বলিউডের (Bollywood) শাহেনশা তিনি। তিনি যেখানে দাঁড়ান তার পেছন থেকেই শুরু হয় সাধারণের লাইন। গত পাঁচ দশক ধরে তিনি বলিউডে রাজত্ব করছেন। বিগত ৫০ বছরে তার হাতে অনেক সাফল্য এসেছে। তবে সাফল্য এবং ব্যর্থতা যে একই মুদ্রার দুই পিঠ তা হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলেন অমিতাভ বচ্চন (Amitabh Bachchan)। সময়ের ফেরে হিন্দি সিনেমার এই মেগাস্টারও একদিন পথের ভিখিরি হতে বসেছিলেন।
১১ই অক্টোবর অমিতাভ বচ্চনের জন্মদিন গিয়েছে। এই সময় বিগ-বির জীবনের কিছু অজানা কথাই বারবার ফিরে ফিরে আসছে। বলিউডে কেরিয়ার শুরু করার আগে অমিতাভ বচ্চন একের পর এক ইন্টারভিউতে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। তার যে কণ্ঠস্বর এখন তার অন্যতম পরিচয়, সেই ভারী কণ্ঠস্বরের জন্যই নাকি একসময় তার রেডিওর চাকরির আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
তবে এই ঘটনা ছিল তার কেরিয়ারের শুরুর একেবারে প্রথম দিকের কথা। সেই সময় একের পর এক চাকরি থেকে ক্রমশ প্রত্যাখ্যানই জুটছিল তার কপালে। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “হয়তো আমি যোগ্য ছিলাম না, তাই সেই চাকরিগুলো পাইনি।” এরপর ১৯৬৯ সালের ‘সাত হিন্দুস্তানি’ ছবির হাত ধরে তিনি বলিউডে প্রবেশ করেন। সেখানেও ব্যর্থতাই মিলেছিল। অমিতাভের প্রথম ছবি চলেনি।
এরপর তিনি আরও ১২ টা ছবিতে অভিনয় করেন। সবকটি ছবিই পর পর ফ্লপ হতে থাকে। কিন্তু তাতেও হাল ছেড়ে দেননি অভিনেতা। অবশেষে পাঁচ বছর পর তার ঝুলিতে প্রথম হিট ছবি আসে। প্রথম ছবি হিট হওয়ার পরেই তার ভাগ্য খুলে যায়। এরপর তার একের পর এক ছবি হিট হতে শুরু করে। দর্শকদের মনের মধ্যে তখন ক্রমশ নিজের জায়গা করে নিচ্ছিলেন তিনি। তার জীবনের সুসময় শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত কষ্ট করে তিনি যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন তা একসময় হারাতেও বসেছিলেন।
সেই সময়টা ছিল ১৯৯৪ সাল। ওই বছর ছবির প্রযোজনা এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য ‘অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড’ নামের একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে তার ব্যবসা চরম লোকসানের মুখে পড়ে। বাজারের প্রায় ৯০ কোটি টাকার দেনা হয়ে গিয়েছিল তার। দেনা মেটাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যান অভিনেতা। একদিকে টাকার অভাব, অন্যদিকে পাওনাদারদের অপমান, জীবনের কঠিন সময় নিয়ে মুখ খুলেছিলেন অভিনেতা।
অমিতাভ ২০১৩ সালে এই বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি কখনওই ভুলতে পারব না কী ভাবে পাওনাদাররা আমার বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকত। ভয় দেখাত। কটু কথা বলত। আমার ৪৪ বছরের কেরিয়ারে সেই সময়টিই ছিল সবচেয়ে অন্ধকারময়। আমি কী ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসব বুঝতে পারতাম না। আমার মনে হয়েছিল, আমি অভিনয় করতে পারি। আমার বাড়ির পাশেই থাকতেন যশজি (যশ চোপড়া)। আমি তাঁর কাছে গিয়ে কাজ চাই। সেই সময় তিনি আমার পাশে থেকেছিলেন এবং আমাকে ‘মহব্বতেঁ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন।’’
‘মহব্বতেঁ’ ছবির পরেই কার্যত অমিতাভের জীবনে যেন সমস্ত অন্ধকার কেটে যায়। এরপরেই তিনি ‘কৌন বানেগা ক্রোড়পতি’ টিভি শোয়ের সঞ্চালনা শুরু করেন। এরপর থেকে তাকে কখনও টাকার যোগান নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। টিভি শোয়ের সঞ্চালনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধারার ছবিতে তিনি নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন। জীবনের সেই অন্ধকার সময়টা সাথে কাটিয়ে উঠেছেন ঠিকই কিন্তু সেসব দিনের কথা কখনও তিনি ভুলতে পারবেন না।