Michelin Chef Vikas Khanna : কথায় আছে জীবনের লক্ষ্য স্থির থাকলে কোনো বাঁধায় চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। আর সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন বিশ্ব বিখ্যাত শেফ বিকাশ খন্না (Vikas Khanna)। এখন তার হাতের রান্না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সবার প্রিয়। চলুন জেনে নিই বিকাশ খন্নার পৃথিবী বিখ্যাত শেফ হয়ে ওঠার কাহিনী।
১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর অমৃতসরে জন্ম হয়েছিল বিকাশ খন্নার। তার বাবা দেবীন্দর খন্নার ভিডিয়ো ক্যাসেট ভাড়া দেওয়ার দোকান ছিল। কিন্তু জন্ম থেকেই পায়ে ‘ক্লাবফুট’-এর সমস্যা ছিল বিকাশের। যার কারণে সে ঠিক করে হাঁটতে পারতেন না, দৌড়াতেও পারতেন না। তার ১৩ বছর বয়েস পযন্ত এই সমস্যা ছিল। বন্ধু থেকে শুরু করে বাইরের লোক সবার কাছে রীতিমত হাসির খোরাক হয়ে থাকতে হতো তাকে।
আর তাই সেই ছোট থেকেই নিজেকে বেশি গৃহবন্দি করে রাখতেন। বাড়ির মধ্যে তিনি বেশি সময় কাটতেন ঠাকুরমার সঙ্গে রান্নাঘরে। এরপর কিশোর বয়স থেকেই তিনি রান্না শুরু করেন। আর তাতে তার বাড়ির লোকও যথেষ্ট উৎসাহ দিতেন। এরপর মাত্র ১৭ বছর বয়েস থেকে বিকাশ কেটারিংয়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। মায়ের সঙ্গে মিলে শহরের নানা স্কুলের সামনে নিজের হাতে তৈরি ছোলে-ভটুরে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি।
এরপর স্কুলের পড়া শেষ হতেই সে বেঙ্গালুরুতে হোটেল ম্যানেজ়মেন্ট পড়ার জন্য যান। কিন্তু সেখানেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার ইংরেজি না জানা। যদিও সব বাধা কাটিয়ে ১৯৯১ সালে হোটেল ম্যানেজ়মেন্টে স্নাতকের ডিগ্রি লাভ করেন বিকাশ। স্নাতকের পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কালিনারি ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকা’য় তিনি তার পড়াশোনা শেষ করেছিলেন।
তবে এরপরেও একজন ভালো শেফ হতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছিল বিকাশকে। তিনি নিউ ইয়র্কের রাস্তায় আশ্রয়হীন হয়েও রাত কাটিয়েছেন। এরপর ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের জোড়া টাওয়ার কাছে একটি রেস্তোরা খোলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটাও শেষ পযন্ত সম্ভব হয়নি। এরপর আবার ২০০৬ সালে একটি ছোট রেস্তরাঁ খোলেন বিকাশ। আর সেখান থেকেই বিশ্বখ্যাত শেফ গর্ডন র্যামসের টেলিভিশন শো ‘কিচেন নাইটমেয়ার্স’-এ ডাক পান তিনি।
কিন্তু এরপরেও বিভিন্ন অসুবিধার সমুক্ষিন হতে হয়েছিল বিকাশকে। ২০০৮ সালে ব্যাপক আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল। সেই সময় তাকে প্যারিসের একটি রেস্তরাঁয় বাসন ধোওয়ার কাজও করতে হয়েছে। আর সব বাঁধা কাটিয়ে ২০১০ সালে নিউ ইয়র্কের অভিজাত এলাকা ম্যানহাটনে একটি রেস্তরাঁ খোলেন তিনি। তার পরের বছরই তার ওই রেস্তরাঁ এবং তিনি ‘মিশেলিন স্টার’-এর তকমা পান।
আরও পড়ুন : ভারতে সবথেকে গরীব মুসলিমরা, সবথেকে ধনী কোন ধর্মের মানুষ এই দেশে জানেন?
তবে শুধু শেফ হিসাবেই নিজের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেননি বিকাশ। ‘মাস্টারশেফ ইন্ডিয়া’য় সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা গেছে তাকে। এছাড়াও তিনি বারাণসী এবং বৃন্দাবনের বিধবাদের কাহিনি নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। আর তার পরিচালিত ‘দ্য লাস্ট কালার’ প্রশংসা কুড়িয়েছে ৭১তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে। তিনি অনেক সামাজিক কাজেও যুক্ত থাকেন।নিজের জন্মস্থান পাঞ্জাবের গুরুদ্বারে বিনা পয়সায় লঙ্গরেও সেবা দেন তিনি।
আরও পড়ুন : আম্বানীদের জন্য রুটি বানানো হয় এই বিশেষ উপায়ে, ফাঁস হল ভিডিও