ভবানীপুরের মধ্যবিত্ত পরিবারের অরুণ কুমার কি করে ধীরে ধীরে উত্তম কুমার হয়ে উঠলেন? কি করে একটি গোটা জাতির গর্বের কারণ হয়ে উঠলেন? জানেন? পরপর ৮টি ফ্লপ সিনেমার পর যখন তার আত্মবিশ্বাস এসে ঠেকে তলানিতে, ঠিক তখনই ঘুরে দাঁড়ান অরুন কুমার। এই ঘুরে দাঁড়ানোই তাকে এনে দেয় মহানায়ক তকমা। চলুন জানা যাক কোন কোন সিনেমা উত্তম কুমারকে এনে দেয় সেই হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস, ফ্লপ মাস্টার থেকে তিনি কিভাবে হয়ে ওঠেন মহানায়ক।
বসু পরিবার : নির্মল দে পরিচালনায় এই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে। সিনেমাটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় এবং সুপ্রিয়া দেবী। এই সিনেমাটি ছিল সুপ্রিয়া দেবীর প্রথম সিনেমা। পরবর্তীকালে এই গল্পের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয় হিন্দি সিনেমা ‘হাম হিন্দুস্তানি’৯।
সাড়ে চুয়াত্তর : ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এটি বাংলার অন্যতম কমেডি চলচ্চিত্র। নির্মল দে – র পরিচালনায় এবং বিজন ভট্টাচার্যের চিত্রনাট্য নিয়ে তৈরি করা হয় এই সিনেমাটি। সিনেমায় প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, তুলসী চক্রবর্তী ও মলিনা দেবী। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জহর রায়। এই সিনেমাটিতে শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, সনদ সিংহ এই পাঁচজন গায়কও অভিনয় করেছিলেন।
পথে হলো দেরি : উত্তম কুমারের অন্যতম সফল সিনেমার মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রথম রঙিন সিনেমা। সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার ছাড়াও এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ছবি বিশ্বাস, ভারতী দেবী এবং অনুপ কুমার।
হারানো সুর : ট্রেন দুর্ঘটনায় স্মৃতিভ্রষ্ট আলোক মুখার্জিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান ডাক্তার রোমা ব্যানার্জি। চিকিৎসা করতে করতেই আলো ওরফে উত্তম কুমারকে ভালোবেসে ফেলেন ডাক্তার অরফে সুচিত্রা সেন। গল্পের অনবদ্য বুননে এই সিনেমাটি হয়ে ওঠে আক্ষরিক অর্থেই একটি অসাধারণ সিনেমা। এই সিনেমায় প্রথম অজয় করের পরিচালনায় কাজ করেছিলেন উত্তম কুমার।
সপ্তপদী : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে ১৯৬১ সালে তৈরি হয়েছিল এই বাংলা জনপ্রিয় সিনেমাটি। উত্তম কুমার সুচিত্রা সেন ছাড়াও এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তরুণ কুমার এবং ছবি বিশ্বাস। সিনেমার এই পথ যদি না শেষ হয়, গানটি আজও আমাদের কাছে চির নতুন।
আরও পড়ুন : ফ্লপস্টার থেকে সুপারস্টার! উত্তম কুমারের সম্পর্কে এই ৬ তথ্য কেউ জানে না
চাওয়া পাওয়া : তরুণ মজুমদার, শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, ছবি বিশ্বাস, তুলসী চক্রবর্তী সহ আরো অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী। ইট হেপেন্ড ওয়ান নাইট, নামক একটি হলিউড সিনেমার গল্প থেকে তৈরি করা হয়েছে, এই সিনেমাটি।
অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি : আমি যে জলসা ঘরে, গানটি বললেই মনে পড়ে যায়। উত্তম কুমারের অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি সিনেমার কথা। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি ছিলেন একজন বিদেশি যিনি ভিন্ন ধর্মী হয়েও হিন্দুদের সমস্ত উৎসব পালন করতেন। বাংলা তথা বাঙ্গালীকে তিনি মন থেকে ভালোবেসে ছিলেন। এই চরিত্রটিকে পর্দায় যখন ফুটিয়ে তোলা হয় তখন অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার।
আরও পড়ুন : বিবাহিত পুরুষদের প্রেমে পড়েছেন বারবার! উত্তমকুমার ছাড়াও আর কে কে এসেছেন সাবিত্রীর জীবনে?
আরও পড়ুন : প্রেমে পড়লেও কেন বিয়ে করেননি উত্তম-সুচিত্রা? এতদিনে ফাঁস হল আসল কারণ
চিড়িয়াখানা : ১৯৬৭ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এই সিনেমাটি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সী অবলম্বনে তৈরি করা হয়। এই সিনেমায় ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়েছিলেন উত্তম কুমার। ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্রটিকে হয়তো বহুবার কাটা ছেঁড়া করা হয়েছে সিনেমার খাতিরে কিন্তু উত্তম কুমারের ব্যোমকেশ বক্সী চরিত্রে অভিনয় আজও আমাদের মনে রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়েও নোংরামি! সুপ্রিয়ার মেয়েকে স্বীকৃতি দেননি উত্তম কুমার