করলেন দিলীপ ঘোষ?
কারণ ওই সময় দিলীপ ঘোষ খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। তার মনে হয়েছিল এরপর আর কেউ তার খোঁজ নেবে না। দলে তার গুরুত্ব কমে যাবে। দিলীপ ঘোষের ওই দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রিঙ্কু। দিলীপ যখন নিঃসঙ্গতা ও মানসিক হতাশায় ভুগছেন, রিঙ্কু তখন তাকে সঙ্গ দেন। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রিঙ্কুই দিলীপকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আসলে প্রথম বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর তিনিও এমন কারও সন্ধানে ছিলেন যিনি সৎ হবেন, বলিষ্ঠ হবেন। সর্বোপরি ভালো মানুষ হবেন। রিঙ্কুর রাজনৈতিক কেরিয়ারে বাঁধা দেবেন না। একইসঙ্গে নিউ টাউনেই হতে হবে পাত্রের বাড়ি। দিলীপ ঘোষ ছাড়া আর কে হবেন তেমন পাত্র? তাই বিজেপির এই মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলার রাজনৈতিক নেতাকেই মনে ধরেছিল রিঙ্কুর।
বিয়ের প্রস্তাব এল কীভাবে?
তবে রিঙ্কু বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে দিলীপ ঘোষ রাজি হয়ে গিয়েছিলেন এমনটা নয়। তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না প্রথমে। তার অন্যতম কারণ তার মনে ভয় ছিল যে এতে হয়তো তার রাজনৈতিক কেরিয়ারে প্রভাব পড়বে। তিন মাস সময় নিয়েছিলেন দিলীপ। এদিকে দিলীপ ঘোষ এই বয়সে প্রেম করুন বা বিয়ের পিঁড়িতে বসুন এমনটা তার দলও চাইছিল না। কিন্তু দিলীপের মা বেঁকে বসেন। রিঙ্কুকেই ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ হয়েছিল তার। ৮৪ বছরের বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনার জন্যেও তো বৌমার প্রয়োজন। আর তাছাড়া দিলীপ ঘোষই বা কত দিন আর একা থাকবেন? ডিভোর্সি, সিঙ্গেল মাদার, তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরতা ও লড়াকু মনোভাবের মেয়ে রিঙ্কুও দাগ কেটেছিলেন দিলীপ ঘোষের মনে। রিংকুর ছেলের সঙ্গেও দিলীপের সম্পর্কে খুবই ভালো।। তাই শেষ পর্যন্ত মায়ের জোরাজুরিতে সায় দিতে বাধ্য হলেন দিলীপ ঘোষ।
কীভাবে ‘প্রেম’ কোথায় প্রথম দেখা?
রিঙ্কুর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের আলাপ ইকো পার্কে। শহরে থাকলে এই ইকো পার্কেই রোজ নিয়ম করে শরীর চর্চা করতে যান দিলীপ ঘোষ। আর তারপর রাজ্য রাজনীতি থেকে দেশের বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবও দেন দিলীপ। তারই মাঝে একদিন রিঙ্কুর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল দিলীপের। দিলীপই নাকি রিঙ্কুকে বিজেপির মহিলা মোর্চায় নিয়ে এসেছিলেন। রিঙ্কু মজুমদারই দিলীপ ঘোষকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে প্রথমে নাকি বিয়েতে রাজি ছিলেন না দিলীপ। পরে দিলীপ ঘোষের মায়ের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে দিয়ে বিয়ের জন্যে দিলীপকে রাজি করিয়েছিলেন রিঙ্কু।
আরও পড়ুন : বলিউড অভিনেত্রীরা কে কোন ধর্মের? বেশিরভাগ মানুষ জানেন না এই সিক্রেট
আরও পড়ুন : বিয়ে করছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী? বর কে? কী করেন? কোথায় থাকেন?
বিয়ে করলেন দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদার
অবশেষে সব সংকোচ দূর করে দিলীপ ঘোষ আজ নিউটনের নিজের ফ্ল্যাটে রেজিস্ট্রি করে রিঙ্কুকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন। রিঙ্কু বিকেল বিকেল বধুর বেশে পৌঁছে গিয়েছেন বিবাহ আসরে। বিজেপির এই হাই প্রোফাইল নেতার বিয়েটা কিন্তু খুব সাধারণ ও ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে। দুজনের পরিবারের সদস্যরা ছাড়া সেখানে আর কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। ঘরোয়া অনুষ্ঠান এবং খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়েই দিলীপ ঘোষ এবং রিঙ্কু মজুমদার আজ সারা জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন।