মুম্বাইয়ের ত্রাস! জেলে বসেও লরেন্স বিষ্ণৌইয়ের কীর্তিকলাপ শুনলে শিউরে উঠবেন

জেলবন্দি থেকেও একের পর এক খুন! হাজতে থেকেও একের পর এক খুনের ষড়যন্ত্র। কুখ্যাত দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাংয়ের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের (Lawrence Bishnoi) গ্যাংকে। শুধু খুন, পাচার নয়, বিদেশের মাটিতে বসে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তোলা চাওয়া, হুমকি ফোন, ডাব্বা কলিং! ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে নতুন ত্রাস এই ডাব্বা কলিং। জানেন কী এই ডাব্বা কলিং? কীভাবে জেলে বসে একের পর এক অপরাধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লরেন্স বিষ্ণোই?

দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে গুজরাটের সাবরমতি জেলে বন্দি রয়েছেন লরেন্স। তার আগে দীর্ঘদিন ধরে তিহাড় জেলে বন্দি ছিলেন তিনি অথচ তারই নেতৃত্বে মুম্বাইয়ের বুকে ঘটে যাচ্ছে একের পর এক হত্যাকান্ড। মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় প্রকাশ্যে খুন হয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকী। সেই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে লরেন্স বিষ্ণৌয়ের দল। এর আগে পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালাকে হত্যার পেছনেও ছিল এই দলের হাত। আর এখন বলিউড অভিনেতা সালমান খানকে হত্যার ক্রমাগত হুমকি দিয়ে চলেছে এই কুখ্যাত দুষ্কৃতী দল। বিদেশে কিংবা জেলে বসে গ্যাংস্টারেরা ডাব্বা কলিং সিস্টেম কাজে লাগিয়ে টাকা তুলছে।

Lawrence Bishnoi

শুধু লরেন্স একা নয়, তার দলে রয়েছে গোল্ডি ব্রার, রোহিত গোদারা, আনমোল বিষ্ণৌইয়ের মত কুখ্যাত গ্যাংস্টাররা। নির্মাতা, ঠিকাদার, বড় ব্যবসায়ী, গাড়ি ব্যবসায়ী, ক্লাব হোটেলের মালিক, অবৈধ কল সেন্টারের মালিক এবং স্থানীয় রাজনীতিবিদের কাছে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়। প্রথমে এই দুষ্কৃতীরা ঠিক করে কার কাছ থেকে টাকা চাওয়া হবে। তারপর টাকা তুলতে দেশে থাকা দালালদের কাজে লাগায় তারা। মোবাইলের ইন্টারনেট ব্যবহার করে টার্গেটকে প্রথমে ফোন করা হয়। এরপর অন্য একটি মোবাইল থেকে ফোন করা হয় বিদেশ বা জেলে থাকা বসকে। দুইটি ফোন স্পিকারে রেখে দেওয়া হয়। তারপর টার্গেটকে প্রোটেকশন মানি বা অন্য কোনও সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু সরাসরি দুজনের মধ্যে কোনও কথা হয় না। এই সিস্টেমটাই ডাব্বা কলিং সিস্টেম।

এখন যেহেতু গ্যাংস্টারের মোবাইল থেকে সরাসরি ফোন আসে না, তাই যার কাছে ফোন আসছে তার হাতে সরাসরি কোনও প্রমাণও থাকে না। ফোনের ও প্রান্তে থেকে যে হুমকি দিচ্ছে বা টাকা চাইছে, তাকে ধরা তদন্তকারীদের পক্ষেও মুশকিল হয়। এখানে হুমকি দেওয়ার জন্য দুটো আলাদা আলাদা ফোন ব্যবহার হয়। ব্যবহার হয় ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ভিওআইপি সিস্টেমের। এই ফোনগুলোতে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার হয়। ভারতীয় আইপি ব্যবহার করলে জাল নথি দিয়ে সিম কেনা হয়। যার ফলে যিনি ফোন করছেন তার অনলাইন পরিচয় গোপন থাকে। কোথা থেকে ফোন আসছে, কারা ফোন করছে এসব খুঁজতে হিমশিম খেতে হয় তদন্তকারীদের।

