All You Need To Know About Junior Dev Anand : বলি অভিনেতা দেব আনন্দ (Dev Anand) -র মতো দেখতে ছিলেন কিশোর আনন্দ ভানুশালী (Kishore Anand Bhanushali)। বলিপা়ড়ার জনপ্রিয় অভিনেতার সঙ্গে মুখের মিল, তার উপর আবার আদবকায়দা থেকে শুরু করে অভিনয়ের ধরনেও ছাপ রয়েছে। যার জন্য একটা সময় কৌতুকাভিনেতার চরিত্রে একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছিলেন ‘জুনিয়র’ দেব আনন্দ (Junior Dev Anand)। কিন্তু সেই দেব আনন্দের মত দেখতে হওয়ার কারণেই নেমে এলো তার জীবনে অন্ধকার।
১৯৬২ সালের ১৩ মার্চ মুম্বইয়ের এক গুজরাতি পরিবারে জন্ম কিশোর আনন্দ ভানুশালীর। তার বাবার একটি দোকান ছিল। আর এসবের মধ্যেই কিশোরের যখন আট নয় বছর বয়েস তখন তাকে হঠাৎ স্কুলের এক বন্ধু ডেকে জানান যে, তিনি নাকি হুবহু দেব আনন্দের মতো দেখতে। এরপর বন্ধুর কথা শুনে দেব আনন্দের ছবি দেখার ইচ্ছা হয় কিশোরের। স্কুলের ছুটি চলাকালীন মামাবাড়িতে গিয়ে দেব আনন্দ অভিনীত ‘ইয়ে গলিস্তান হমারা’ ছবিটি দেখেন। তার পর দেব আনন্দের ‘জুয়েল থিফ’ ছবিটিও দেখেন কিশোর। দেব আনন্দের ছবি দেখার পর তার সঙ্গে যে দেব আনন্দের মুখের প্রচুর মিল রয়েছে সে বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ ছিল না কিশোরের।
আর তারপরেই কিশোর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেব আনন্দের চলন-বলন এবং অভিনয় সব কিছুই নকল করতে থাকেন। এমনকি দেব আনন্দের মত পোশাক পরে স্কুলের নাটকের মঞ্চে জুনিয়র দেব আনন্দ হয়ে অভিনয় করেন কিশোর। এর পরই হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা জাগে তার।সেই মত বন্ধুদের পরামর্শে সাইকেল চালিয়ে দেব আনন্দের বাংলোর সামনে গিয়ে হাজির হন কিশোর। ভাগ্যবশত দেব আনন্দের দেখাও পেয়ে যান কিশোর।তার কাছে অভিনয়ে নামার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন কিশোর। কিন্তু কিশোরকে অভিনেতা বলেন, ‘‘তোমার এইটুকু বয়স। এখন কিসের অভিনয় করবে তুমি? পড়াশোনা শেষ করো আগে।’’
দেব আনন্দের কথা মত পড়াশোনা শেষ করেন কিশোর। আর তারপরেই থিয়েটার থেকে শুরু করে নানা রকম শোয়ে অংশ নিয়ে দেব আনন্দের ভূমিকায় অভিনয় করতেন তিনি। এমনকি কিশোর বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দিতে শুরু করেন। সকলে তার মুখ থেকে দেব আনন্দের ছবির সংলাপ শুনতেন, দেব আনন্দের মতো অভিনয় করে দেখাতে বলতেন। কিন্তু কাজের সুযোগ কেউই দিতেন না।শেষে বাবার দোকানে বসতে শুরু করেন কিশোর।
এরপর ভারতী নামের এক মহিলাকে বিয়েও করেন তিনি। বিয়ের পর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন ভারতী। দোকান চালিয়ে সংসারের খরচ চললেও সে কাজে মন বসছিল না কিশোরের। আর তারপরেই একদিন ঘটলো মীরাক্কেল। কিশোর দোকান থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখেন, তার বাড়িতে অভিনেতা মোহন চোটী বসে রয়েছেন। মোহন তার একটি শোয়ে অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন কিশোরের কাছে।
এরপর মোহনই তার পর ‘পাগলখানা’ ছবিতে একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন কিশোরকে। তবে তার জীবনে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন বলি পরিচালক ইন্দ্র কুমার। ‘দিল’ ছবির একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন ইন্দ্র। ১৯৯০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল’ ছবিতে অভিনয় করার পর বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি তৈরি হয়ে যায় কিশোরের।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, প্রতি বছর গড়ে সাত থেকে আটটি ছবিতে অভিনয় করতেন কিশোর। ‘রামগড় কে শোলে’, ‘গোপি কিষণ’, ‘বরসাত’, ‘খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি’, ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’র মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় কিশোরকে। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকায় দেব আনন্দ দেখা করতে চান কিশোরের সঙ্গে। অভিনেতা কিশোরকে বলেন, ‘‘তোমার হাতে এত ছবি। কয়েকটা আমাকেও দাও।’’ কিন্তু এই জনপ্রিয়তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি কিশোরের। ২০০০ সালের পর দেব আনন্দের ভূমিকা ছাড়া অন্য কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে পারবেন না বলে কেউ তাকে কাজের সুযোগ দিতে চাইতেন না।
আরও পড়ুন : রাজি হলেন না শাহরুখ, কোন অভিনেতাকে নিয়ে শুরু হচ্ছে ‘ডন ৩’ এর শুটিং?
এরপর টেলি অভিনেতা মুকেশ খন্নাকে তার ‘শক্তিমান’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ দেন কিশোরকে। আর তারপরেই ২০১৫ সালে ‘ভাবিজি ঘর পে হ্যায়’ ধারাবাহিকে কমিশনার রেশমপাল সিংহের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি। বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শো করে বেড়ান কিশোর। মাঝেমধ্যে টেলিভিশনের পর্দাতেও অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। ‘কিশোর কি আওয়াজ দেব কা আন্দাজ’ নামের তিন ঘণ্টার একটি কমেডি শোও করেন তিনি। কিশোর এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘দেব আনন্দের মতো দেখতে হওয়ার কারণে আমার কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি নিরাশ হইনি। আমি একটা কথা মানি, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।’’
আরও পড়ুন : কাঁচের গ্লাস ছুঁড়ে বিনোদ খান্নার মুখ ফাটিয়ে দেন অমিতাভ বচ্চন, কেন জানেন?