Dabba Calling

এখন যদি তদন্তকারীরা কোনওমতে ফোন নম্বর ট্র্যাক করেও ফেলেন তাহলে তারা সেইসব দালালদের নাগাল পান। খোদ বসের নাগাল কখনও পান না। ডাব্বা কলিং এর এই চক্র এমন সব অ্যাপ ব্যবহার করে যেখানে এন টু এন্ড ইনক্রিপশন থাকে। যার ফলে অপরাধীদের তথ্য সুরক্ষিত থাকে। তবুও অপরাধীদের নাগাল পেতে অ্যাপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও গ্রাহক নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তারা সেইসব তথ্য দেন না। সব আইনি প্রক্রিয়া মিটিয়ে পুলিশ অভিযুক্তের সন্ধান পেলেও নাগালে পেতে না পেতেই অভিযুক্ত অন্য কোথাও পালিয়ে যায়।

এই ভাবেই বছরের পর বছর তোলাবাজি, চোরা কারবারি, সুপারি কিলিং চালিয়ে যাচ্ছে বিষ্ণৌই গ্যাং। জেলে বসেও রমরমিয়ে চলছে অপরাধের কারবার। এমনকি পুলিশ পর্যন্ত তাদের আটকাতে ব্যর্থ। গায়ক তথা কংগ্রেস নেতা সিধু মুসেওয়ালাকে যখন হত্যা করা হয় লরেন্স তখন তিহাড় জেলে বন্দি। জেলে বসেই তিনি হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে অভিযোগ। জেলে বসেই অপরাধের নেটওয়ার্ক দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন লরেন্স।

Lawrence Bishnoi

২০২২ সালে সিধু মুসে ওয়ালা, ২০২৩ সালের ৫ ই ডিসেম্বর সুখদেব সিংহ গোগামেডির খুন থেকে শুরু করে কানাডার ভ্যানকুভারে পাঞ্জাবি গায়ক গিপ্পি গেওয়াল, পাঞ্জাবি গায়ক এপি ধিঁলোর বাড়িতে গুলি চালানো, সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনা, তার বাড়িতে রেকি চালানো, ২০২৩ সালের ১৪ই এপ্রিল সালমানের বান্দ্রার বাড়ির সামনে বাইকে করে এসে গুলি চালানো, এইসবের পেছনে বিষ্ণৌই গ্যাংয়ের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের।

আরও পড়ুন : ‘সিংঘম এগেইন’ তারকারা কে কত পারিশ্রমিক পেলেন? চমকে দেবে অজয় দেবগনের পারিশ্রমিক

Salman Khan And Lawrence Bishnoi

আরও পড়ুন : লরেন্স বিষ্ণোই কে? কেন সালমান খানকে হত্যা করতে চায় বিষ্ণোই গ্যাং?

পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, সমগ্র উত্তর ভারত থেকে মুম্বাই এখন লরেন্স বিষ্ণৌই গ্যাংয়ের নামে কাঁপছে। বাবা সিদ্দিকীকে হত্যা করার পর এখন লরেন্সের টার্গেট সালমান খান। ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সালমান খান। কৃষ্ণসার হরিণ বিষ্ণৌই সম্প্রদায় ভুক্তদের কাছে অতি পবিত্র প্রাণী। তাকে হত্যা করার জন্য সালমান বিষ্ণৌইদের নজরে দোষী। তাই তাকে মারতে মরিয়া বিষ্ণৌই দল। সালমানকে তারা যোধপুরে খুন করবে, এমন হুমকিও দিয়েছে। কাজেই বিষ্ণৌই গ্যাংয়ের দাপটে রীতিমত কাঁপছে বলিউডও।